করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৭ বর্ষ ০১ সংখ্যা
আগস্ট ২০২৪

লেখক-সংবাদ :





গযল্‌ কবিতা ও গান
ওমর শামস

১. ইতিহাস : কবিতার গযল্‌
গযল্‌-এর পূর্বসুর আরবী প্রাগ-ইসলামী ‘কাসিদা’ কবিতায় , যে-গুলোতে প্রতি দু-লাইনে অন্ত্যমিল থাকতো।  বাগদাদে উমাইয়াদ, আব্বাসী আমলে ‘কাসিদা’ থেকে গযল্‌-এর রূপান্তর ঘটে।  ইরানে প্রথম গযল্‌ লেখেন রুদাকী (৮৫৮ - ৯৪১)। শাদী, হাফিয, রুমী এঁরা সবাই গযল্‌-এর সার্থক সৃজক।  সুলতানী আমলে ভারতবর্ষে, আমীর খুসরো গযল্‌ লিখেছিলেন ফার্সিতে ১৩ শতকে। তাঁর একটি গযল্‌ :   
 
খাবারম্‌ রসীদ ইম শব্‌ কে নিগার খাহি আমাদ
স’রে মান ফিদায়ে রাহে কে সওয়ার খাহি আমাদ।
 
বা লাবাম্‌ রসীদ জানুম, তো বেয়াকে জিন্দা মানুম
পাসাঁ জাকে মান্‌ মা মানুম পাচকারি খাহি আমাদ।
                                     [ আমীর খুসরো ]

https://www.youtube.com/watch?v=znqIs58gQUs
//  আমীর খান, তারানা – [ যাতে আমীর খুসরোর গযল্‌ অন্তরা হিশাবে ব্যবহার হয়েছে, ১ মিনিট থেকে ]
 
গযল্‌ একটি লিরিক, গীতি কবিতা যার প্রধান বিষয়ই প্রেম, প্রেম সম্পর্কিত যদ্যপি অনুভূতি। এর বাইরেও বিষয় আছে, তবে সবই আত্মানুভূতি। ভারতবর্ষে উর্দুতে গযল্‌-এর প্রভূত চর্চা মীর তকী মীর থেকে মীর্জা গালিব  বেয়ে ফইয়াজ আহমেদ ফইয়াজ এবং তার পরে একালে চর্চিত।
 
কোই উম্মিদ বর্‌ নেহিঁ আতি
কোই সুরত্‌ নযর্‌ নেহিঁ আতি
 
আগে আতি থি হালে দিল্‌ পর্‌ হাসি,
আব্‌ কিসি বাত পর্‌ নেহিঁ আতি।
 
হম্‌ ওহাঁ হ্যায়, যাঁহা সে হমকো ভি
কুছ্‌ হমারি খবর্‌ নেহিঁ আতি।
 
কাবা কিস্‌ মু সে যাও গে গালিব,
শরম্‌ তুম কো মগর্‌ নেহিঁ আতি।
                              [ মীর্জা গালিব]
 
২. ফর্ম :
গযল্‌ একটি কবিতার ফর্ম। এটি বুঝতে ‘রাদিফ’, ‘কাফিয়া’, ‘মাত্‌লা’ , ‘মাক্‌তা’ – এই সংজ্ঞা গুলো জেনে নিতে হবে।
১) গযল্‌ ২- লাইন, ২-লাইন করে হয় – ৫ থেকে ১৫ টি ২-লাইনের ‘শের’। প্রতিটি শের-ই এক একটি আলাদা স্বয়ম্ভর অর্থপূর্ণ কবিতা।
২) ‘রাদিফ’ :  প্রথম ২-লাইনের অন্ত্যমিলে যে শেষ শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন কবি। ২য়, ৩য় … শের-এর প্রত্যেকটির ২য় লাইনে একই অন্ত্যমিল বা ‘রাদিফ’ ব্যবহার হয়।  ১ম শের – ক,ক // ২য় শের –খ,ক // ৩য় শের – গ,ক – এভাবে চলতে থাকে। উদাহরণ : গালিব-এর কবিতায়, ‘নেহিঁ আতি’।
৩) ‘কাফিয়া’ : ‘রাদিফ’-এর আগের একটি শব্দ বা শব্দাবলী যা প্রত্যেক ‘রাদিফ’-এর আগে বসে। এভাবেই গযল্‌-এর ছন্দ রচিত হয়। ‘কাফিয়া’ সমেত ‘রাদিফ’-কে মিল সম্পন্নকারী ধুয়া হিশেবেও বিবেচনা করা যায়।  উদাহরণ : গালিব-এর কবিতায়, ‘পর্‌’, ‘মগর্‌’, ‘বর্‌’।
৪) ‘মাক্‌তা’ : শেষ ২-লাইনের শের। এখানে কবির ‘ভনিতা’ বা ‘তাখাল্লুস’ দেয়ার রীতি।  উদাহরণঃ ‘কাবা   কিস্‌ মু সে যাও গে গালিব’।
৫) ‘মাত্‌লা’ : ‘মাক্‌তা’ বাদ দিয়ে অন্যন্য ২-লাইনের যে কোনো শের।  
৩. বাংলা গযল্‌ :
বাংলা ভাষায় গযল্‌-এর আমেজ ২০, ৩০-এর দশকে কাজী নজরুল ইসলাম নিয়ে এসেছিলেন। তবে তিনি কবিতা ফর্মের গযল্‌ ঠিক লেখেন নি। তিনি গীতি কবিতা লিখে গযল্‌ ফর্মের গান তৈরী করেছিলেন – সুর দিয়ে ‘তর্জা’ বা ‘বন্দিশ’ করেছিলেন যেগুলো আবুল কাসেম মল্লিক, আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা রেকর্ডে গেয়েছিলেন প্রচুর জনপ্রিয়তার সঙ্গে। [গানের গযল্‌ নিয়ে এখানে আমরা আলোচনা করবো না। ] নজরুলের একটি গযল্‌ গানের কাব্য :

ভুলি কেমনে আজো যে মনে বেদনা-সনে রহিল আঁকা ।
আজো সজনী দিন রজনী সে বিনে গণি তেমনি ফাঁকা ।।
আগে মন করলে চুরি, মর্মে শেষে হান্‌লে ছুরি,
এত শঠতা এত যে ব্যথা তবু যেন তা মধুতে মাখা ।।
চকোরী দেখলে চাঁদে দূর হতে সই আজো কাঁদে,
আজো বাদলে ঝুলন ঝোলে তেমনি জলে চলে বলাকা।।
বকুলের তলায় দোদুল কাজল মেয়ে কুড়ায় লো ফুল,
চলে নাগরী কাঁখে গাগরী চরণ ভারি কোমর বাঁকা।।
তরুরা রিক্ত পাতা, আসলো লো তাই ফুল বারতা,
ফুলেরা গ’লে ঝ’রেছে ব’লে ভ’রেছে ফলে বিটপী শাখা।।
ডালে তোর হান্‌লে আঘাত দিস্‌ রে কবি ফুল-সওগাত,
ব্যাথা-মুকুলে অলি না ছুঁলে বনে কি দুলে ফুল-পতাকা ।।
 
গীতি কাব্যটি ঠিক গযল্‌ ফর্মে নয়, যদিও ২-লাইন, ২-লাইন অন্ত্য-মিলে লেখা। রাদিফ, কাফিয়া এখানে নেই। নজরুল এটি এবং এই জাতীয় কাব্যকে গানের গযল্‌ ফর্মে গাইয়েছিলেন ইন্দুবালা, আঙ্গুরবাল-কে দিয়ে। তাঁর নিজের গলায় গাওয়া একটি চমৎকার গযল্‌ আছে, ‘পাষাণের ভাঙালে ঘুম’। গানের গযল্‌ নিয়ে পরে লেখার ইচ্ছা আছে। ভয়ে-ভয়ে বলি, সম্প্রতি আমি দু-একটি গযল্‌ বাংলায় লিখেছি, রাদিফ, কাফিয়া, মাত্‌লা, মাক্‌তা-র কানুন মেনে। নিচে একটি প্রকাশিত হলো :
ঘুমের গয্‌ল্‌
 
মুঠো ভ’রে জিব্রাইল যখন আনলো মাটি, কেন আল্লা দিলেন দিয়ে ঘুম ?
দুনিয়ার বাইরেও দুনিয়া যে আছে, মানুষ জানুক - দিয়ে ঘুম।
 
পাতার ঝরার দিন চৈত্রে । আমিও উড়ছি বালি-রোদে,
ছাদেতে দুলিয়ে দিয়ে নিলাম্বরী শাড়ি, তুমিও দিচ্ছো মেয়ে ঘুম।
 
জ্বলন্ত জেগে থেকে কত শিশু ম’রে গ্যালো – ইরাক ফিলিস্তিনে চীৎকারে,
জাগিয়ে মারলে কেন ? ওদের আগেই কেন, হায়!,  দাওনি পাড়িয়ে ঘুম?
 
প্রাণান্ত জীবনের গদ্য ছেঁকে-ছেঁকে কবিতা লিখবে বলে,
খোয়াবেরে চেয়ে । তবু কবি পায় নাই চেয়ে-চেয়ে ঘুম!
 
করমচা পড়লো-রে! হঠাৎ বাঁকিয়ে গ্রীবা দিলে তুমি চুম,
উড়ে গ্যালো কাক, কা কা ডাক - ওমরের ভেঙে দিয়ে ঘুম।
 
                                         [ ওমর শামস ]
 
৪. আন্তর্জাতিক ভাষায় গযল্‌ :
গযল্‌ শুধু ফার্সি, উর্দুতেই সীমিত নয়। গ্যয়টে  উনিশ শতকে পারস্যের কবিতা অনুবাদ করেছিলেন, যার মধ্যে গযল্‌ ছিলো। Friedrich Rückert (১৭৮৮ -১৮৬৬) এবং  August Graf von Platen (১৭৯৬ -১৮৩৫)    এর প্রভাব ও মাধ্যমে জার্মান ভাষায় গজল লিখেছিলেন, যেমন নীচেরটি যাতে রাদিফ, কাফিয়া, ২-লাইন করে শের সম্মত আছে।
 
Wohl mir, es heilte die liebende Hand mich,
Die mit balsamischem Blatte verband mich;
 
Als mich in Flammen umdrohte Verzweiflung,
Deckte des Glaubens asbesten Gewand mich;
 
Irrend durchstrich ich das waldige Dickicht,
Doch Philomele, die zärtliche, fand mich;
 
Sterbend im Ozean schwamm ich,
der Delphin Segelte ruhig ans blumige Land mich;
 
Schlüpfrigen Höhen entglitt ich zum Abgrund,
Aber die Rebe des Berges umwand mich.
                                      [ August Graf von Platen ]
 
ইংরেজি ভাষায়, আগা শহীদ আলী (১৯৪৯-২০০১), যিনি কাশ্মীরে  জন্মেছিলেন  অনেক সফলতার সঙ্গে গযল্‌ লিখেছেন। অন্যান্যরাও, জন হল্যান্ডার (John Hollander), ম্যাক্সিন কুমিন (Maxine Kumin ), ডব্ল্যু এস মারুইন (W. S. Merwin ) – এঁরা গযল্‌ লিখেছেন।  আগা শহীদ আলী-র একটি গযল্‌,
Even The Rain  
What will suffice for a true-love knot? Even the rain?
But he has bought grief's lottery, bought even the rain.
 
"our glosses / wanting in this world" "Can you remember?"
Anyone! "when we thought / the poets taught" even the rain?
 
After we died--That was it!--God left us in the dark.
And as we forgot the dark, we forgot even the rain.
 
Drought was over. Where was I? Drinks were on the house.
For mixers, my love, you'd poured--what?--even the rain.
 
Of this pear-shaped orange's perfumed twist, I will say:
Extract Vermouth from the bergamot, even the rain.
 
How did the Enemy love you--with earth? air? and fire?
He held just one thing back till he got even: the rain.
 
This is God's site for a new house of executions?
You swear by the Bible, Despot, even the rain?
 
After the bones--those flowers--this was found in the urn:
The lost river, ashes from the ghat, even the rain.
 
What was I to prophesy if not the end of the world?
A salt pillar for the lonely lot, even the rain.
                                           [ Aga Shahid Ali ]
 
স্পানীশ ভাষায়, ফেদেরিকো গারথিয়া লোরকা গযল্‌ লিখেছিলেন।  একটি নীচে,
Gacela del Amor
Nadie comprendía el perfume  de la oscura magnolia de tu vientre.
Nadie sabía que martirizabas  un colibrí de amor entre los dientes.
 
Mil caballitos persas se dormían  en la plaza con luna de tu frente,
mientras que yo enlazaba cuatro noches  tu cintura, enemiga de la nieve.
 
Entre yeso y jazmines, tu mirada  era un pálido ramo de simientes.
Yo busqué, para darte, por mi pecho  las letras de marfil que dicen siempre.
 
Siempre, siempre: jardín de mi agonía,  tu cuerpo fugitivo para siempre,
la sangre de tus venas en mi boca,  tu boca ya sin luz para mi muerte. 
                                  [ Federico Garcia Lorca ]
 
যার অনুবাদ  নিচে দেয়া হলো। লোরকা-ও গযল্‌-এর মৌলিক ফর্ম মেনে চলেন নি। 
 
No one understood the perfume of the dark magnolia of your womb.
Nobody knew that you tormented a hummingbird of love between your teeth.
 
A thousand Persian little horses fell asleep in the plaza with moon of your forehead,
while through four nights I embraced your waist, enemy of the snow.
 
Between plaster and jasmins, your glance was a pale branch of seeds.
I sought in my heart to give you the ivory letters that say "siempre",
 
"siempre", "siempre" : garden of my agony, your body elusive always,
that blood of your veins in my mouth, your mouth already lightless for my death.

৫. ইতিহাস : গানের গযল্‌
গযল হিশেবে কবিতার আলোচনা উপরে করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে – আরব, তুরস্ক, পারস্যে গজল  তাদের “মোকাম” রীতির মাধ্যমে গাওয়া হতো। নিচের ফার্সি গযল-এর রেকর্ড শুনুন।

https://www.youtube.com/watch?v=Ded4YJwpOyI //

নিচের রেকর্ডটি  মধ্যপ্রাচ্যর বাঁশী, “নাই” –এর, যার মধ্যেও টপ্পা অঙ্গের বিস্তার আছে।

https://www.youtube.com/watch?v=Lz6_cnpa8cY&index=26&list=RDDed4YJwpOyI //নাই [বাশী]

এই রীতিকে দেখে শুনে এবং আগত গায়কদের পারস্পারিক আদান প্রদানের মাধ্যমে ভারতবর্ষে এক কিছুটা অন্য ধারার গযল গাওয়ার চলন হয়। দিল্লীর নিজামুদ্দিনের দরগায় কাওয়াল বাচ্চেদের মাধ্যমে ফার্সি রীতির আমীর খুস্ররর গযল তারানা অঙ্গে গাওয়া হত। কিন্তু ক্রমে-ক্রমে বাহাদুর শাহ জাফরের আমল থেকে উর্দু কাব্যর আওতায় দরবারের উস্তাদরা উর্দু গযল গাওয়ার স্টাইল প্রবর্তন করেন। দিল্লীতে মীর তকী মীর  (১৭২৩–১৮১০), দাগ দেহ্‌লভী  (১৮৩১-১৯০৫), মীরজা গালিব (১৭৮৭–১৮৬৯), বাহাদুর শাহ্‌ জাফর ( (১৭৭৫–১৮৬২) এঁদের ঐতিহ্যে এক গযল কাব্যধারা সৃষ্টি হয় যা আরবী-ফারসী-তুরকী কাব্যধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও ভারতবর্ষীয় নিজস্বতায় সমাসীন।

দিল্লী দরবারের নিজস্ব ঐতিহ্যে উস্তাদরা গযল কাব্যকে এক নতুন সুর-তালের ট্র্যাডিশনে পেশ করা শুরু করেন। বাদশাহ মোহাম্মদ শাহ এর পরে বিভিন্ন উস্তাদরা দিল্লী থেকে লখনউ এবং হায়দারাবাদে ছড়িয়ে পড়েন। এর পর থেকে বিভিন্ন খেয়াল ঘরানার উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশীয় রাজসভায় গযলের প্রচার ঘটে। বিশেষ করে উস্তাদরা মহিলা বাই গায়িকাদের এই বিদ্যায় শিক্ষা দেন। ধ্রুপদীয়া এবং খেয়ালিয়ারা গযল গানকে  সংগীতে হাল্কা মনে করেন ও করতেন। তাই নিজেরা জানলেও, শেখালেও গাইতেন না। 

এটা মূলত সত্য হলেও, আমূল নয়। বাহাদুর শাহ-এর দরবারের প্রধান গায়ক, উস্তাদ তানরস খান বা কুতুব বক্স খেয়ালীয়া হয়েও কখনো সখন গযল গাইতেন। এটা অবশ্যই বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর-এর জন্য, যিনি নিজে গযল রচনা করতেন।

খেয়ালে সঙ্গীত কথা ও  কাব্যকে উত্তীর্ণ করে প্রায় ৩০-৬০ মিনিটের আওতায় একটা সুরের [কখনো তালের] বিমূর্ত রূপ দ্যান উস্তাদরা। কিন্তু স্বল্প সময়ের প্রেক্ষায় কবিতা এবং সুর-তালের এক ধরণের মিল উস্তাদরা গযল গানের মধ্যে তৈরী করেন। ২০ শতকের শুরুতে যখন গ্রামোফোন নামলো, ভারতীয়রা রেকর্ডের মাধ্যমে এই উৎকর্ষের উদাহরণ পেলেন অন্তত ধনী বাড়িতে।

শুনেছি, ঘরোয়াভাবে উস্তাদ আমীর খান গযল গাইতেন। রেকর্ডের কল্যাণে ১৯০৫ সনে রেকর্ড করা উস্তাদ আব্দুল করিম খানের একটি গযল আছে। শুনুনঃ

https://www.youtube.com/watch?v=g59E4OWmNtM&index=1&list=PL3B80BC9D53104298           // আব্দুল করিম খান

১৯০৪ থেকে ১৯৪০ অবধি যে গযলের চলন ছিল, তাতে গওহর জান, মোহাম্মদ বাঁদি থেকে বেগম আখতার, কুন্দন সায়গল পর্যন্ত একটা রূপ পয়া যায়।

গযলে কেউ কেউ কাওয়ালি অঙ্গের তান এবং ছন্দের কাজ করতেন। আবার যেমন, গওহর জান এর গানে, একটু খেয়াল শৈলীর তান দেখা যায়। তবে, ৫-৭ মিনিটের গানে সুর এবং তালের একটি বিশিষ্ঠ গ্রন্থনা উস্তাদ্ রা তৈরী করেন। সুর এবং কবিতার গ্রন্থনা ও বিস্তারের কাজ থাকে আবার লয়ের ঠা-দুন, মানে দিগুণ লয়ে পরিবেশনের অংশ থাকে।

১। https://www.youtube.com/watch?v=Y_oxjFMmWrM    //  গওহর জান [১৯০৫]

বেগম আখতার ফয়জাবাদী, ১৯২০ এর দিকে আত্মপ্রাকাশ করেন।  বোল-আদায়ীর একটি বিশিষ্ট স্টাইল তাঁর ছিল। আবার পাটিয়ালা ঘরানার উস্তাদ বরকত আলী খান তাঁর নিজস্ব হরকৎ-ফান্দা সহ অন্য আরেকটি অতুলনীয় স্টাইল নিয়োগ করেন। 

৩। https://www.youtube.com/watch?v=6XAfqFzZSQU    //  বেগম আখতার

৪। https://www.youtube.com/watch?v=W65A2OgG8c0   //  বেগম আখতার [ভিডিও]

৫। https://www.youtube.com/watch?v=i-UfnqAfHFI              //  বরকত আলী খান 

৬। https://www.youtube.com/watch?v=VVwcSDOOmVQ  //  বরকত আলী খান  
  
৭। https://www.youtube.com/watch?v=dzv-k48gjuM          //   রওশন আরা বেগম   

গানের জটিলতা ও জনপ্রিয়তা

একটি গযল গান শুনুন – “নুক্তাচিঁ হ্যায় গমে দিল”। নুক্তাচিঁ মানে দুঃখজনিত। মন এতই দুঃখজনিত যে কি আর কথা বলবে। যেটা লক্ষ্য করারা সেটা ৩ জনের গায়কী। জদ্দান বাই ফিল্ম নায়িকা নার্গিসের মা। তিনি পেশাদার বাই বা “তাওয়াইফ’ ছিলেন। কী চমৎকার মুড়কি-ফন্দা মিশ্রিত গান্টি গেয়েয়েছেন। সায়গল একটু জনপ্রিয় আগ্রা ঢঙ্গে পেশ করেছেন। ফিল্মী নায়িকা-গায়িকা সুরাইয়া যে ভাবে গেয়েছেন সেটা ফিল্মী ঢং কিন্তু বহু শ্রোতার খাদ্য।

২। https://www.youtube.com/watch?v=kiGN2HACtKc     // জদ্দান বাই [ নুক্তাচিঁ হ্যায় গমে দিল্‌ ] 

৩। https://www.youtube.com/watch?v=YS4JVe0d79o         //  কুন্দন সায়গল [নুক্তাচিঁ হ্যায় গমে দিল্‌ ] 
 
৪। https://www.youtube.com/watch?v=L2Yvfu-nk9s      // সুরাইয়া    [ নুক্তাচিঁ হ্যায় গমে দিল্‌ ]  

বাংলা গযল
কাজী নজরুল ইসলাম বাকায়দা উস্তাদী গান শিখেছিলেন। তিনিই বাংলায়  গযল অঙ্গের গান রচনা এবং সুর করেন। তিনি নিজে গেয়েছিলেন। পরে আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা গেয়েছিলেন। এটা একটা স্বতন্ত্র বিষ্য, বহুল আলোচনার দাবীদার। নিচের রেকর্ডটি নজরুলের নিজের কন্ঠে।
১। https://www.youtube.com/watch?v=Jt1yNa_d7Vw     //  কাজী নজরুল ইসলাম
২। https://www.youtube.com/watch?v=krJmpcGLbjM      // আঙ্গুরবালা [ আসিলে এ ভাঙ্গা ঘরে // নজরুল ইসলাম]
৩। https://www.youtube.com/watch?v=JlpZuege5s4     // ইন্দুবালা [ মোর ঘুম ঘরে ]