করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





দিক নির্দেশক: লিয়াকত হোসেন
লিয়াকত হোসেন

কয়েক বছর আগের কথা।
জুরিখ রাইটার্স হাউসের আমন্ত্রণে সুইর্জাল্যান্ড গিয়েছি সেমিনারে যোগ দিতে। রাইটার্স হাউসের তিন তলায় এ্যাটাচ বাথরুম সহ সুসজ্জ্বিত কক্ষে থাকার ব্যাবস্থা। কিচেন,লাইব্রেরী, হলঘর দোতলায়। একতলায় অফিস। নিজস্য সোলার সিস্টেমে বিদ্যুত ও জলের ব্যাবস্থা নিয়ে অত্যাধুনিক রাইটার্স হাউজ। হাউজের বাইরে সবুজ লনে বসার ব্যাবস্থা। দূরে বিশাল নদী। নদীর পারে গড়ে উঠা জুরিখ শহর। রাইটার্স হাউজের আমন্ত্রণে এর আগেও জুরিখ এসেছি তবে কোন বারেই রাজধানী বার্ন দেখা হয়নি।

বার্ন বা বার্নে সুইজারল্যান্ডের চতুর্থ বৃহৎ শহর, দেশের রাজধানী।
বর্হিবিশ্বে জেনেভা ও জুরিখ নিয়ে যত লেখালিখি বার্ন নিয়ে ততটা নয়। বার্নের ভেতর দিয়ে একেঁ বেঁকে চলে যাওয়া আরিয়া নদীর দুপড়েই গড়ে উঠেছে শহর। ১১৯১ সালে ডিউক বার্চটোল্ড আরিয়া নদীর পারে বার্ন নগরীর গোড়াপত্তন করেন। বার্নে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল একটাই, বিজ্ঞানী আলর্বাট আইন্সটাইনের প্রথম জীবনের কর্মক্ষেত্র ও মিউজিয়ামটি দেখা।

একদিন সেমিনারের ফাঁকে বার্ন দেখার অভিপ্রায়টা জুরিখ রাইটার্স হাউজের সেক্রেটারী জারকাকে জানাতেই ইন্টারনেট থেকে দিক নির্দেশনা মূলক কিছু তথ্য বেড় করে দিয়ে বলে,‘তুমিতো বার্ণে খুব একটা সময় থাকবেনা, হয়তো স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক কিছু দেখতেও পাবেনা। ওখানে আমার এক বন্ধু আছে ওকে কি বলবো তোমোকে ঘুরিয়ে দেখাতে?’ সম্মতি দিতেই জারকা জানালো,‘যোগাযোগ করে দেখি সে তোমাকে সময় দিতে পারে কিনা?’

জুরিখ হতে জেনেভা হয়ে বার্নে এসে যখন পৌছুলাম তখন বেলা প্রায় সাড়ে চারটা।
আকাশে জ্বলজ্বলে সূর্য। বেশ গরম। টুরিষ্ট অপিস থেকে মিউজিয়মের অবস্থানটা জেনে নিয়ে ষ্টেশানের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। সামনে বিরাট খোলা চত্তর। এখান থেকেই বিভিন্ন যায়গার ট্রাম গুলো যায়। টুরিষ্ট অপিস ট্রামের নাম্বরটি বলেছিল, গন্তব্যে পৌঁছুতে মাত্র মিনিট পাঁচেক লাগবে। খোলা চত্তরে এসে দাঁড়াতেই রাস্তার পাশে একই নাম্বারের দুটি ট্রাম দেখলাম। দুটি দুপথে যাবে। কোনটিতে উঠবো ভেবে পাচ্ছিনে, তাড়াহুড়ার মধ্যে সঠিক ট্রামটির কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি।  ঠিক সে সময় একজনকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। তিনি ইংরেজীতেই প্রশ্ন কললেন,‘আপনিকি জুরিখ থেকে এসেছেন? আমি কাবা কাউসাইণ, জারকা টেলিফোন করেছিল।‘ তাহলে জারকা এর কথাই বলেছিল। অচেনা জায়গায় একজন দিক নির্দেশক পেয়ে ভালো লাগলো। ট্রামে যেতে যেতই আলাপ হলো। লম্বা একহারা গড়ন মেয়েটি। পায়ে চামড়ার হালকা সেন্ডেল, সেন্ডেল থেকে বেড়িয়ে আসা লম্বা চামড়ার ফিতে পায়ে পেচানো। জিন্সের  উপর ছোট সাদা পাতলা র্সাট। গলায় কালো ফিতে দিয়ে বাঁধা এক খন্ড ক্রিষ্টাল। পানপাতার মত মুখ, ডান থুতনি ও বা চোখের নিচে একটা করে তিল। সুন্দর নাক। কপালে টিপ বা কানে দুল নেই তবে দুটি চোখের ভেতর কেমন যেন এক আর্কষন। কাঁধে কালো ছোট চামড়ার ব্যাগ। নামটা কেমন যেন, হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের হবে। নামের বিষয়টা বলতেই হেসে এড়িয়ে গেলেন।
মিউজিয়মের সামনে এসে দাঁড়ালাম। ১৮৯৪ সালে নির্মিত সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতীয় যাদুঘর। এই যাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় আলর্বাট আইন্সটাইনের দর্শনীয় বস্তু গুলো। দোতলায় উঠার পাথরের সিড়ি পথটা আলো-আঁধারী ও কাঁচ দিয়ে ঢাকা। উঠতে উঠতে নিচের তলা ও লোকজনের চলাচল স্পষ্ট দেখা যায়। বেশ কয়েকটি কক্ষে আইন্সটাইনের ব্যাবহৃত চিঠি-পত্র, দলিল-দজতাবেজ, আর যে সব যন্ত্রপাতির সাহায্যে তিনি বিভিন্ন যুগান্তরকারী সূত্র আবিস্কার করেছিলেন তা যত্ন সহকারে সাজানো রয়েছে। একটি কক্ষে কিছুক্ষণ পর পরই আইন্সটাইনের উপর ডকুমেন্টারী দেখানো হচ্ছে। দূর্লভ কিছু ছবি, যা এই মহান বিজ্ঞানীকে জানতে সাহায্য করে। কাবা কাউসাইণ বেশ কয়েকটি দূর্লভ বস্তু চিনিয়ে দিতে সাহায্য করলেন। শুধু একজন বিজ্ঞানীর এমন সুন্দর মিউজিয়ম আর কোথাও আছে কিনা জানা নেই।

মিউজিয়ম দেখতে দেখতেই বেলা গড়িয়ে গেল।
বিশাল গেট দিয়ে বেড় হয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। সঙ্গে কাউসাইণ। সামনে আরিয়া নদী। অনেক নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। নদীর মাঝে জলের উপর এক ভাসমান রেষ্টোরা। একটি দুটি করে আলো জ্বলতে শুরু করেছে। কাউসাইণের দিকে তাকালাম, মুখটা মলিন, মনে হল সারাদিন কারো খাওয়া হয়নি। জলের ধারে একটা টেবিলে বসতেই বাংলায় বললেন,‘কেমন দেখলেন?’ চমকে উঠলাম, তা‘হলে মধ্যপ্রাচ্যের নয়? আমার চমকে উঠা দেখেই বললেন,‘ ঢাকা ইডেনে পড়তে পড়তেই এখানে চলে এসেছি। বার্ন ইউনির্ভাসিটিতে পড়ছি।` বেয়ারা এসে পিজা আর জলের বোতল দিয়ে গেল। গলা ভিজিয়ে বললাম,‘নামে কিন্তু বুঝতে পারিনি আপনি বাংলাদেশের, কি বিষয় নিয়ে পড়ছেন?’ বললেন,‘ইতিহাস।’ ‘সে কি? বাইরে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীরতো এই বিষয়টা সাধারনত এড়িয়ে চলে।’ পিজা কাটতে কাটতে বললেন,‘ ‘অতীত আছে বলেইতো বর্তমান সুন্দর।

আমার নাম নিয়ে অনেকেরই কৌতুহল। বাবার দেয়া , আমার খুব প্রিয়। সুন্দর একটা অর্থ আছে।’ পিজার একটা খন্ড মুখে পুড়ে অর্থটা জানতে চাইলাম। হাত থেকে কাঁটা চামিচ আর ছুড়ি প্লেটের দু’পাশে নামিয়ে সোজা তাকিয়ে বললেন,‘ আমাদের নবী (স) যখন জিবরাইল (আ) সাঙ্গে আল্লার সাথে দেখা করার জন্য মিরাজে গিয়েছিলেন, তখন সাত আসমানের একটা জায়গা পর্যন্ত যেয়ে জিবরাইল (আ) নবীকে ছেড়ে দেন। কারণ এর উপর জিবরাইল (আ) আর যেতে পারেননা, গেলে আল্লার নূরএ ধ্বংশ হয়ে যাবেন। নবীকে যেখানে ছেড়ে দেন সেখান থেকে আল্লার আরস পর্যন্ত যেটুকু পথ, ঐটুকু পথের নাম কাবা কাউসাইণ।` একটা নামের এতো সুন্দর অর্থ হতে পারে? হাতে ধরা জলের গ্লাসটা অজান্তেই টেবিলের উপর নেমে এল। কাউসাইণ উঠে দাঁড়ালেন, তাকে যেতে হবে। আমাকে ষ্টেশানে পৌছে দিয়েই বিদায় জানিয়ে সিড়িতে পা’রাখলেন। নামের অর্থতো জানা হলো, মানুষটাকেতো জানা হলোনা !

না। কাউসাইণের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি।
সেমিনার শেষ করে আমি ষ্টকহোম ফিরে এসেছি। তৃতীয় বার যখন জুরিখে গেলাম তখন জারকাকে দেখিনি, নতুন একজন অফিস সেক্রেটারী। জারকা কাজ ছেড়ে চলে গেছে। অরেকদিন পর কাউসাইনের প্রসঙ্গটি কি ভাবে যেন কানে এসেছিল, কি একটা মানষিক ঝামেলায় জড়িয়ে পরেছিলো ফেসবুকে একজনের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে। সে থেকে নিজেকে গুwটয়ে নিয়েছে।

সুইডেন : ষ্টকহোম             
[email protected]