করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৭ বর্ষ ০৩ সংখ্যা
অক্টোবর ২০২৪

লেখক-সংবাদ :





প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
অনুবাদ ও সঙ্কলন: কামাল রাহমান
গিলগামেশ মহাকাব্যটি সম্পর্কে কিছুটা ভালোভাবে জানা হয়েছিল প্রথম সহস্রাব্দে যখন ‘যিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন গভীরতা’ কাব্যগ্রন্থটি ব্যাবিলন ও এসিরিয়ায় প্রচার লাভ করেছিল। ব্যাবিলনের অধিবাসীরা বিশ্বাস করত যে এ মহাকাব্যটি গড়ে উঠেছিল শিন-লাইক-উন্নিন্নি নামের এক ব্যক্তির নিষ্ঠা ও তত্ত্বাবধানে। ধারণা করা হয় যে উরুক রাজ্যের ঐ মহান প-িত ব্যক্তিটি খ্রীস্টপূর্ব তেরো থেকে দশ শতকের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে জীবিত ছিলেন। এখন অবশ্য জানা যায় যে ‘যিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন গভীরতা’ মহাকাব্যটি পরবর্তী এক বা একাধিক সংস্করণের প্রতিরূপ। কাদামাটির আয়তাকার ফলকে উৎকীর্ণ গিলগামেশ মহাকাব্যটির সবচেয়ে পুরোনো খ-গুলো থেকে অনুমান করা হয় যে সম্ভবত তিনহাজার সাতশ’ বছর আগে একজন অনামা ব্যবিলনীয় কবি এসব রচনা করেছিলেন। মহাকাব্যটি উৎকীর্ণ করা হয়েছিল অ্যাকাডিয়ান লিপিতে। এটার মূল সাহিত্যসূত্রগুলো বিধৃত ছিল পাঁচটি সুমেরীয় কবিতায়। ওগুলো ছিল আরো প্রাচীন। সুমেরীয় কবিতাগুলো সম্ভবত চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল নিনেভের চ্যালদীভাষী উর রাজ্যের রাজা সুলগির দরবারের রাজপ্রশস্তি গাওয়ার সময় থেকে। খ্রীস্টপূর্ব একুশ শতকের কোনো এক সময়ে রাজত্ব করেছিলেন রাজা সুলগি।
গত শতকের শুরুতে গিলগামেশ মহাকাব্যটির আধুনিক সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পর ওটা বিশ্বসাহিত্যের এক সেরাগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে। অ্যাসিরীয় বিশেষজ্ঞ আর্থার উঙœাদ মহাকাব্যটির জার্মান অনুবাদ করেন। রাইনার মারিয়া রিল্ককে চূড়ান্তভাবে অভিভূত করেছিল ঐ মহাকাব্যটি।  এক ‘বিস্ময়াভিভূত’ সৃষ্টি হিসেবে বিবেচনা করতেন তিনি ওটাকে এবং মনে করতেন যে ‘মৃত্যু’ বিষয়ে রচিত পৃথিবীর প্রথম ও একমাত্র মহাকাব্য ছিল ওটা। অনন্ত জীবনের প্রতি মানুষের অশেষ আকুতি, মৃত্যুকে জয় করার জন্য একজন মানুষের অকল্পনীয় ও নির্ভীক সংগ্রাম, মরণশীলতাকে জানার জন্য অভূতপূর্ব ও বীরোচিত সব কর্মকা-, সনাতন জীবনের গতিবিধি অনুসন্ধান, এবং চূড়ান্তে প্রত্যক্ষ করা যে একজন মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে কেবল তার পেছনে রেখে যাওয়া সুকৃতির মাধ্যমে।
মৃত্যুভীতি এ মহাকাব্যটির মূল সুর হলেও এটা ছাড়িয়ে গেছে অন্যান্য অনেক কিছু। একজন মানুষের ‘প্রজ্ঞার পথে যাত্রা’ অবিচ্ছিন্ন রাখার এক অসাধারণ গল্প এটা। মানুষের জীবন সংগ্রামের পথে পায়ে পায়ে জড়িয়ে থাকা বাধাবিঘœ, জয়-পরাজয় এবং মানুষের বেঁচে থাকার বিভিন্ন জটিল প্রপ গুলো গভীরভাবে স্পর্শ করে এটা এবং জীবন ও মৃত্যুর অজানা রহস্য ও এসবের ভেতরে লুকিয়ে থাকা গভীর সত্য উপলব্ধির উপর আলোকপাত করে। গিলগামেশ মহাকাব্যের বিশেষ যে দিকটি অ্যাসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় রাজদরবারকে প্রভাবিত করেছিল তা সম্ভবত এর অন্তর্নিহিত অভিধা, একজন রাজার কর্তব্য সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়া, তাঁর করণীয় বিষয়গুলো ও নিষিদ্ধ দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ করে দেয়া। একজন সংসারী মানুষকে তার পরিবারের প্রতি পালনীয় কর্তব্যগুলো চিহ্নিত করে এটা। জন্মসূত্রে লব্ধ মানুষের প্রকৃতিগত ও প্রশিক্ষণগত বিষয়গুলোর সনাতন দ্বন্দ্ব, আদিম অসংস্কৃত জীবনের বিপরীতে নাগরিক জীবনে প্রাপ্ত সুবিধাদিও বিশ্লেষণ করে দেখায় এটা। মানুষের ভেতর গড়ে ওঠা প্রকৃত বন্ধুত্বের মূল্য ও এটার প্রতিদান, বীরসুলভ কর্মকা- ও অর্জিত সুনামের স্থায়ীত্ব বা অমরত্বের প্রতিবিধান এসবের উপর আলোকপাত রয়েছে মহাকাব্যটির বিভিন্ন অংশ জুড়ে। গিলগামেশের নিজের গল্পের সঙ্গে নিপুনভাবে বয়ন করা হয়েছে মহাপ্লাবনের প্রথাগত গল্পটি যেখানে দেবতারা চেয়েছিল মনুষ্য প্রজাতিকে উৎখাত করতে। মৃতদের জগতের একটা মন ভারী করা বিবরণ রয়েছে যা মানুষকে এ বিষয়ে আরো গভীরভাবে ভাবার জন্য প্ররোচিত করে। এসবের মধ্য দিয়ে গিলগামেশ সে-সময়ের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও যাপিত জীবনের এক মহানায়ক ও অননুকরণীয় বীর হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিলেন। সব শেষে তিনি যে প্রজ্ঞা লাভ করেছিলেন, মহাপ্লাবন থেকে উদ্ধারকারী নায়ক উতা-নাপিস্তির পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার প্রান্তে অব¯ি’ত হওয়ার পর্বটি থেকে, তা তাকে প্রভাবিত করেছিল বা প্রণোদনা দিয়েছিল মানুষের জন্য বিভিন্ন মন্দির স্থাপনে ও তাদের জন্য একটা আদর্শ ও মহাপ্লাবন পূর্ববর্তী সময়ে হারিয়ে যাওয়া সঠিক দিকগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। গিলগামেশের অন্যান্য বীরোচিত কর্মকা-ের মধ্যে প্রত্যক্ষ করা যায় যে সম্ভবত তিনিই প্রথম মরুদ্যান রচনা করেছিলেন, লেবানন পর্বতের চিরহরিৎ সিডার গাছগুলো কাটতে পেরেছিলেন, বৃষভ হত্যার কৌশল আয়ত্ব করেছিলেন, সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন, সমুদ্রের প্রবাল উপত্যকার গভীরে ডুব দিতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং এরকম আরো অনেক কিছু। তাকে মানব সভ্যতার একজন অগ্রনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করা যায় সন্দেহাতীতভাবে।
এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ও উদ্ধারকৃত গিলগামেশ মহাকাব্যের বারোটি ফলক হতে তিনটি ফলক এখানে অনুবাদ করা হয়েছে। এটার কিছু অংশ ব্যাবিলনীয় মান সংস্করণের ও কিছু অংশ উদ্ধারকৃত প্রাচীন সিপার ফলক (মান সংস্করণে যেগুলো পাওয়া যায়নি) হতে নেয়া হয়েছে। পেঙ্গুইন ক্লাসিক্স প্রকাশিত এন্ড্রু জর্জের ইংরেজি অনুবাদে এভাবেই আছে।

মৃৎফলক নং ১

এনকিদুর আগমন

নান্দীপাঠ ও বন্দনাগান।

রাজা গিলগামেশ শাসন করেন উরুকবাসীদের। ওরা অভিযোগ করে ঈশ্বরের কাছে। তাঁর অতিমানবীয় শক্তিমত্তা বিভাজনের জন্য দেবতারা সৃষ্টি করেন তার প্রতিপক্ষ। এক বুনোমানুষ, ইঙ্কিদু। ওকে আনা হয়েছিল বুনোজগতের প্রাণীদের কাছ থেকে। এনকিদুর জন্য এক ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছিল। এক বারবণিতার প্রলোভনে ফেলে ওকে পশুপাল থেকে দূরে সরিয়ে াে হয়েছিল। ঐ বারবণিতা, শ্যামহাত প্রত্যক্ষ করিয়েছিল গিলগামেশকে এবং ওর সব কলাকৌশল, তাকে নিয়ে গিয়েছিল উরুকে, যেখানে গিলমামেশ স্বপ্নে দেখেছিল ওকে ।

যিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন গভীরতা, দেশটির ভিত্তিভূমি,
  [যিনি] জানতেন . . . , সব বিষয়ে যিনি ছিলেন প্রাজ্ঞ!
[গিলগামেশ, যিনি] প্রত্যক্ষ করেছিলেন গভীরতা, দেশটির ভিত্তিভূমি,
  [যিনি] জানতেন . . . , সব বিষয়ে যিনি ছিলেন প্রাজ্ঞ!

[তিনি] . . . সর্বত্র . . .
  এবং [শিখেছিলেন] সবকিছু যা ছিল সকল প্রজ্ঞার সমষ্টি।
তিনি দেখেছিলেন যা ছিল গোপন, আবিষ্কার করেছিলেন যা ছিল লুকোনো,
  তিনি ফিরিয়ে এনেছিলেন মহাপ্লাবন পূর্ববর্তী এক উপাখ্যান।

 পেরিয়ে এসেছিলেন তিনি অনেক দূরের এক পথ, ছিলেন পরিশ্রান্ত, পেয়েছিলেন শান্তি,
  এবং তার সকল পরিশ্রম রেখেছিলেন এক পাথরফলকে।
তিনি নির্মাণ করেছিলেন উরুক নগরীর জন্য পশুপ্রাচীর,
  পবিত্র ইয়ান্নার জন্য, পবিত্র গোলাঘর।

পশম দিয়ে বানানো লাক্ষাপ্রাচীর দেখো তুমি,
  তাকিয়ে দেখো ওটার প্রান্তদেশ, যার অনুকরণ করতে পারবে না আর কেউ!
বেছে নাও বিগত যুগের এক সিঁড়ি
  কাছে টেনে নাও ইয়ান্নাকে, বসো দেবী ইস্তারের কাছে,
পরবর্তী কোনো রাজা পারেনি তা অনুসরণ করতে!

উঠে আসো উরুক প্রাচীরে, হাঁটো সামনে ও পেছনে!
  জরিপ কর এটার ভিত্তিভূমি, পরীক্ষা করে দেখো এটার ইটের কাজ!
চুল্লিতে পোড়ানো নয় কি এটার ইটগুলো?
  সুদক্ষ সাত কারিগর প্রতিষ্ঠা করে কি এটার ভিত্তিভূমি?

[এক বর্গমাইল বিস্তৃত} এই নগরী, তারপর আরো [এক বর্গমাইল], এক বর্গমাইল জুড়ে এটার খেজুর-বাগান,
  কাদামাটির গহ্বর, আধা বর্গমাইল জুড়ে দেবী ইস্তারের মন্দির:
[তিন বর্গমাইল] ও আরো অর্ধেকটা জুড়ে এই উরুকের বিস্তার।

[দেখো] সিডারের বর্গ-ফলক,
   যখন এটা [মুক্ত করে] ব্রোঞ্জের খিল
[্উঠিয়ে দেখো] ওটার গোপনীয়তার আবরণ,
  [তোলো] গব্ধর্বমণির মৃৎফলক এবং পড় ওটা
গিলগামেশের প্রদায়ী প্রচেষ্টা, যা কিছু পালন করেছে সে।

অন্য সব রাজাকে ছাড়িয়ে, বীরসুলভ ওর গুণাবলী,
  উরুকের সাহসী প্রজন্ম, দেখো বুনো ষাঁড়ের উন্মত্ততা!
সামনে এগিয়ে চলায় সে ছিল অগ্রসেনা,
  পেছনের রক্ষাবূহ্যে সঙ্গীরা ভরসা করতে পারতো ওকে!

এক বিশাল বাঁধ, যোদ্ধাদের রক্ষাকারী,
  এক ভয়ানক বাণের ঢেউ, একটা পাথুরে দেয়াল চূর্ণ করা শক্তি!
সুমেরের রাজা লাগালবান্দার বুনো ষাঁড়, গিলগামেশ, শক্তিতে একেবারে কাঁটায় কাঁটা,
  অগাস্টের বুনো গাভী, দোহনকারী দেবী নিনশান!

মাথায় সবচেয়ে উঁচু গিলগামেশ, অসাধারণ ও ভয়ানক’
 পর্বতের ভেতর দিয়ে গিরিপথ তৈরি করেন যিনি,
উ”চভূমির ঢালগুলোয় যিনি খনন করেন ইঁদারা,
  এবং অতিক্রম করে যান মহাসমুদ্র, সূর্যোদয় পর্যন্ত বিস্তৃত সমুদ্র;

জীবন খুঁজে চষে ফেলেছেন যিনি পুরো পৃথ্বী,
  এবং পৌঁছুতে পেরেছিলেন দূরবর্তী ও পরিপূর্ণ শক্তিমান উতা-নাপিস্তি পর্যন্ত
যিনি পুনস্থাপন করেছিলেন ধর্মাচার-কেন্দ্রগুলো যা ধ্বংস হয়েছিল মহাপ্লাবনে,
  এবং মানুষের জন্য জায়গামতো স্থাপন করেছিলেন বিশ্বব্রহ্মা-ের ক্রিয়াচারগুলো।

 প্রতিপক্ষ কে পারতো দাঁড়াতে তাঁর রাজোচিত অবস্থানের প্রতি?
  কে বলতে পারতো গিলগামেশের মতো, ‘দেখো, এই আমি হলাম রাজা’?
জন্মের প্রথম দিন হতে তার নাম ছিল গিলগামেশ’
  তাঁর দুই তৃতীয়াংশ ছিল দেবতার এবং এক তৃতীয়াংশ মানবের।

মহাদেবতাদের অঙ্কনশিল্পীরা এঁকেছিল তাঁর দেহকাঠামো,
  স্বর্গের নাদিম্মাদ করেছিল নিখুঁত তাঁর শরীরকাঠামো।
*    *    *

তিন হাত বিস্তৃত ছিল তাঁর পায়ের পাতা, পা ছিল তাঁর সাড়ে পাঁচ হাত।
  প্রতিটা পদক্ষেপ ছিল তাঁর  ছয় হাত পরিমাপে,
. . . হাত পরিমাপ ছিল তাঁর সামনের অংশের . . .

তাঁর গালগুলো ছিল শশ্রুম-িত যেমন . . .
  [যব খেতের মতো] ঘন নিবিড় হয়ে জন্মাতো তাঁর মাথার চুল।
যখন দীর্ঘ হয়ে উঠেছিলেন তিনি তখন তাঁর সৌন্দর্য ছিল নিখুঁত,
  পৃথিবীর মানদ-ে তিনি ছিল সুন্দরতম পুরুষ।

 [সামনে ও পেছনে] পদচারণা করতেন তিনি উরুক রাজ্যে
   শির উঁচু করা এক বুনো ষাঁড়ের মতো প্রভুত্বব্যঞ্জক।
তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিল না যখন ঝনঝনিয়ে উঠত তাঁর অস্ত্রসমূহ,
  প্রতিযোগিতার সময় ওদের পায়ের উপর নুইয়ে পরতো তাঁর সঙ্গীরা ।

কোনো প্রচেষ্টা ছাড়াই তিনি নাকাল করতেন উরুকের তরুণদের,
  কোনো পুত্রকেই মুক্তভাবে পিতার কাছে যেতে দেন না গিলগামেশ।
দিনে ও রাতে তাঁর একনায়কত্ব হয়ে উঠেছিল কঠোরতর,
  গিলগামেশ, [বর্ধিষ্ণু মানুষজনের পথ প্রদর্শক!]

উরুক রাজ্যের রক্ষাকর্তা এক মেষপালক ছিলেন তিনি,
  [কিন্তু গিলগামেশ] কোনো বালিকাকেই [মুক্তভাবে যেতে দেন না ওদের] মায়ের কাছে।
[ওদের কান্না,] মহিলাদের, [এক যন্ত্রণা হয়ে দেখা দিয়েছিল দেবীদের কাছে,]
  [ওদের অভিযোগের ডালা] নিয়ে এসেছিল ওরা [তাঁদের সামনে:]

‘[যদিও শক্তিমান, ও অবিসংবাদী,] কুশলী ও মহাপরাক্রমশালী,
  [গিলগামেশ] কোনো তরুণীকেই কুমারী হয়ে ওর [হবু বরের কাছে] যেতে দেন না,]’
বীরযোদ্ধাদের কন্যারা, তরুণ যুবকের জন্য মনোনীত কনে,
  সবার অভিযোগের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেন দেবীগণ

স্বর্গের দেবগণ, উদ্যোগ নেয়ার প্রভুগণ,
  [তাঁরা কথা বলেন দেবতা অনুর সঙ্গে] . . . ;
‘এক অসংস্কৃত বুনো ষাঁড়ের জন্ম দিয়েছেন আপনি উরুক নগরীতে,
  তার সমকক্ষ কেউ নেই যখন তার অস্ত্রগুলো ঝংকার দিয়ে ওঠে।

প্রতিযোগিতার সময় তাঁর সঙ্গীরা ওদের পায়ের উপর নুইয়ে পরে।
  উরুকের তরুনদের তিনি নাকাল করতেন কোনো প্রচেষ্টা ছাড়াই,
কোনো পুত্রকে গিলগামেশ মুক্তভাবে যেতে দেন না তার পিতার কাছে।
  দিনে ও [রাতে তাঁর একনায়কত্ব হয়ে উঠেছিল], কঠোরতর।

‘তথাপি তিনি উরুকের মেষখামারের পালনকর্তা,
  গিলগামেশ, [বর্ধিষ্ণু] মানুষজনের [পথ প্রদর্শক!]
যদিও তিনি ওদের মেষপালনকর্তা এবং ওদের [রক্ষাকারী,]
  শক্তিমান, অবিসংবাদী, কুশলী [ও মহাপরাক্রমশালী,]
[গিলগামেশ] কোনো তরুনীকেই কুমারী হয়ে ওর [হবু বরের কাছে] যেতে দেন না,]’

বীরযোদ্ধাদের কন্যারা, তরুন যুবকের জন্য মনোনীত কনে,
  সবার অভিযোগের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেন দেবীগণ।

অনু দেবতার প্রতিক্রিয়া সম্বলিত অনুচ্ছেদটি মহাকাব্যের পরবর্তী সংস্করণ হতে বাদ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সৌভাগ্যবশত পুরোনো একটা পাঠ্যাংশ হতে ওটার সারসংক্ষেপ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তীতে কোনো এক নবিশ কর্তৃক ওটা লেখা হয়েছিল। পরে আবার নিপপুর শহর হতে উদ্ধার করা হয়েছিল ওটা।

[ওরা] ডেকে আনুক [অরুরুকে,] ঐ মহান দেবী,
  [যিনি সৃষ্টি করেছিলেন ওদের,] এই বিপুল মানবগোষ্ঠী:
[তিনিই সৃষ্টি করুন গিলগামেশের সমকক্ষ আরেকজন,] একজন পরাক্রমশালী মহাশক্তিধর,
  [এবং সে] প্রতিযোগিতা করুক [তাঁর সঙ্গে,] যেন শান্তি পায় উরুক!’

মৃৎফলক ১ এর পাঠ আবার শুরু:

অরুরুকে ডেকে আনে ওরা, ঐ মহান জনকে:
  ‘আপনি, হে অরুরু, সৃষ্টি করেছেন [মানবসভ্যতা:]
এখন আবার সাজিয়ে দিন ওভাবে, যা প্রত্যাশা করেছিলেন দেবতা অনু!

‘তাঁর হৃদয়-ঝড় প্রশমণের জন্য একজন জুড়ি দিন তাঁকে,
  প্রতিযোগিতা করুক তাঁরা, যেন শান্তি পায় উরুক!’
দেবী অরুরু শোনেন ওদের সব কথা,
  প্রত্যাশা করে যা সাজিয়েছিলেন দেবতা অনু তাঁর ভেতর।

দেবী অরুরু, ধুয়ে নেন তাঁর হাতদুটো,
  তুলে নেন এক চিমটে কাদামাটি, ছুঁড়ে দেন ওটা নিচের বুনো প্রকৃতিতে।
বুনোভূমি হতে তিনি সৃষ্টি করেন এনকিদুকে, ঐ মহাবীরকে,
  নীরবতার সন্তান সে, মহাশক্তিধর হিসেবে গেঁথে তোলেন ওকে দেবতা নিনার্তা।

পুরো শরীর ছিল ওর পশমে আবৃত
  এক নারীর যেমন থাকে তেমনি ছিল ওর চুলের লম্বা বিনুনীগুলো:
মাথার চুল জন্মেছিল ওর যব খেতের মতো নিবিড় ও ঘন হয়ে,
  চিনতো না সে কাউকে, এমনকি ছোাট্ট একটা ভূখ-কেও।

পশম দিয়ে এভাবে জড়ানো ছিল সে যেন পশুদের এক দেবতা,
  গজলাহরিণদের সঙ্গে চারণভূমির ঘাসের উপর বিচরণ করছিল সে,
ভিড়ে মিশে গিয়ে জল-ক্রীড়াতে মেতে উঠেছিল সে,
  জলের প্রাণীদের সঙ্গে আনন্দে ভরে উঠেছিল ওর হৃদয়।

এক শিকারী, এক ফাঁদ পাতা মানুষ,
  জলের খাঁদ বেয়ে সামনে আসে ওর।
পর দিন, দ্বিতীয় জন, এবং তারপর তৃতীয় জন,
  সে আসে ঐ জল-খাঁদের মধ্য দিয়ে।
যখন ঐ শিকারীটি দেখতে পায় ওকে, দৃষ্টি আড়ষ্ট হয়ে গেছিল ওর,
  ওর পশুপাল নিয়ে - ফিরে গেছিল সে নিজের গুহায়।

[ঐ শিকারীটি পড়েছিল] এক সমস্যায়, নিয়ন্ত্রণ করেছিল সে নিজেকে এবং শান্ত হয়ে ছিল,
  তার মন [ছিল হতাশ,] তার অভিব্যক্তি ছিল নিষ্প্রভ।
তার অন্তরে ছিল বেদনা,
  তার চেহারায় ফুটে উঠেছিল [সুদূর কোথাও হতে আসা] ক্লান্তির ছাপ।

শিকারীটি [ওর মুখ] খুলেছিল কথা বলতে, সে বলে  [ওর পিতার কাছে:]
  ‘আমার পিতা, একজন মানুষ এসেছিল [জল-খাঁদের মধ্য দিয়ে।]
স্থলভূমিতে সবচেয়ে পরাক্রমশালী সে, মহাশক্তি [ধারণ করে সে,]
  অন্তরীক্ষ হতে আসা [এক উপলখ- সম] [তার শক্তিমত্তা]।

পর্বতে ঘুরে [বেড়ায় সে সারাদিন,]
  [চড়ে বেড়ায় সে] ঘাসের প্রান্তরে [সবসময় সঙ্গে নিয়ে এক মেষপাল,]
ওর পথচলাচিহ্ন [সবসময়] দেখা যায় [জল-খাঁদগুলোর ধারে,]
  [ভয় হচ্ছে ্আমার,] আমি সাহস করি না ওর সামনে যেতে।

‘[সে ভরিয়ে দেয়] যে গর্তগুলো আমি [নিজে] খুঁড়েছি,
  [সে উঠিয়ে ফেলে] ঐ ফাঁদগুলো যা আমি পেতে রাখি।
[সে মুক্ত করে দেয় আমার নাগাল হতে] মাঠের সব পশুগুলোকে,
  [সে থামিয়ে দেয়] আমাকে বুনো প্রাণীদের নিয়ে আমার কাজ।’

ঐ শিকারীর কাছে [কিছু বলার জন্য মুখ খোলে] ওর পিতা:
  ‘[আমার পুত্র,] যাও ঐ নগরে, উরুকে [ খুঁজে দেখো] গিলগামেশকে!
. . . . . . . . . . . . . তার উপ¯ি’তিতে,
  ওর শক্তিমত্তা এত প্রবল যে [আকাশের উপলখ-ের মতো ওটা,]

‘[ঐ পথ ধরো,] তোমার মুখ ফেরাও [উরুক নগরের দিকে,]
  [নির্ভর করো না] কেবল একজন মানুষের শক্তির উপর!
[যাও, আমার পুত্র, এবং] কথায় বাঁধো [শামহ্যাত নামের নগরনটিনীকে,]
  [ওর সম্মোহন এক কুহক] এমনকি প্রবল প্রতাপশালীর জন্যও!

‘যখন [পশুপাল নেমে] আসবে জল-খাঁদের [কাছে,]
   সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য [সে উন্মোচন করবে] ওর [পোশাক ও বেশ-ভূষণ]।
[ওকে দেখতে পাবে] সে, এবং ওর বাসনা জানাবে ওকে’
  ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে সে ওর মেষপাল, [যদিও সে জন্মেছে] ওদের ভেতর।’

ওর পিতার পরামর্শের প্রতি [মনোযোগী হয়ে],
  চলে যায় ঐ শিকারী, [শুরু করে ওর দীর্ঘ যাত্রা।]
দেখানো ঐ পথ নেয় সে, নিবদ্ধ করে [ওর মুখ] উরুকে দিকে,
  রাজা গিলগামেশের সামনে [এলে বলে সে:]

‘এক জন মানুষ এসেছিল [জল-খাঁদের মধ্য দিয়ে।]
  স্থলভূমিতে সবচেয়ে পরাক্রমশালী সে, মহাশক্তি [ধারণ করে সে,]
অন্তরীক্ষ হতে আসা [এক উপলখ-ের] মতো [তার শক্তিমত্তা]।

পর্বতে ঘুরে [বেড়ায় সে সারাদিন,]
  [চড়ে বেড়ায় সে] ঘাসের প্রান্তরে [সবসময় সঙ্গে নিয়ে এক মেষপাল,]
ওর পথচলাচিহ্ন [সবসময়] দেখা যায় [জল-খাঁদগুলোর ধারে,]
  [ভয় হচ্ছে আমার,] আমি সাহস করি না ওর সামনে যেতে।

‘[সে ভরিয়ে দেয়] যে গর্তগুলো আমি [নিজে] খুঁড়েছি,
  [সে উঠিয়ে ফেলে] ঐ ফাঁদগুলো যা আমি পেতে রাখি।
[সে মুক্ত করে দেয় আমার নাগাল হতে] মাঠের সব পশুগুলোকে,
  [সে থামিয়ে দেয়] আমাকে বুনো প্রাণীদের নিয়ে আমার কাজ।’

গিলগামেশ ওকে বলে, ঐ শিকারীকে:
  ‘যাও, শিকারী, ঐ নগরকন্যা শামহ্যাতকে সঙ্গে নাও তোমার!

‘যখন [পশুপাল নেমে] আসবে জল-খাঁদের [কাছে,]
   সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য [সে উন্মোচন করবে] ওর [পোশাক ও বেশ-ভূষণ]।
[ওকে দেখতে পাবে] সে, এবং ওর বাসনা জানাবে ওকে’
  ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে সে ওর মেষপাল, [যদিও সে জন্মেছে] ওদের ভেতর।’

শিকারী চলে যায়, নগরনটি শামহ্যাতকে সঙ্গে নেয় সে,
  পথে এসে দাঁড়ায় ওরা, শুরু করে যাত্রা ওদের।
গন্তব্যে এসে পৌঁছোয় ওরা তৃতীয় দিবসে,
  শিকারী ও নগরবণিতা বসে সেখানে, এবং অপেক্ষায় থাকে।

প্রথম দিন, তারপর দ্বিতীয় দিন ওরা অপেক্ষা জল-খাঁদের ধারে,
  পশুপাল নেমে আসে তখন জল পানের জন্য।
তখন শুরু হয় ঐ খেলা, জলে আনন্দিত হয় ওদের হৃদয়,
  এবং এনকিদুও, জন্ম নেয় ঐ উ”চভূমিতে।

তৃণচারীদের সঙ্গে ঘাসের ভেতর চড়ে বেড়ায় সে,
  জল-খাঁদের খেলায় যোগ দেয় সে ভিড়ের সঙ্গে মিশে,
পশুদের সঙ্গে আহ্লাদিত হয় ওর হৃদয় ঐ জলে:
  শামহ্যাত দেখে তখন ওকে, প্রকৃতির ছোট্ট এক শিশু,
আদিম মানুষটিকে দেখে সে ঐ পশুদলের সঙ্গে।

‘এই হচ্ছে সে, শামহ্যাত! উন্মোচন কর তোমার স্তনযুগোল,
  অবমুক্ত কর তোমার যৌনতা, উপভোগ করতে দাও ওকে তোমার সৌন্দর্য!
গুটিয়ে ফেলো না নিজেকে, ওর ঘ্রাণেন্দ্রীয়ের কাছে নিয়ে যাও তোমাকে:
  দেখতে পাবে সে তোমাকে, এবং সে কামনা করবে তোমাকে।

‘বসন ছড়িয়ে দাও তোমার যেন সে শুতে পারে তোমার উপর,
   কর পুরুষের জন্য নারীর ঐ কাজটি,
আলিঙ্গন করতে দাও তোমাকে, চরিতার্থ করতে দাও ওর বাসনা,
  ‘নেমে আসে [যখন ওর পশুপাল] খাঁদের ঐ জলের [কাছে,]
ওর সৌন্দর্য প্রদর্শণের জন্য [উন্মোচন করবে] সে ওর [পোশাক ও  বেশ-ভূষণ]।
  [দেখতে পাবে সে] ওকে, এবং জানাবে ওর বাসনা’
ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে সে ওর পশুপাল, [যদিও জন্মেছে সে] ওদের ভেতর।’

ধীরে ধীরে নিতম্বের বস্ত্র উন্মোচন করে শামহ্যাত,
  অবমুক্ত করে ওর  যৌনতা এবং ঐ সৌন্দর্যে আকর্ষিত হয় এনকিদু।
 গুটিয়ে নেয় না সে নিজেকে, ওর দেহনিঃসৃত সৌগন্ধের ভেতর গ্রহণ করে ওকে:
   কাপড় বিছিয়ে দেয় সে এবং এনকিদু শুয়ে পড়ে ওর উপর।

পুরুষের জন্য নারীর ঐ কাজটি করে সে,
  আলিঙ্গন করে ওকে এবং বাসনা চরিতার্থ করে সে।
ছয় দিন ও সাত রাত্রির জন্য
  উ”ছৃত ছিল এনকিদু, যখন লিপ্ত ছিল সে শামহ্যাতের সঙ্গে।

ওর পুলকানন্দ দ্বারা সম্পূর্ণরূপে পরিতৃপ্ত হওয়ার পর’
  বিচরণের জন্য ফিরে যায় সে ওর পশুপালের সঙ্গে ।
গজলা হরিণেরা আবার দেখতে পায়  এনকিদুকে, দৌড়োতে শুরু করে ওরা,
  ওর সান্নিধ্য ছেড়ে দূরে পালিয়ে যায় প্রান্তরের পশুরা।

ওর শরীরকে এখন শুদ্ধতায় পরিবর্তিত করেছে এনকিদু,
  স্থবির হয়ে থাকে ওর পা, যদিও ওর পশুপাল ছিল গতিশীল।
দুর্বল হয়ে পড়েছিল এনকিদু, আগের মতো দৌড়াতে পারে না আর,
  এখন রয়েছে এক কারণ ওর, এবং ব্যাপক বোধক্ষমতা।

সে ফিরে আসে এবং বসে ওর নগরবণিতার পায়ের কাছে,
   দেখে সে ওর নগরললনাকে, প্রত্যক্ষ করে ওর বিশেষত্ব।
অন্তরঙ্গভাবে শোনে সে তখন ঐ বণিতার মুখনিঃসৃত শব্দগুলো,
  [যেভাবে শামহ্যাত] কথা বলে ওর সঙ্গে, এনকিদুর সঙ্গে:

‘তুমি খুব সুন্দর, এনকিদু, এক দেবতার মতো তুমি!
  কেন ঐ পশুদের সঙ্গে বুনোভাবে ঘুরে বেড়াও তুমি?
এসা, তোমাকে নিয়ে যাবো আমি  ঐ মেষখামার উরুকে,
  পবিত্র মন্দিরে, অনু ও ইস্তারের ঘরে,

‘যেখানে গিলগামেশ শক্তিমত্তায় একেবারে খাঁটি,
  বুনো ষাঁড়ের মতো প্রভুত্ব করে সে মানুষের উপর।’
ওভাবে কথা বলে সে ওর সঙ্গে এবং ওগুলো গ্রহণ করে এনকিদু,
  প্রকৃতিগতভাবে সে জানতো, একজন বন্ধু খোঁজা দরকার ওর।

ওকে বলে এনকিদু, ঐ নগরবণিতাকে:
  ‘এসো, শামহ্যাত, নিয়ে চল আমাকে
ঐ পবিত্র মন্দিরে, অনু ও ইস্তারের পবিত্র গৃহে,
  যেখানে গিলগামেশ শক্তিমত্তায় একেবারে খাঁটি,
বুনো ষাঁড়ের মতো প্রভুত্ব করে যে মানুষের উপর।’

‘প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আহ্বান জানাবো ওকে আমি, [শক্তিমতার জন্য] আমার প্রতাপের জন্য,
  আমার দম্ভ দেখাবো আমি উরুক নগরে, ওদের বলবো যে, ‘‘আমিই সর্বশক্তিমান!’’
[সেখানে] আমি বদলে দেব সব, রয়েছে যা কিছু সুবিন্যস্ত:
  [যে] জন্মেছে বন্যতায়, সেই শক্তিমান, সেই ধারণ করে প্রতাপ।’

শামহ্যাত:

‘দেখুক [মানুষেরা] তোমার মুখম-ল,
. . . . . . . . যেটাকে চিনি বটে আমি।
যাও, এনকিদু, ঐ মেষখামার উরুকে,
  যেখানে তরুণেরা পরিধান করে কোমরবন্ধ!

‘ প্রতিদিনই একটা করে উৎসব রয়েছে ঐ [উরুক] নগরে,
  ঢোলগুলো বেজে ওঠে তালে তালে।
এবং ওখানে আছে অনেক নগরললনা, দেহবল্লরী যাদের অনুপম,
  সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত ওরা ও পুলকে পূর্ণ।

‘এমনকি বুড়োদেরও বিছানায় জাগিয়ে তোলে ওরা!
  হে এনকিদু, [এখনো] জীবন সম্পর্কে যেমন অজ্ঞ তুমি,
তোমাকে দেখাবো আমি গিলগামেশকে, একজন সুখী ও বেপরোয়া মানুষকে,
  তাকাও ওর দিকে, সম্মান কর ওর বিশেষত্বগুলো!

‘মানবকুলে সে সুন্দর, আচরণে মর্যাদাশীল,
  সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত ওর সকল ব্যক্তিত্ব।
তোমার চেয়েও অধিক ওর শক্তিমত্তা,
  নির্ঘুম থাকে সে দিনে ও রাতে।

‘হে এনকিদু, সরিয়ে রাখো তোমার পাপপূর্ণ ভাবনাগুলো!
  গিলমামেশ হল সে যাকে ভালোবাসে স্বর্গের শামাস।
অনু, এনলিল ও ইয়া দেবতারা বিস্তারিত করেছে ওর প্রজ্ঞা।

‘এমনকি ঐ উ”চভূমি হতে তোমার আসার আগে,
   উরুকে স্বপ্নে দেখেছিল তোমাকে গিলগামেশ:
গিলগামেশ জেগে উঠেছিল এক স্বপ্ন সংযোগে, ওর মাকে বলেছিল সে:
  ‘‘আমার মা, এ স্বপ্নটি দেখেছি আমি কাল রাতে -

‘‘‘স্বর্গের নক্ষত্রেরা এসে দাঁড়িয়েছে আমার সামনে
  আকাশের এক উপলখ-ের মতো একজন উৎক্ষিপ্ত হয়েছিল আমার সামনে।
আমি উঠিয়েছিলাম ওটাকে, কিন্তু ওটা ছিল আমার জন্য খুব বেশি ভারী,
  গড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম ওটাকে আমি, কিন্তু ওটা সরাতে পারিনি একটুও।

‘‘‘উরুকের সবটুকু ভূমি ঘিরে ছিল ওটার চারদিক
  [সব মাটি একত্রিত হয়েছিল] ওটায়।
এক জনতা [আন্দোলিত হ”িছল] ওটার সামনে,
  [ভিড় করেছিল] মানুষের দল ওটাকে ঘিরে।

‘‘‘[বাহুতে রাখা এক স্বর্গশিশুর] মতো ওরা চুমু খা”িছল ওর পায়ে,
  এক স্ত্রীর মতো [আমি ভালোবেসেছিলাম ওটাকে,] সোহাগভরে করেছিলাম আলিঙ্গন।
[আমি উঠিয়েছিলাম ওটাকে,]  রেখেছিলাম তোমার পদতলে,
  [এবং তুমি, মা আমার, তুমি] সমকক্ষ করেছো ওকে আমার।’’

‘[গিলগামেশের মা] ছিলেন চালাক ও জ্ঞানী,
  সব কিছুতে পারদর্শী, তিনি তাঁর পুত্রকে বলেন -
[বুনো-গাভী] নিনশান ছিলেন চালাক ও জ্ঞানী,
সব কিছুতে পারদর্শী, গিলগামেশকে বলেন তিনি:

‘‘‘স্বর্গের নক্ষত্রেরা এসে দাঁড়িয়েছিল তোমার সামনে
  আকাশের এক উপলখ-ের মতো একজন উৎক্ষিপ্ত হয়েছিল তোমার সামনে।
তুমি উঠিয়েছিলে ওটাকে, কিন্তু ওটা ছিল তোমার জন্য খুব বেশি ভারী,
  ওটাকে গড়ানোর চেষ্টা করেছিলে তুমি, কিন্তু ওটা সরাতে পারোনি তুমি একটুও।

[তুমি উঠিয়েছিলে ওটাকে,] রেখেছিলে আমার পদতলে,
  এবং আমি, নিনশান ওকে করেছি তোমার সমকক্ষ।’’
এক স্ত্রীর মতো ভালোবেসেছিলে তুমি ওকে, সোহাগভরে করেছিলে আলিঙ্গন।
  এক মহাশক্তিমান সাথী আসবে তোমার জন্য, এবং ওর বন্ধুত্বের ত্রাতা হবে তুমি।

স্থলভূমিতে সবচেয়ে বেশি পরাক্রমশালী, মহাশক্তি ধারণ করে সে,
  অন্তরীক্ষ হতে আসা এক উপলখ-ের মতো তার শক্তিমত্তা।
এক স্ত্রীর মতো ভালোবাসবে তুমি ওকে, আলিঙ্গন করবে ওকে সোহাগভরে,
  সে হবে মহাশক্তিমান, এবং প্রায়শ রক্ষা করবে তোমাকে।’’

‘দ্বিতীয় স্বপ্ন দেখার পর,
  সে জেগে ওঠে ও দেবীর, ওর মায়ের সামনে যায়।
গিলগামেশ বলে ওর কাছে, ওর মায়ের কাছে,
  ‘‘আরো একবার, মা আমার, আরেকটা স্বপ্ন দেখেছি আমি-

‘‘‘[এক সড়কে] উরুক-নগর-বর্গে,
  একটা কুঠার পড়েছিল যেখানে জড়ো হয়েছিল জনতা।
উরুক [ভূমি] ঘিরেছিল ওটাকে,
  পুরো [দেশ] জড়ো হয়েছিল ওটাকে ঘিরে।

‘‘‘বিশাল এক জনতা আন্দোলিত হ”িছল ওটার সামনে,
   মানুষের দল ভিড় করেছিল ওটাকে ঘিরে।
আমি উঠিয়েছিলাম ওটাকে ও রেখেছিলাম তোমার পদতলে,
  এক স্ত্রীর মতো [আমি ভালোবেসেছিলাম] ওটাকে, করেছিলাম আলিঙ্গন সোহাগভরে।
[এবং তুমি, মা আমার, তুমি] ওটাকে করেছো আমার সমকক্ষ।’’

‘গিলগামেশের মা ছিলেন চালাক ও জ্ঞানী,
  সব কিছুতে পারদর্শী, তিনি তাঁর পুত্রকে বলেন -
বুনো-গাভী নিনশান ছিলেন চালাক ও জ্ঞানী,
  সব কিছুতে পারদর্শী, গিলগামেশকে বলেন তিনি:

‘‘‘পুত্র আমার, যে কুঠারটি দেখেছিলে তুমি তা এক বন্ধু,
  এক স্ত্রীর মতো ভালোবাসবে তুমি ওকে, সোহাগভরে আলিঙ্গন করবে,
এবং আমি, নিনশান, ওকে করবো তোমার সমকক্ষ।
  এক মহাশক্তিমান সঙ্গী আসবে তোমার কাছে, এবং ওর বন্ধুত্বের ত্রাণকর্তা হবে তুমি।
স্থলভূমিতে সবার চেয়ে পরাক্রমশালী সে, সে ধারণ করে এক মহাশক্তি,
  অন্তরীক্ষ হতে আসা এক উপলখ-ের মতো তার শক্তিমত্তা।’’

‘‘গিলগামেশ বলে ওকে, ওর মাকে,
  ‘‘ঘটুক তবে ওটা আমার প্রতি, আমার মা, দাও উপদেশক এনলিলের
আদেশ!
  উপদেশ দেয়ার জন্য একজন বন্ধু পেতে দাও আমাকে,
আমি আহরণ করবো এক বন্ধু যে উপদেশ দেবে আমাকে।’’

‘[এভাবে গিলগামেশ] দেখেছিল ওর স্বপ্নগুলো।’
  [এরপর] শামহ্যাত বলেছিল এনকিদুকে গিলগামেশের স্বপ্নগুলো,
অতপর ওরা দুজনে [শুরু করে] ভালোবাসার জয়যাত্রা।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)