ঈদ আমার কাছে পুনর্মিলনের এক উৎসব। ঈদকে সামনে রেখে দেশব্যাপী মানুষের যে সফর বা যাতায়াত তার মূল উদ্দেশ্য আপনজনের সঙ্গে মিলন। আপনজনকে কাছে টেনে নেয়ার জন্য ঈদ যেন এক উপলক্ষ। তবে দেশের বাইরে বসবাস করলে এই উৎসব-উপলক্ষ অনেক সময় দৈনন্দিন জীবনে কোনো পরিবর্তন আনে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ অন্য অনেক দিনের মতোই একটা দিন কেটে যায়; সামান্য পরিবর্তন ছাড়া যেন একই ছন্দে বয়ে চলা। আর মনে মনে ঈদ তখন হয়ে ওঠে স্মৃতিচারণের এক উপলক্ষ। শৈশব-কৈশোর থেকে তারুণ্য পর্যন্ত পরিবার আর সমসাময়িক বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কাটানো অনাবিল আনন্দের বহু ঈদের স্মৃতি দিনভর মনকে নাড়ায়। স্মৃতির চর্চা করতে করতে দীর্ঘ দূরত্বে বসে কোনো বিস্মৃত মানুষ হঠাৎ চোখের সামনে স্পষ্ট হয়। গত বছর দশেক ধরে আমার ঈদ কমবেশি এমনই। তবে ব্যাতিক্রম ঘটে, কখনো এখানকার কেউ পরিবারসহ উপস্থিত হয়, কখনো আমি যাই তাদের বাড়িতে, কখনো আবার হুট করে ঢাকা থেকে কেউ এসে হাজির হয়, যেন ঢাকার হইহল্লাসমেত আস্ত একটা ঈদ বয়ে আনে আমার জন্য।
তবে একা এবং দূরে থাকি বলে যে ঈদের দিনে মন খারাপ করে থাকি, তা নয়। ঈদ পেরোলে পরে আবার যখন দেশে ফিরি, দেশে থাকার সেই দিনগুলোই তখন আমার কাছে ঈদের মতো। আপনজনের সান্নিধ্য যে কোনো দিনকেই ঈদের মতো আনন্দময় করে তোলে।
যেহেতু একটি মুসলিমপ্রধান দেশ, মালয়েশিয়ায় গত দশ বছর ধরে থাকছি, তাই এখানকার ঈদ উৎসব থেকে নিজেকে দূরে রাখা কঠিন। ঈদ এখানে বেশ জাঁকজমক নিয়ে আসে। বহু ধর্মের লোকের বসবাসের কারণে ঈদসহ চাইনিজ নিউ ইয়ার, দিওয়ালি আর বৌদ্ধ পূর্ণিমার উৎসবও দেশজুড়ে উদ্যাপিত হয়। প্রতিটি উৎসবের নিজস্ব আবহ আর সাজসজ্জা আছে। প্রায় সবগুলোই ধর্মীয় উৎসব হলেও দেশব্যাপী মানুষের মধ্যে তার প্রতিফলন বা তা নিয়ে ব্যস্ততা দেখতে পাই। প্রবাসে বসে ঈদ পালন করতে করতে মালয়েশিয়ার ঈদের সঙ্গে বলতে গেলে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। নিজের দেশের মতো করে পালন না করতে পারলেও তাদের উৎসবের নিয়মকানুনের মধ্যে মিশে যেতে আনন্দ হয়।
ঈদকে মালয়েশিয়ায় বলে ‘হারি রায়া’ কিংবা ‘আইদুল ফিতরি’। আমরা যেমন বলি ‘ঈদ মোবারক’, তারা বলে ‘সালামত হারি রায়া’। আমাদের দেশের মানুষদের মতোই এখানকার লোকদের জীবনেও ঈদকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি দেখতে পাই। পুরো রোজার সময়টায় সেই প্রস্তুতি আরো বেশি চোখে পড়ে। শহরের রাস্তায়, দোকানপাটে লোকে লোকারণ্য। ইমারতগুলোর দিকে তাকালে দিনের এক তো রাতের আরেক সাজসজ্জা। আলোকসজ্জা এখানকার মানুষদের খুব পছন্দ। দিন পড়ে এলে তাই একই পরিচিত কিছু এলাকা ভিন্ন দেখায়, মনে হয় অচেনা কোনো রূপকথার রাজ্যে চলে এসেছি। উপশহর বা শহর থেকে দূরবর্তী এলাকায়ও একই দৃশ্য, আলো আর রঙের প্রাচুর্য। ঈদকে সামনে রেখে তারা নিজেদের বাড়িঘরও নানারকম বাতি দিয়ে সাজায়। আমাদের দেশে বিয়ে বাড়িতে যেমন ছোটো বাতি দিয়ে সাজানোর রীতি দেখতে পাওয়া যায়। তবে এখানে কেবল বাতির নকশা নয়, বাড়ির চারপাশে একের পর এক মশাল মাটিতে গেড়ে রাখা হয়। মশালগুলোর আগুনের জায়গায় একরকমের ইলেকট্রিক বাতি থাকে যা আগুনের শিখার মতো কেঁপে কেঁপে জ্বলে। দূর থেকে দেখতে অবিকল জলন্ত মশালের মতো। ঈদ এলেই দোকান থেকে মশাল কিনে এনে তারা বাড়ির চারদিকে খুঁটির মতো এক সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখে। এ ছাড়াও অনেক বাড়িতে সারি করে প্রদীপ জ্বালতে দেখি। প্রদীপে, মশালে আর ছোটো বাতির মিটমিট করা আলোয় একেকটা বাড়ি রাতের অন্ধকারে অপূর্ব একেকটা দ্বীপের মতো। ঈদের কয়েকদিন আগে-পরে তাদের এই আলোকসজ্জা অব্যহত থাকে। আমি সে সময়টায় আলোকসজ্জা দেখার জন্য কখনো বেশ রাতে আবাসিক এলাকার রাস্তাগুলোয় ঘুরি।
ঈদের দিনের সকালটা শুরু হয় নামাজ দিয়ে। ছেলে বা মেয়ে, প্রত্যেকেই ঈদের নামাজ মসজিদে পড়তে যায়। কাছের বা দূরের নির্দিষ্ট মসজিদে যায় তারা। প্রত্যেকটি মসজিদে ছেলেদের আর মেয়েদের একসঙ্গে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। তা ছাড়া, মেয়েদের জন্য পর্দায় ঘেরা জায়গা আছে। কারো ইচ্ছে হলে পরদার আড়ালে গিয়েও নামাজ পড়তে পারে। মসজিদের সামনে ড্রেস কোট (বিশেষত কাপড়ের দৈর্ঘ) ছবি দিয়ে ঝোলানো থাকে। কারো গায়ে অন্য ধরনের পোশাক থাকলে সে মসজিদে সংরক্ষিত পোশাক নিয়ে নিজের কাপড়ের উপরে পরে নেয়। তবে এমনিতেও আপাদমস্তক আবৃত মেয়েদের প্রায়ই দেখি নামাজের আগে নিজের কাপড়ের উপরে মসজিদের সেই জোব্বাটা পরে নিয়েছে। নামাজ শেষ হতেই সেটা খুলে সুন্দর করে ভাঁজ করে স্বস্থানে রেখে তারা বেরিয়ে পড়ে। তবে কেউ যদি সেটা না পরে, কেবল ড্রেস কোট মেনে নিজস্ব পোশাকে তাদের মাঝখানে বসে নামাজ পড়ে, তাতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। যেমন, আমাকে সাধারণ সালোয়ার-কামিজ পরতে দেখে তাদের মধ্যে কোনো জিজ্ঞাসা দেখিনি। নানান জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে বেড়ে ওঠার যে সহনশীলতা বা উদারতা তাদের ব্যবহারে দেখতে পাই তা সত্যি মুগ্ধ হবার মতো। ঈদের নামাজ শেষে তারা কোলাকুলির জন্য হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে।
সামাজিকতার কারণে কখনো কারো কারো আপ্যায়নের আহ্বানে তার বাড়িতে চলে যাই। ঈদের দিন বা তার পরের দিনটিকে যে যার সুবিধামতো ‘ওপেন হাউজ’ ঘোষণা করে। তার মানে সেদিন সে বাড়িতে থাকবে আর তার বাড়ি সারাদিন থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। আত্মীয়-বন্ধু যে কেউ যে কোনো সময়ে সেখানে গিয়ে খেয়ে আর আড্ডা দিয়ে আসতে পারে। সাধারণত বাড়ির বাইরের গেটের পর থেকেই খাবার দাবার সাজিয়ে রাখার রীতি। বাইরের বারান্দায় শুকনো খাবার আর নানা রঙের সরবত সাজিয়ে রাখে তারা। রান্না করা খাবার বাসার ভিতরের টেবিলের উপরে রাখা থাকে। আমাদের দেশে যেমন ঈদের কিছু বিশেষ খাবার আছে, যেমন সেমাই বা লাচ্ছা সেমাই, বিশেষ ধরনের মিষ্টি, কোরমা-পোলাও, সেরকম তাদেরও নিজস্ব কিছু খাবারের রীতি আছে। যেমন, মুন কেক; ছোট্ট আকৃতির নকশাদার কেক, যা তারা বাড়িতেও বানায় আবার পুরো রোজার সময়টাতে দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। অনেকটা আমাদের দেশের ছোটো কোনো পিঠার মতো। কেউ নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে বাড়িতে বানায়, কেউবা দোকান থেকে কিনে এসে সাজিয়ে রাখে। আরেক রকমের কেক আছে কাগজের মতো পাতলা অসংখ্য স্তরের। প্রতিটি স্তর ভিন্ন রঙের। ‘পানদান’ নামের এক পাতার গন্ধ বা স্বাদ তারা তাদের কেকের মধ্যে খেতে পছন্দ করে। স্বাদ-গন্ধের দিক দিয়ে সেটা অনেকটা নারকেলের মতো তবে রঙ হালকা সবুজ। নারকেলেরও প্রচুর ব্যবহার দেখা যায়। মিষ্টি খাবারে তো বটেই, অনেক তরকারিতেও নারকেল অপরিহার্য। নারকেল আর লেমন গ্রাসে তিন-চার ঘণ্টা ভাপে রেখে রান্না করা মুরগি বা গরুর মাংস তাদের উৎসবের প্রধান তরকারি। একে বলে ‘র্যানড্যাং’। এতদিন মালয়েশিয়ার উৎসবে অংশ নিতে নিতে এটাই আমার প্রিয় খাবার হয়ে উঠেছে। তবে প্রায় সব খাবারেই লবন-মরিচের পাশাপাশি চিনির ব্যবহার অবধারিত। এই ব্যাপারটাকে প্রায়ই উপেক্ষা করতে পারি না; তবে করতে পারলে ঈদের দিনে তাদের বাড়ির খাবারগুলো মজারই। তাদের রান্নার উপাদান আর পদ্ধতিতে যেমন আছে চাইনিজ রান্নার প্রভাব তেমনই আছে ভারতীয় স্বাদ-গন্ধের মৃদু উপস্থিতি। আর তাতে তাদের নিজস্ব পছন্দ নারকেল-পানদান-চিনি মিলেমিশে আমাদের বাঙালি মুখে অনেক সময় জগাখিচুড়ির মতো লাগাটাও অস্বাভাবিক নয়। রান্নার উপাদানের যে ফিউশন পদ্ধতি এখন পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয়, তার মধ্যে মালয়েশিয়ার লোকেরা সম্ভবত বহু বছর ধরে অভ্যস্ত। পানীয়ের ক্ষেত্রে এমনিতেও নানান ধরনের ঠান্ডা সরবত খাওয়া তাদের প্রতিদিনের অভ্যাস। ঈদ উপলক্ষে এর ব্যাপ্তি আরো বাড়ে। এইসমস্ত পানীয়ের মধ্যে তারা মাত্রাতিরিক্ত চিনি আর খাবারের রঙ মেশায়। অথচ মুখে নিয়ে কখনো চমকে উঠি যে তাদের ফিরনি বা পায়েস জাতীয় খাবারে চিনি প্রায় নেই, কখনোবা সেখানে কিঞ্চিত লবন মেশানো। এক বিশেষ জাতের কঁচি বাঁশের ভিতরে চাল আর নারকেলের দুধ মিশিয়ে রান্না করা ভাত ঈদের সময় তারা তরকারির সঙ্গে পরিবেশন করে। বাঁশের ভিতরে রান্না করা এই ভাত, যাকে তারা বলে লেমাং, এটা এত জনপ্রিয় যে ঈদের মৌসুমে রাস্তার ধারে ধারে বিক্রি হতে দেখি। কিনতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে আগুনে সেঁকে প্যাকেট করে দেয়। আরেকরকমের ভাত আছে পানদান পাতায় মুড়িয়ে রান্না করা, তার নাম কাতুপাত। পাতাটা মুড়িয়ে চারকোনাচে প্যাকেটের মতো তৈরি করার বিশেষ কায়দা আছে। লেমাং আর কাতুপাত, এই দুই রকমের ভাত ঈদের দিনে তাদের টেবিলে থাকবেই। কাতুপাত ভাতের প্যাকেটের নকশার অনুকরণে বানানো বড়ো বড়ো কাগজের প্যাকেট তারা ঈদের আগে রাস্তাঘাট বা দোকানপাট সাজানোর কাজে ব্যবহার করে। সুতোয় ঝোলানো সবুজরঙা বর্গাকার প্যাকেটগুলো বাতাসে দিনভর নড়াচড়া করতে থাকে। সবমিলিয়ে তাদের ঈদ উৎসব বলতে গেলে খাদ্য আর পোশাকের ঐতিহ্যকেন্দ্রিক। আতিথেয়তাও যেমন তাদের আরেক ঐতিহ্য। মালয়েশিয়ান বাড়িগুলোতে আতিথেয়তা অসাধারণ। বরাবর যন্ত্রের মতো কাজে ব্যস্ত থাকলেও ঈদের দিন থেকে পরের দুটো দিন তাদের অতিথি আপ্যায়ন আর আনন্দ-উল্লাস দেখবার মতো ব্যাপার। এমনিতেও মানুষে মানুষে সামাজিক ভেদাভেদজনিত অনুভূতির উপস্থিতি তাদের মধ্যে কম, ঈদের সময়ে প্রত্যেকের অমায়িক ব্যবহার পরিবেশকে আরো বেশি আনন্দময় করে তোলে।
মুসলিমপ্রধান দেশ হলেও তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয় ঈদের দিন থেকে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত কাজ করে তারা। দোকানে, অফিসে, অলিগলি রাস্তায় তখন একরকমের গান বাজে। রোজার সামান্য আগে থেকেই ক্রমাগত এই গান বাজানো শুরু হয়। তারা বলে আইদিল ফিতরির গান। গানগুলো ঠিক আমাদের হামদ-নাতের মতো নয়। ঈদের আনন্দ-উত্তেজনার বিষয় সমৃদ্ধ গান। সাধারণত দ্রুত লয়ের এই গানে মূলত বেহালা, ব্যাঞ্জো আর হারমোনিয়ামের ব্যবহার দেখতে পাই। একই ছন্দে আর প্রায় একই ধরনের সুরের ওঠানামায় দিনভর গানগুলো ঈদের আগে আগে শহরে বা উপশহরে চলাফেরা করতে গেলে শুনতেই হবে। এতেই হয়ত তারা উৎসবের উত্তেজনায় উদ্দীপ্ত হয়। তা ছাড়া ভিড়ের জায়গায়, বাজারের মাঝখানে বা বড়ো বিপনিবিতানে সারাদিন ওই গান, সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী নাচের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানও চলতে থাকে। নাচের শিল্পীদের পোশাক উজ্জ্বল ও কড়া রঙের; মাথার উপরে ময়ূরের ঝুঁটির মতো করে পালক গাঁথা কিংবা নানান নকশার টুপি বা মুকুট থাকে। নাচের মুদ্রা আমাদের দেশের আদিবাসীদের নাচের মতো। তবে সেই মুদ্রায় নানান কৌশলে ঈদের খুশি আর আপ্যায়নের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলে তারা। বিরতিহীন নাচের অনুষ্ঠান কাজকর্ম, চলাফেরার মাঝখানে কোনো দর্শক হয়ত দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট দেখে-শুনে চলে গেল, পরমুহূর্তে সেখানে এসে দাঁড়াল অন্য কেউ। এভাবে রোজার পুরো সময়টাতেই ঈদ ঈদ আনন্দটা সবখানে লেগে থাকে। যেহেতু বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বাস আর বছরজুড়ে পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে তাই রোজার মধ্যে খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্ট বরাবর খোলা। কাপড় দিয়ে বানানো কোনো পরদার বালাই নেই। তবে লক্ষ করে দেখেছি সেখানে কোনো মুসলিমকে দেখা যায় না। এখানকার মুসলিমদের চিন্তায় রোজা না রাখাটা বাছাইয়ের জন্য কোনো পছন্দ নয়। তাই রোজা আছি কি না, এ কথা কেউ কখনো জানতে চায় না।
খাবারের মতো মালয়েশিয়ার পোশাকও বিচিত্র। মুসলিমদের মধ্যে বছরজুড়ে বিভিন্ন পোশাকের, এমনকি বয়স আরস্থান বিশেষে পশ্চিমা প্রভাবের অভ্যস্ততা দেখলেও ঈদের দিন তাদেরকে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকটাই পরতে দেখি। মেয়েদের পোশাকের নাম বাজু-কুরং। লম্বায় ছোটো কামিজ আর পায়ের গোড়ালি অব্দি স্কার্টের মতো ঘেরওলা কাপড়। দুটোতেই একই রঙ আর নকশার বাটিকের প্রিন্ট। মাথায় কেউ রঙমেলানো ওড়না জড়ায় কেউবা জড়ায় না। ছেলেদের ক্ষেত্রে একরঙা পাজামা আর ফতুয়া। তবে তার উপরে সিল্কের নকশাদার একটা কাপড় কোমরে লুঙ্গির মতো করে জড়িয়ে রাখে যেটা হাঁটু অব্দি লম্বা। শিশুদের জন্যও বরাদ্দ একরঙা ফতুয়া আর পাজামা জাতীয় পোশাক। তবে তার মধ্যে থাকে জরির কারুকাজ। তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ঈদের দিনে কারো বাড়িতে উপস্থিত হলে তারা ভীষণ খুশি হয়। বাচ্চারা ছুটে এসে ডান হাতটা টেনে নিয়ে পর্যায়ক্রমে নিজের দুই চোখ ছুঁয়ে নেয়। তারপর হাতের উপরে চুমু খায়। মালয়েশিয়ায় স্বাগতম আর বিদায় জানানোর এটাই রীতি, যেমন, আমাদের দেশে আমরা পা ছুঁয়ে সালাম করে থাকি। সব বয়সের ছোটোরা বড়োদের হাতে চুমু খেয়ে শ্রদ্ধা জানায়। বলা বাহুল্য ছোটো ছোটো বাচ্চারা যখন হাত তুলে ধরে দু’চোখ ছুঁইয়ে চুমু খায় তখন স্বর্গীয় অনুভূতি হয়। আমাদের দেশে যেমন ঈদে আপনজনকে নতুন কাপড় উপহার দেয়ার চল আছে, এখানেও আছে উপহারের নিয়ম তবে তা কাপড় নয়। সাধারণত শুকনো খাবারকে (বাদাম বা শুকনো ফল) জমকালোভাবে মুড়িয়ে, সঙ্গে পানীয় আর ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে অতিথিরা কারো বাড়িতে বেড়াতে যান। এর চেয়ে বেশি উপহারে তাদেরকে বিব্রত হতে দেখেছি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ঈদের দিনে সাজসজ্জা আর পোশাকে বা খাবারে তাদের ঐতিহ্য আর জাতীয়তাবোধের প্রতি ভালোবাসা ধরে রাখার আগ্রহটুকু দেখে আপ্লুত হয়েছি।
এইসমস্ত আয়োজনের সঙ্গে মিলে যেতে পারলে, দেশ থেকে দূরে, আপনজনদের সান্নিধ্যবিহীন ঈদ একেবারে খারাপ কাটে না।