করোনা ঝুঁকিতে শীর্ষে ঢাকার বাসাবো, আর আমি এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। তাই- বাসা ছেড়ে পালাবার কোন পথ নেই। তবে পালাবার সুযোগ থাকলে কি পালানো যেত? এই লেখাটি লিখবার ফুরসতই পাইনি কাজের চাপে। আমার কাজ অনলাইনে। তাই যেখানেই কম্পিউটার সেখানেই আমার অফিস। বাসা নাকি বাসার বাইরে, তা বিবেচ্য নয়। এখন গৃহবন্দী, কিন্তু কাজ থেকে মুক্তি নেই। গত কয়টা দিন গেল কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের করোনা ডাটার আপডেট গ্রন্থনার কাজে।
লকডাউন হয়ে আছি, কিন্তু মন তো আনলক। সে উড়ে বেড়াতে চাচ্ছে। ক’দিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম: কাজের ফাঁকে যখন একটু বেশি সময় বের করতে পারি তখনই চলে যায় ফ্যামিলি পিকনিকে। বাসা থেকে মাত্র ১০/১৫ মিনিটের পথ, গাছপালা ঘেরা সবুজের সমারোহে- গ্রীন মডেল টাউনের এক পাশে। এখন বাসায় বসে ভাবি- এ রকম সময় আবার ফিরে পাবো তো!
এখন বাঁচার জন্যই গৃহ বন্দি, অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঘরে থেকে বাঁচার লাড়াই...
মনের ওপর নানা চাপ পড়ছে। যিনি মনোবিদ তারও কি চাপ পড়ছে না? তবু তিনি মানুষকে পথ দেখাচ্ছেন যেন মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে না পড়ে। চিকিৎসকদের কি সংক্রমণের শঙ্কা নেই? আছে। তাই বলে কি তারা করোনা রোগীর চিকিৎসা করবেন না? নিশ্চয়ই করবেন। সত্যি বলতে কি তারাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন ডাক্তারের মৃত্যু সংবাদ আমাদের শোকাহত করেছে। সামনের দিনগুলো আমাদের জন্যে কী সঞ্চিত রেখেছে আমরা জানি না। কিন্তু আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব, তাই আমাদের ভেঙে পড়লে চলে না। মনকে শক্ত করা চাই। স্বাস্থ্যবিধি মানুষ মানছে, ঘরে থাকার নির্দেশনা শুনছে। অত্যন্ত সংক্রামক এই কোভিড-১৯ রোগটি সমগ্র বাংলায় হানা দিয়েছে। এরই মধ্যে চলে আসবে বাংলা নতুন বছর। এসো হে বৈশাখ গানটি আমরা ঘরেই গাইবো। আর মনের শক্তি সঞ্চয় করবো সংকট থেকে উত্তরণের।
আশ্চর্য এক শবেবরাত এলো। এমনটি আগে কখনো আসেনি। একাত্তরের শবেবরাত কেমন ছিল জানি না। তখন আমার জন্মই হয়নি। কিন্তু এমন নিশ্চয়ই ছিল না যে মানুষ মসজিদে যেতে পারছে না পরম করুণাময়ের উদ্দেশে প্রার্থনা জানাতে। এখন ঘরই হয়ে উঠেছে উপাসনালয়, লকডাউনে এই আনলক মনের বেঁচে থাকার একমাত্র ঠিকানা।