এ বছর সাহিত্যে যেহেতু কেউ নোবেল পুরস্কার পাননি ফলে গত বছরের শক্তিশালী ফিকশন লেখক নোবেলজয়ী কাজুও ইশিগুরো এখনো পাঠকের আগ্রহের শীর্ষেই রয়ে গেছেন। অবশ্য ২০১৮ সালে ম্যান বুকার প্রাইজ পাওয়া অ্যানা বার্নসের ফিকশন ‘মিল্কম্যান’ নিয়েও পাঠকের বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। মিল্কম্যানে তিনি যে ভাষায় গদ্যের বর্ণনা করে গেছেন তা পাঠকের জন্য অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতাই বলা যেতে পারে। তাই ‘উপন্যাসের দিন ফুরিয়ে গেছে’ বলে যেসব গুজব সৃষ্টিকারী গত কয়েকবছর ধরে হাঁকডাক করে বেড়াচ্ছিল, তাদের অবাস্তব উক্তিগুলো উড়িয়ে দিয়ে জাপানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, গল্পকার এবং বিজ্ঞান লেখক কাজুও ইশিগুরো ২০১৭ সালে তার অসাধারণ আবেগীয় উপন্যাসসমূহের জন্য সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান নোবেল পুরস্কারটি তার ঝুলিতে ভরে নিয়েছেন। তার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি সম্পর্কে সুইডিশ একাডেমির প্রেস রিলিজে বলা হয় যে, ‘কাজুও ইশিগুরো সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পিছনে রয়েছে তার এমন একটি ক্ষমতা যা দিয়ে তিনি মানব মনের গভীরতম উপলব্ধিকে অবলোকন করতে পারেন । তিনি তার আবেগীয় শক্তিতে ভরপুর উপন্যাসগুলোর মাধ্যমে বিশ্বের সাথে অলীক জগতের সম্পর্কের অন্তরালের নিমজ্জিত সত্তাকে উন্মোচন করেছেন।’ ‘ইশিগুরোর সাহিত্য হচ্ছে এমনই যা কাফকা ও জেন অস্টিনের লেখনশৈলীর সমন্বয়ে তৈরি এক নতুন লেখনশৈলী । যেখানে আপনি মেশাতে পারেন আরও কিছুটা মার্সেল প্রাউস্ট (ফ্রেঞ্চ নভেলিস্ট) আর তাহলেই পেয়ে যাবেন ইশিগুরোকে’- ইশিগুরোর লেখা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুইডিশ কমিটির মহাসচিব সারা দানিউস এভাবেই তা বর্ণনা করেছেন ।
ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, গল্পকার এবং বিজ্ঞান লেখক কাজুও ইশিগুরো, ১৯৫৪ সালের ৮ নভেম্বর জাপানের নাগাসাকিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের নয় বছর আগে এই নাগাসাকিতেই ঘটেছিলো পারমানবিক হামলার মতো একটি জঘন্যতম অপরাধের ঘটনা । মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার পরিবারের সঙ্গে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে আসেন।
একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে কাজুও ইশিগুরোকে বুঝতে হলে আমাদেরকে প্রথমেই তার সেই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অবহিত হতে হবে যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমরা এমন একটি সময়ের খুব কাছে পৌঁছে যাচ্ছি যখন আমরা কিছু মানুষ অন্য মানষদের থেকে উন্নততর মানুষ বানাতে সক্ষম হবে। নবকারিগরি দক্ষতা আমাদের মৌলিক মূল্যবোধকে নস্যাৎ করে দেবে যদি না আমরা বিজ্ঞানের সাথে এখনই সংযুক্ত হতে না পারি। আমরা আসলে এমন একটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট সমাজের কথা কল্পনা করতে পারি, যেখানে অভিজাত নাগরিকরা জৈবপ্রকৌশল প্রযুক্তির কারণে অধিকতর চৌকস,স্বাস্থ্যবান এবং দীর্ঘজীবী হবে। আর নিন্মস্তরের মানুষেরা হবে গড়পড়তা সাধারণ ও দুর্বল।’
এটি শুনে মনে হতে পারে যে আমি কোন ভীতিকর উপন্যাসের কথা বলছি। কিন্তু ব্রিটেনের জনপ্রিয়তম লেখকের মতে এই বিশ্ব আসলে এমনই একটি দৃশ্যের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। কাজুও ইশিগুরো যুক্তি দেখিয়েছেন, ‘ক্রিস্পর’ (ঈৎরংঢ়ৎ) প্রযুক্তি দ্বারা জীন বা প্রাণ-কোষ সম্পাদনার মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থায় অনিবার্য যে পরিবর্তন আসবে তা প্রতিষ্ঠিত মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
কাজুও ইশিগুরো প্রথমে যুক্তরাজ্যের সারে শহরের স্টটটন প্রাথমিক স্কুলে এবং তারপর উইকিং কাউন্টি গ্রামার স্কুলে পড়ালেখা শেষ করেন। স্কুল শেষ করার পর তিনি প্রায় একবছর প্রচলিত পড়ালেখা বন্ধ রেখে ইউএসএ ও ক্যানাডাতে ঘুরে বেড়ান । এরপর যুক্তরাজ্যের কেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭৮ সালে ইংরেজি ও দর্শনশাস্ত্রে ব্যাচেলর ডিগ্রী নেন এবং ইস্ট এঞ্জলিয়া থেকে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর উপর ১৯৮০ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন । ১৯৮২ সালে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান। এবং এরপর থেকে তিনি ব্রিটেনেই বসবাস করতে আসছেন। জাপান থেকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে আসার পর ৩৮ বছর বয়সে তিনি প্রথমবারের মতো একটি সাহিত্যসভায় যোগ দেওয়ার জন্য জাপান সফরে যান।
ইশিগুরো তার বাবা সিজুও ইশিগুরো সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন , ‘আমি যখন অতীতের দিকে তাকাই আমি দেখতে পাই যে বাবা তার নিজের কাজের প্রতি পুরোপুরি সেই দৃষ্টিভঙ্গিটি ধরে রেখেছিলেন ঠিক যেমন ছিল একজন লেখক হিসেবে আমার কাজের প্রতি আমারও দৃষ্টিভঙ্গি। বাবা আমার জীবনের মডেল কারণ তিনি তার কাজকে কখনই শুধুমাত্র তার পেশা হিসেবে দেখেননি। বরং তিনি তীব্রভাবে সবসময় কাজটিকে উপলব্ধি করতেন।
সমকালীন ইংরেজিভাষী বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কল্পকাহিনী লেখক হিসেবে ইশিগুরোকে গণ্য করা হয়ে থাকে। কারন এ পর্যন্ত তিনি চার চারবার ম্যানবুকার প্রাইজ উইনিং এ মনোনয়ন পেয়েছেন এবং ১৯৮৯ সালে অবশেষে তিনি তার উপন্যাস ‘দ্য রিমেইন্স অফ দ্য ডে’ এর জন্য পুরস্কৃত হন । তার ৭ টি উপন্যাস প্রায় ৪০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০০৮ সালে দি টাইম ম্যাগাজিনের জরীপে ১৯৪৫ পরবর্তী ৫০জন বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখকদের মধ্যে তার অবস্থান হচ্ছে ৩২তম । ২০০৫ এ লেখা তার ‘ নেভার লেট মি গো’ উপন্যাসটি বছরের সেরা উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো। ৬২ বছর বয়সী এ লেখকের বিখ্যাত দুটি উপন্যাস 'দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে' ও 'নেভার লেট মি গো' অবলম্বনে বিখ্যাত দুটো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
তার মতে “আমরা এমন এক স্থানে যাচ্ছি যেখানে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্মিত আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থা সহসা অকার্যকর হয়ে পড়বে। যদিও উদারনৈতিক গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বাস করি, মৌলিকভাবে সব মানুষ সমান। কিন্তু আমরা এমন একটি স্তরে পৌঁছে যাচ্ছি যেখানে বস্তুতঃ আমরা এক ধরনের উন্নততর মানুষ সৃষ্টি করতে পারবো বলে মনে করি। সেখানে সাম্য বলে কিছু আর থাকবে না ”
নোবেল প্রাপ্তির পর তিনি তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন যে , ‘ এটি আমার জন্য একটি বিরল সম্মাননার ব্যাপার কারণ এর মাধ্যমে আমি শ্রেষ্ঠ লেখকদের সাথে এক কাতারে দাঁড়াতে পেরেছি । যা ভূয়সী প্রশংসার দাবী রাখে।’ পৃথিবীটা এখন খুবই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে আর আমি আশা করি যে এই মুহূর্তে পৃথিবীর জন্য সমস্ত নোবেল পুরষ্কারই ইতিবাচক শক্তি হিসেবে ভুমিকা রাখতে পারে । আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হবো যদি এবছর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমি ইতিবাচক কোন অবদান রাখতে পারি। তিনি আরও বলেন, "আমরা এখন আরও বেশী বহুবিধ সাংস্কৃতিক এবং অনেক বেশি বিশ্বজনীন হয়ে উঠেছি, কিন্তু শরণার্থী সংকটের ব্যাপাটিকে একেবারেই ভিন্ন মতামত বলে মনে করি। যেভাবে আমি ব্রিটেনের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হই তা থেকে সেটা একেবারেই ভিন্ন।"
১৯৮২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘অ্যা পেইল ভিউ অফ হিলস’ প্রকাশিত হয়। এটি সেসময় উইনিফ্রেড হল্টবাই মেমোরিয়েল পুরষ্কার পেয়েছিলো। একজন মধ্যবয়সী নিঃসঙ্গ জাপানি নারীর ভিন্ন দেশের মাটিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার সংগ্রামের কাহিনী এখানে বর্ণনা করে হয়। জাপান থেকে ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সংসার করতে আসলে এটসুকো সাথে করে নিয়ে আসে তার জাপানি স্বামীর ঘরের মেয়ে কেইটোকে সাথে নিয়ে আসে । কিন্তু ইংল্যান্ডে এসে কেইটো ভীষণভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পরে এনং একসময় সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এই উপন্যাসটির জন্য ফাবের এন্ড ফাবের প্রকাশনী থেকে তাকে ১০০০ ডলার এডভান্স হিসেবে দেওয়া হয়েছিলো।
সাহিত্য নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন - ‘ ঔপন্যাসিকরা আসলে তাদের আবিষ্কৃত জগতকে সম্পূর্ণ তাদের আয়ত্তের মধ্যে রেখেছে বলে মনে হতে পারে কিন্তু আসলে তারা যা করতে চায় তার জন্য তাদেরকে একটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কথাসাহিত্য প্রকৃতপক্ষে অতটা সহজসরল কোন ব্যাপার নয় যা আমরা আপাতদৃষ্টিতে দেখি।’
১৯৮৬ সালে তিনি তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ এন আর্টিস্ট অফ দ্য ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ড’ লেখেন। উপন্যাসটি জাপানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা। একজন বয়স্ক চিত্রশিল্পী মাসুজি অনো যে তার অতীতের দিকে ফিরে তাকায়। যুদ্ধের জন্য যার কাজের গতি ও সুনাম বাঁধাগ্রস্ত হয় এবং একসময় সে পুলিশের ইনফরমার হয়ে পড়ে। যুদ্ধ তার কাছ থেকে জীবনের সব কিছু কেড়ে নেয়। একানে আমরা দেখতে পাই, পরিবেশ যে মানুষের জীবনের কাজকে এবং গতিকে বাঁধাগ্রস্ত করে এবং দ্রুত সবকিছুর পরিবর্তন এনে দেয় । এই উপন্যাসে মূল বিষয় সেটাই। উপন্যাসটি সেসময় ‘ম্যান বুকার’ এ্যাওয়ার্ড এর শর্টলিস্টে ছিল এবং হুইটব্রেড বুক অফ দ্য এ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলো। আর এই সময়টিতে অর্থাৎ ১৯৮৬ সালে তিনি তার সমাজসেবী স্ত্রী লরনা ম্যাকডুগালের সাথে পরিচিত হন এবং পরবর্তীতে প্রেমাসক্ত হয়ে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। নাওমি নামে এ যুগলের একটি কন্যা সন্তান আছে।
কাজুও ইশিগুরো অনেকদিন থেকেই বলে আসছেন, তিনি যখন একটি শীতের উজ্জ্বল বিকেলে তার কটসউডের কুটিরটিতে বসে থাকেন, তখন তিনি তার উপন্যাসের একজন মানুষ এবং তার ঘোড়াকে দেখতে চান। অবশেষে তিনি তার সপ্তম উপন্যাস ‘দ্য বারিড জায়ান্ট’ এর প্রকাশনার সঙ্গে সঙ্গেই তার গন্তব্যপথ খুঁজে পেলেন। তিনি মজা করে বলেন যে, ‘ সেই একাকী পথিকই আমার জন্য সবসময় কাজ করে গেছে।
তার সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে লেখা সবচেয়ে স্মরণীয় উপন্যাসগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে, নেভার লেট মি গো । গল্পটিতে একটি কল্পিত সমসাময়িক ইংল্যান্ডের অন্ধকারাচ্ছন্ন ও নেতিবাচক বোর্ডিং এ বড় হয়ে ওঠা ছাত্রদের মধ্যকার প্রেম, বন্ধুত্ব ও বেদনাময় স্মৃতির জীবনচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তার অন্য একটি বিখ্যাত উপন্যাসটি হচ্ছে ‘ দি রিমেইন্স অফ দ্য ডে’। তিনি এটি ১৯৮৯ সালে লেখেন যা তাকে এনে দিয়েছিল বুকার প্রাইজের মতো সম্মাননা । ১৯৯৩ সালে এটিকে চলচ্চিত্রে রূপদান করা হয়। তিনি এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের পটভূমিতে এক ইংরেজ লর্ডের সেবায় নিয়োজিত একজন বিশ্বস্ত বাটলারের কাহিনী বর্ণনা করেছেন । উপন্যাসের প্রটোগনিস্ট স্টিভেন্স, লর্ড ডারনিংটনের একজন অনুগত বাটলার। কয়েকযুগ থেকে তিনি লর্ডের অধীনে কাজ করে চলেছেন, প্রকৃতপক্ষে কি উপায়ে একজন বিশ্বস্ত বাটলার হওয়া যায় সেটাই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ। এদিকে যুদ্ধ শেষ হয়ে যায় একসময় আর বাটলার স্টিভেন্স জানতে পারে যে তার লর্ড ডার্লিংটন ছিলেন একজন দেশদ্রোহী । আর সেটাই তার জন্য মনবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এভাবেই কাহিনীটি এগিয়ে যেতে থাকে।
১৯৯৫ সালে তিনি ‘ দ্য আনকন্সল্ড’ এবং ২০০০ সালে তার আরেকটি উপন্যাস ‘ হোয়েন উই ওয়ের অরফেন্স’ লিখেন। এটিও ম্যানবুকার পুরষ্কারে শর্টলিস্টে মনোনয়ন পেয়েছিলো।
তার সর্বশেষ উপন্যাসটি ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় যেটির নাম, ‘ দ্য বারিড জায়েন্ট’ । এখানে দেখানো হয় যে একটি বয়স্ক দম্পতি তাদের হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে খুঁজতে একজন নাইটের কাছে আসেন। উপন্যাসটিতে আমরা দেখি যে একজন তৃতীয় ব্যক্তি সম্পূর্ণ গল্পটি বর্ণনা করছেন । আধুনিক পাঠকদের কাছে তিনি গল্পের সময়কার রাস্তাঘাট এবং ঘরবাড়ির বর্ণনা দেন। উপন্যাসটির পটভূমি রাজা আরথার যুগের সময়কার ব্রিটেন। এখানে আরথারিয়ান ব্রিটেনের পরপরই স্যাক্সনেসদের ব্রিটন্স এর বর্ণনা করা হয়। শুরু থেকে এখানে অগারস নামক ফ্যান্টাসি চরিত্রদের দেখান হয়। স্যাক্সনদের গ্রামে থাকা অবস্থায় ভ্রমনের প্রথমরাতেই দম্পত্তিটি দুটি অগারস বন্ধু দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং এডউইন নামের ছেলেটি অপহৃত হয়। পূর্ব ফিনল্যান্ডের স্যাক্সন যোদ্ধা ইউস্ট্যান এডউইনকে উদ্ধার করে আক্রমণকারীদের মেরে ফেলেন। যদিও অগারসদের দ্বারা এডউইন ক্ষত হয়। এখানে ইশিগুরো সায়েন্স ফিকশন, জাদুবাস্তবতা আর ফ্যান্টাসির একটি পরাবাস্তব জগত তৈরি করে পাঠকদের অভিভূত করতে সমর্থন হন।
ইশিগুরো গীটার বাজিয়ে গান গাওয়া ছাড়াও অনেক ছোটগল্প এবং গান রচনা করেন । সেইসাথে তিনি লিখেছেন নানা চিত্রনাট্যও। তার চিত্রনাট্যগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার বিখ্যাত চিত্রনাত্রের মধ্যে রয়েছে ‘ দ্য স্যাডেস্ট মিউজিক অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘ দ্য হোয়াইট কাউন্টেস’ ।
ইশিগুরোর উপন্যাসগুলি প্রায়শই কোন নির্দিষ্ট সমাধান ছাড়াই শেষ হয়। তার উপন্যাসের চরিত্রদের সমস্যাগুলো অতীতে সমাধিস্থ হয় এবং অমীমাংসিত রয়ে যায়। এভাবেই ইশিগুরো তার বেশিরভাগ উপন্যাসগুলোকেই মর্মস্পর্শীভাবে শেষ করেন। তার গল্পের এই উপলব্ধিটি সান্ত¡না এবং মানসিক যন্ত্রণার মাধ্যমে শেষ হয়।
সাধারণত মনে করা হয় যে তার লেখায় জাপানি সাহিত্যের প্রভাব আছে যেখানে সান্ত¡না এবং মানসিক যন্ত্রণা যুগপৎ বৈশিষ্টের মাধ্যমে লেখাটি এগিয়ে যায়। ইশিগুরো মনে করেন তিনি তার লেখার ব্যাপারে ফ্রয়েড, দস্তোয়েভস্কি এবং মার্সেল প্রউস্ট দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন ।
যদিও সারাবিশ্বের সাহিত্যপ্রেমিদের কাছে কিছুটা অল্পচেনা নাম কাজুও ইশিগুরোর নোবেল প্রাপ্তি একটি সমূহ বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । তথাপি একথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে একজন যোগ্য কথাসাহিত্যিকই আসলে ২০১৭ সালে নোবেল পুরষ্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। যার অনন্য ভাষা শৈলী দিয়ে অগুনতি পাঠকের মন তিনি জয় করে নিয়েছেন।