আটাশ বছর পর সাহিত্য পত্রিকা মাটি-র পুনর্জন্ম সম্ভব হলো লেখক-পাঠকদের আগ্রহে ও দাবীতে। যারা মাটিতে লিখতেন, যারা নিয়মিত এর পাঠক ছিলেন তাদের তৃষ্ণাপূরণ ও সন্তুষ্টিলাভ অন্য কোনো সাহিত্য পত্রিকার মাধ্যমে হয়নি, এটি বাস্তবতা। মাটির মতো আরেকটি পত্রিকা যদি পেতাম তাহলে এ নবযাত্রার প্রয়োজন পড়তো না। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে, বিজয়ের মাসে মাটি-র পুনর্প্রকাশ এ সত্যটিই জানিয়ে দিচ্ছে, এদেশের যোদ্ধারা পরাভব মানে না; তা শত্রুকবলিত রণাঙ্গন হোক, কিংবা হোক সৃজনছন্দোময় শব্দের সমৃদ্ধ প্রাঙ্গণ। মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই ব্যক্তির নিবিড় নিবেদনে যে প্রকাশস্থগিত সাহিত্য পত্রিকার পুনর্জন্ম ঘটতে পারে, তার উদাহরণ এদেশে দ্বিতীয়টি নেই। সৃষ্টিশীলের দাঁড়াবার মাটিÑ এই মূলমন্ত্র ধারণ করেই ডিসেম্বর-১৯৯১ এ মাটির আবির্ভাব ঘটেছিলো। সে-আদর্শ বর্তমানেও শিরোধার্য। অনলাইনে শব্দস্তূপের অবাধ অগাধ উৎসারণের এই স্বার্থান্ধ সময়ে ছাপানো সাহিত্য পত্রিকার প্রয়োজন বেশি করে অনুভব করছেন সাহিত্যের প্রকৃত প্রেমিকেরা। দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রগল্ভ অসাহিত্যের ভিড় উজিয়ে মাটিকে তাই আসতেই হলো।
তিনটি দশক কম সময় নয়। শওকত ওসমান, শামসুর রাহমান, হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সিকদার আমিনুল হক, হুমায়ুন আজাদ, শহীদুল জহির সহ মাটির অনেক নিয়মিত লেখকই আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু নতুন দিনের চারিত্র্যদৃঢ় এমন সাহিত্যিকদের শনাক্ত এবং ধারণের অনুসন্ধিৎসু ব্রতটি জায়মান মাটির ওপরেই রয়েছে অর্পিতÑ এমন ভাবনা আমরা উপেক্ষা করে যেতে পারি না।
প্রত্যয়দীপ্ত ও অঙ্গীকারসিক্ত এই ক্ষণটিতে মাটি-র প্রতিষ্ঠাতা-প্রকাশক গোলাম কিবরিয়াকে স্মরণ করি শ্রদ্ধা-ভালোবাসায়।