করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





জান্তব
জাহানারা নুরী
পাগলী শিশুদের দেখে। খুব খুশী। খোলা যায়গা তার ভালো লাগে। অনেক আলো তার মনে আনন্দধ্বনি তোলে। চারপাশের মানুষ, রং দেখে সে হাততালি দেয়, নাচতে নাচতে গান ধরে;
কি কথা কহেন গো ভাসুরা?
পীরিতির কথা আর না নাগে ভালে
মুই অভাগী (রাঢ়ী) কাঁচা চুলে হারানু সোয়ামী
পীরিতির কথা মোক্ আর কহেন না।
এ পর্যন্ত এসে তার মনে পড়ে নাচের উপযোগী সাজ হয় নি। সে উঠে রক্তজবা জোগাড় করতে জঙ্গলের দিকে যায়। পিছু পিছু পাড়ার দস্যিগুলো, হি হি হো হো! সারাক্ষণ পাখির ঝাঁকের বাদরামী, উড়াল, দৌড়। ফুলের পাপড়ি নিয়ে থুতু দিয়ে কপালে সাঁটে পাগলী। তখন তাকে সন্ধ্যাকর নন্দীর আলোছায়াময় চৈতালী চাঁদনী রাতের রাম চরিতের সীতের মতো উপাস্য দেখায়। তখন সে মায়া হরিণী, হরণযোগ্য।

রাম রাম, পিঙ্কি মাহাতো, দুই বাচ্চার মা, দৃশ্যটা দেখে তার বুকটা ধ্বক্ করে ওঠে। পাগলীকে সে শুধু খাওয়াতে পারে এক বেলা। কিন্তু এ যে আগুন! তাতে কালান্তরের সেই পুন্ড্রবর্ধন পর্যন্ত দাহ্য।
তুই নাই যাস্ এঠে ওইঠে সতী, থাক কেনে। তোকে কেউ মারবে না। মুই আছো, মোরা বাপো, মাও আছো। থাক্! পথে পথে নাই ঘুরিস্। আইজ বাতোস্ কেমন সুন্দর। থাক কেনে?
সাজছে, সতী সাজছে-গাঁয়ের, বাজারের আশপাশের যে সব বালক বালিকা তার মতোই গাঁময় ঘুরে বেড়ায়, তারা হুলহুল করে ওঠে। পিঙ্কির কথায় সে বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে সায় দেয়। উঠে শাড়িটা খুলে পুনরায় পরতে চেষ্টা করে।

যাদের বাড়ির জবা গাছটার অদূরে এতসব অসামাজিক কা- ঘটছে- তা স্থানীয় এক ব্যক্তি ধরুন নাম তার বিজন তপ্নো, তার বড়ো মেয়ে পিঙ্কির সামনেই। তাকে হাত টেনে ধরে বাড়ির ভিতর একটু আড়ালে নিয়ে গিয়ে পিঙ্কি কষে শাড়িটা পরিয়ে দেয়, যেন শত লাফালেও খুলে না যায়। পাগলীর কণ্ঠে কিন্তু গান লেগেই আছে- মুই অভাগী (রাঢ়ী) কাঁচা চুলে হারানু সোয়ামী।
না যাস্, মুই ভাত নে আসছো।
দোকানঘরগুলোর পাশে গাছের গুঁড়িটার ওপর বসে তার স্বামী- যে তাকে ছেড়ে এখন অন্য নারীর কাছে শোয়- কুশমণ্ডী নিবাসী সোন ফালকু-সে আসবে এ বিশ্বাসে  চিরামতী ও বালিয়ানদীর মাঝে এক ডালা দূর্গের অনতি দূরে পান্ডুয়ার যুদ্ধস্থানে অপেক্ষা করে নারী। বয়স আটাশ। সুস্থ ছিল। বিয়েও হয়েছিল। বছর পনেরক একক জীবন যাপন করা একটি বালিকা পরের দুয়ারে চেয়ে চিন্তে খেতো। বিয়েও হলো সেই দূর বিহার। বিয়ের পরপরই তরুণী বয়সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো, কেন তা নিয়ে এ জরতি অন্ধকারে আচ্ছন্ন মানব সমাজের থোড়াই মাথা ব্যথা। তার ওপর সে আদিবাসী।
দুপুরে পিঙ্কি খাবার দেয়। পাগলী নিজে একটু একটু খায়, কিছু পাশে ঘিরে ধরা কুকুর কে দেয়, বেড়ালকেও, শেষটুকু হাঁস মুরগীকে খাওয়ায়। তাদের খাওয়ায় মুখ দিতে এলে কুকুর বিড়ালকে ভৎর্সনা করে, ছিঃ ওরটা খাওসো? নাই খাও!
বিকেল হয়ে এলে পিঙ্কির কাছে দেয় প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে সে মুই অভাগী-গাইতে গাইতে পথে নামে। শ্রীর জল¯্রােতের ম্যাপ তাকে কোথাও নিয়ে যেতে থাকে।

দুই.
ওরা সাতজন তখন নির্দোষ সংস্কৃতি চর্চায় বেরিয়েছে। কথায় কথায় কতো উন্নত ধরনের সংস্কৃতি বিষয়ক আলাপ হয়ে যাচ্ছিল।
গেঞ্জিধারী: নাটকটা আমি দেখবো। উত্তর দিনাজপুরে গত বছর একটা লোমের কা- ঘটেছিল।
প্যান্টধারী: লোমের মানে?
গেঞ্জিধারী: ওই হলো, লোমহর্ষক! একটো মেয়েকে কয়েকটা জানবার এক ছাথে। তো মধুমঙ্গল মালাকার ও ই নিয়ে পালা গেঁথেচে- ছাক্রা সেজে সে নিজেই অভিনয় করবে শুনছি।
বোঝা গেল ওটাই দেখতে চলেছে ওরা।
শকল: মধুমঙ্গল নারকোলের মালা দিয়ে বুক বানিয়ে নাচবে তো বটেই,বাউল গান হবে, হেমতাবাদ হতে ভাসুর-ভাউসান গাইয়ে আসবে। মেধো মালাকার দেশ বইদেশ ঘুরোছে শোলার মোখা নিয়ে। মোখা, কালিমূর্তি, পীরের মূর্তি সব দেশে দেশে নিয়ে যাওছো। পাঁচ পুরুষ ধোরে বানাওছে। শুনোছো শিবু রবিদাস শিব পূজার উৎসবে পালা গাইবে - সতীহেলা। রবিদাস বলে নাক উঁচকিয়ো না, মহান ভারত সরকারের বিত্তি পাওেছে, ফোক পালা জিইয়ে রাখওছে কি না। মোরো এখানত একটা গর্ব গরিবা মতো ফোক সংস্কৃতি আছে।
আত্রেয়ী, পুণর্ভবা, ব্রাহ্মণীর জলধোয়া পলিমাটির ছেলে শিবু পেশায় হাইল্যা। ধানক্ষেতে থাকে বছরের তিন মৌসুম। তার শিল্প বলতে ওই ফোক গান, পালা, খ্যেনে। অনুন্নত! শিবু রবিদাসের মতো শিল্পীর দেশ, বঞ্চিত-যদিও জনগণনামতে বসতি হালকা। মাথা গুণে চলা গণতন্ত্রের চোখে পড়ার মতো না। লিঙ্গানুপাত দক্ষিণে নয়শো পঞ্চাশ উত্তরে নয়শো ছত্রিশ। ফলে জনপদে মোটমাট নারী পুরুষের সংখ্যা সমান হওয়ার জীববিজ্ঞানী তত্ত্ব ধরলে এদের চার লাখের উপর কন্যা জন্মেই নি।
কুশমণ্ডী, পতিরাজপুর এইসব আরো ওঁচা। হিন্দুর সাথে মুসলমানের, হিন্দু ও মসলমান উভয়েরই আদিবাসীর সাথে পবিত্র ধর্মমতে টানা পোড়েন লেগেই আছে। সবার সাথেই সেন্ট্রালের রাজনীতির দড়ি খেলা। আদিবাসীদের বিষয়টা তো ধরিত্রী জুড়েই জানা কথা; তাদের নিয়ে হিন্দুত্বাদীরা ক্ষিপ্ত, হিন্দু না হয়ে কেন সব কেরেশ্চান হচ্ছে, কেরেশ্চান থেকে হিন্দু হওয়ার আহ্বানেও সাড়া দিচ্ছে বেশ স্লো। ওদিকে ইসলামবাদীরা ওদের মানুষই ভাবে না।
গঙ্গার ওপর ফারাক্কা ব্রীজ হলো, নানান রাজ্যের লোক আসছে যাচ্ছে, দেওয়া নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দ্রাবিড়দেরও আগে এসে মানুষ বসতি গড়লেও দিনাজপুরের গরিবী অস্ট্রোএশীয় টাইপ, বাঙ্গালীদের ওভারটেকের বেগে ক্রমে বর্ডারলাইনে চেপে সরছে।
উত্তর দিনাজপুর বকের গলার মতো সরু। ছোট মাঝারি শিল্প জমে বসছে। সেও দক্ষিণকে ওভারটেক করতে ছুটছে।
এই জাতিরই কয়েকজন নবীন প্রতিনিধি আজ শিবপূজোর সন্ধ্যেতে বিক্ষিপ্ত উল্কা। গ্রাম! কিচ্ছুটি করার নেই।
ইয়ার তুম তো বহুৎ ট্যালেন্ট নিকলা। ফোক সংস্কৃতি পে ডক্টরেট। তা ডক্টর বাবু, গানটো হছে কোথায়?
ইটাহার ব্লকের পতিরাজপুরে শ্রীমতি নদীর ধারে।
নজদিক।
তো সপ্ত ঋষী চলে। সংস্কৃতি থেকে এবার কুশমণ্ডীর বিধান সভার নির্বাচনের হিসেব নিয়ে কিছুক্ষণ জ্ঞান-চর্চা করতে করতে বাংলা হিন্দী উর্দু মাচায়। তিনজন একেবারেই নির্বিকার হেঁটে চলেছে। তিনজন টলছে। যারা টলছে না তাদেরই দু’জন গলার রগ ফুলিয়ে বিতর্ক করে চলেছে। ক্রমে তা লাল পতাকা, গণতন্ত্র ও আর এসএস এ গড়ায়।
কিছুদূর গিয়ে দুল্যমান পদবিক্ষেপে যেতে যেতে একজন দাঁড়িয়ে পড়ে বলে, মুতবো।
দেখাদেখি, পাশের দু’জনও থামে ও কনে আঙ্গুল দেখায়। বাকি চারজন নীরব ও সরব একসাথে হাত তুলে কনে আঙ্গুল প্রদর্শন পূর্বক প্যান্টে হাত দেয়। সাতজন কদমে কদম নিতম্বে নিতম্ব দিয়ে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে চেইন খুলে প্রতিযোগিতায় নামে, কে কতোদূর ছড়াতে পারে জল। জল কাটাকাটি, করে করে পাইপের সাপ্লাই শেষ হলে শেষ ক’ফোঁটা ত্যারাব্যকা এর ওপর প্যান্টে পড়ে। লাফিয়ে আত্মরক্ষা করতে করতে হাসে হি হি হি। তারপর যথাস্থানে মূল্যবান পুরুষত্ব সংরক্ষণ করে চেইন আটকায় ও ইতিউতি কোন্পথে যাচ্ছিল সেটি নির্ধারণ করে। ঊনিশ, বিশ, একুশ, তেইশ, চব্বিশ, আটাশ, তিশ।
তর্কবাগীশ দু’জন তখন আবার পরস্পরকে বুঝাতে আপ্রাণ যুঝে যাচ্ছে একটা জটিল প্রসঙ্গে-কিভাবে গণতন্ত্রের টানাপোড়েনে বাংলা হিন্দী ও উর্দু ভাষাভাষী হিন্দু, মুসলমান,আদিবাসী থেকে ধর্মান্তরিত ক্রিশ্চান এবং এখনো বিশুদ্ধ প্রাক-দ্রাবিড়ীয়দের প্রাণ জেরবার।
নেশা কমে আসা বাকি দু’জনের একজন মাথা নাড়ে জানায় সে সহমত নয়,
-তোমার সঙ্গে মো একমোত নাই। মাধাই দাস মাহান্তর মতো লোক আছো। রগ ত্যাড়া। মিনতিসরি ও পুলিশ মার্ডার লিখে মাধাই জেলখানা ইস্তক ঘুরে আসোছে। মাধাই কাকু আমারে কইছে সেই কোলকাতায় তার খন পালার আঙ্গিক লিয়ে নাটক করাওছো বিভেস চক্কোত্তি। জব্বর জমাওছে। পত্রিকায় নাম উঠোছে। মোর বাপও শুনোছো কথাখান, চক্কোত্তিকে দেখিছো না বট।
এমন সমর্থক থাকতে আজ যে সন্ধ্যে হতে না হতেই পতিরাজপুরের বাউল আসর জমে উঠবে সে তো জানা কথাই। বাঙ্গালী আর আদিবাসী আজ এক হয়ে যাবে।
শিব ঠাকুরের দেশে আজ গণতন্ত্রের সন্ধ্যে.
খাও-পিয়ো, নাচো-গাও, মজাও আনন্দে।
তো একেবারে জৌলুসহীন, নন- এক্স-রেটেড এই আসরে ওরা চলেছে সন্ধ্যেটা কাটাতে।
ডক্টরেট হীন ডক্টর বলে, আদিবাসী পালাকার হলে কি হবে, ব্যাডা গায় ভাল, বাউল গান টান, বেশ গলাখান।
আরেকজন ধুয়ো ধরে, সাথে না খায়ে খায়েও মাটিত চরেটরে ভইরে ওঠা বুক ব্যাকওয়ালা আদিবাসী মেয়েটেয়ে থাকওছে তো গোটা কতক? মোরে নেশাখান জমোওছে ভারি!
মোদো মাতালদের সর্ব কনিষ্ঠ যে সে বলে উঠলো, তোমরা সোজা ঢুকে যেও, আমি ততক্ষণে আরেট্টু জোগাড় করে ফেলি। তারপর দেখবে পিউর বাঙ্গালী-ফোক ফিউশন জমে উঠতে দেরী হবে না।
ওরা চলেছে আমোদ শিকারে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দেশী মদের তাপ।  যে বৈশিষ্ট্য থাকলে মানুষ বলা যায় সে সবের কমতি এতো যে বানরগণ কালান্তরে যে প্রাণটি হয়ে উঠতে চলেছিল, লক্ষ লক্ষ বছর আগে থেকে, তা হতে হতে জীবতাত্ত্বিক সূতোগুলোয় কিছু খামতি পড়ে গেছে। মহা মহা পবিত্র গ্রন্থ বর্ণিত ’মানুষ’ নামের প্রাণের সত্যিকার যে চেহারা কল্পনা করা যায়, সে সবের সাথে তুলনীয় নয় বললেই ঠিক হয়। তো এদের একটা নাম দিলে গল্পটা বলতে সুবিধা হয়, আপনাদেরও বোঝাটা সড়গড় হয়। ধরুন তাদের নাম বরা, অক্য, নোকু, শকল, রোঁয়া, ভবানী, জগু । সাতজন এক হয়েছে একেবারে ভোগ বিতরণের আগের সপ্ত ঋষী যেন। যৌবন কাতানের এমনতরো ধার খোলতাই হয় কেবল ভস্মমাখা শিবের চ্যালাদের।

তিন.
গানের আসর ঘিরে মেলা বসেছে। কতদূর দূর থেকে লোক এসেছে। ধনী, গরমেন্টের অফসার আদমী, স্থানীয় প্রধানদের জন্য সামনের সারিতে ম্যাট পাতা। আম জনতা ঘাস ওঠা মাঠের ওপর লেটিয়ে বসা। একেবারে পেছনের সারিতে জমাট মৌমাছির মতো আদিবাসী নারী পুরুষের ভীড়। পাগলীটা এই ভীড়ের ধাক্কা খেতে খেতে এখানে ওখানে ঘুরছিল আর হাসছিল আর গান করছিল।

পাগলীর আদি অস্ট্রেলিয় বুক দুটোর দিকে তাকিয়েই রোঁয়া দাঁড়িয়ে গেল। নেশারু মাথাটায় ছয় সাত রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প। এ আর কিছু নয়, হয় অসুর নয় ইবলিশ তার কাতানটা তাক করে ছিল নির্ঘাত।
মাথার ভেতরে তো কিছু নেই, গলাটা উদোম করে রেখেছে হাতকাটা গেঞ্জিটা, নোয়াপাতি ভূড়ির ওপর যেটি কষে বসে আছে, নাভির নিচে বেসাইজ প্যান্ট বেল্টসহ নেমেছে নিতম্বের অর্ধেক দেখিয়ে। এই হচ্ছে রোঁয়া।
অম্বা এগিয়ে যাচ্ছিল সামনে স্টেজের দিকে, রোঁয়া ব্রেক কষায় হ্যাঁচকা টান খেয়ে সেও দাঁড়িয়ে ফিরে তাকালো,কেয়া হ্যায়! চল্ না, সামনে যাওসে, য়েকটা ভালো যায়গা দেখে বছে পড়ি হাঁ। এলাম যখন শুনেই যাই।
হামভি ক্লাসিকাল সংগ কি ফ্যান, লেকিন ইয়ে ক্যায়া রে?
উয়ার মাথাউতা থোড়া খারাব আছে। চলেঁ!
পাগল ছাগল, তা ওই দুইটা অত্তো বড়ো হইল কিবায়?
হাতাহাতিতে! নোকুর হি হি হাসি ঢলে চলা আঁধার ফুঁড়ে এদিক ওদিক চলে যেতে থাকে।
বরা চুপচাপ দাঁড়িয়েই। তার মন খারাপ। এমন শিব চতুর্দশীর দিনটা বেশ খারাপ গেল। সন্ধ্যে হতে টেনেছে বেশ ক’বোতল কিন্তু পাঁচজনের সাথে আরো দু’জন যোগ দেয়ায় ভাগে কম পড়ে গেলে শেষে পাতা খুঁজে বেড়িয়েছে। অক্য, শকল ও অম্বা সেই কোথায় গেছে আসবার নাম নেই এখনো। একবার তার মনে হচ্ছে ফিরে যাও। আবার ভাবছে কি করে ফিরি। এখন ঘরে ফেরা যাবে না।  
আশপাশের যুবক যুবতী দেখছে বুঝে রোঁয়াকে মৃদু ধমক দেয় সে, থামোওসে!
 
সতী হাসে ও জোরে জোরে গায় স্টেজের অভিনেতার গাওয়ার উৎসাহে, মুই অভাগী- - তার চারপাশে এখন মানুষ। তার ভয় লাগছে না।
অনুষ্ঠানটা শেষে হতে অনেক রাত হয়।
এক ফাঁকে ওরা উঠে আসে।

চার.
পত্রিকার রিপোর্ট পরে বলে যুবতীকে গোটা অনুষ্ঠান এলাকায় ঘুরতে ফিরতে দেখে অনেকেই। দুষ্কৃতিরা রাত বেশি হলে ওকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
আসলে তো প্রাচীন বিশাল ডানাওয়ালা পাখির ডিমের মতো পাথরগুলার ওপর দিয়ে সভ্যতা ও নিয়েনডারথালযুগকে যুক্ত করা ব্রীজের তলার আদমী অন্ধকারে সাত সাতটা হায়েনা তাকে ঘিরে ছোঁক ছোঁক করতে করতে নিয়ে চলেছে। পত্রিকার রিপোর্টিং এর সাথে বাস্তবের আকাশ পাতাল ফারাক। একটা হায়েনা ওর মুখে গুঁজে দিয়েছে কাপোড়।
কাঁধে করে আনতে বহুবার কাঁধ পাল্টাতে হয়েছে। নদী পাড়ের জঙ্গল, জল কাদার পথ মাড়িয়ে এ ওর কাঁধে ধরিয়ে দিয়েছে। এখন এই নির্জনতায় কাঁধে নেয়া মেয়েটার নিতম্বে হাত দিয়ে থাপড়াচ্ছে একটা। আরেকটা ওর স্তনে হাত বুলোচ্ছে।

পাগলীটা এখন মেয়েমানুষ! হাত দুটো কষে ধরে আছে তার বাহক। ভয়ে গোঙ্গাচ্ছে! এইখানে প্রাচীন ডিমগুলোর ওপর তাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। চেঁচাচ্ছে বেশ তবে শব্দ হচ্ছে না। হাঁপাচ্ছে হায়েনারা।
একটা গোটা মাংশল শরীর জড়িয়ে ধরে ঠেলে চলেছে ব্রীজের কোণের সুপ্ত কালো নির্জনতায় আর হাত দিয়ে নাভি কু-ের ওপর আঙ্গুল বুলাচ্ছে, উত্তেজনায় সাতটা কুকুর ভাদুরে, হাঁপাচ্ছে, ফলে কথা আনুনাসিক, চঁ, তোকোঁ ভারী আদর করবো, চলেঁ, হাঁট্, থোড়াসাঁ সামনে।
পেছন থেকে একটা নাভি থেকে উপরের দিকে হাত বুলিয়ে মাপে, এই মালটার অর্ধেক।
আরেকটা স্রেফ ফিল্মী স্টাইলে ডায়লগ ঝাড়ে,
-মো তো উল্টো দিক ছেই চোখ তুলিবার না পারি গোটাটাক দেখিয়া না জানি কি করোঁ।
-ওঁটা বাকি আদ্দেক, বেশি নেশা যার সে বলে।
-উঁহু, বিড়ি টানতে টানতে বড়োটা সিদ্ধান্ত দেয়,
-নিচে সেবেনটি ফাইভ পার্সেন্ট উপরের টুয়েন্টি ফাইভ।
-তো কেঁ কোন্টা পাবে?
-সেঁ তোমরা যেইসা বোলো।
-টুঁয়েন্টি ফাইভ দিয়ে শুরু কঁরে সেবেনটি ফাইবে চলেঁ যাওয়াই তো নিয়ম।

বানরের পিঠা ভাগ চলছে। ওদিকে সাত জোড়া হাতই যুবতী দেহটা খামচে চলেছে, যেন সাতটে মাংসাশী – মাত্র শিকার করা মাংশল হরিণটা-কোন্ খান থেকে খাওয়া শুরু করবে তা ভেবে পাচ্ছে না।
-মাইরি দ্যাঁখ, দেখোওছেস । এঁ ক্রিমিনাল, স্রেফ ক্রিমিনাল এ মোক দখল লিয়ে লিচ্ছে, দেবদাসী দেবদাসী মতো।
ঘাড়ে একটার হালকা কামড় খেয়ে তখন নারী শরীরটি একটু বেগড়বাই শুরু করেছে। এটা তার পছন্দ নয় মোটেও। কতোবার কতো জন বালিকা হয়ে উঠতে উঠতে তার দু’ এক টুকরো এখান ওখান থেকে চেখে দেখতে চেয়েছে। এদের মাঝে এখন তার ভয় জাগছে। আসার পথে তাকে জিলিপি খাইয়েছে যে হায়েনাটা ওরই দিকে একটু সরে যায় ও। কিন্তু ওটা মুখ চেপে ধরে তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেয়।
চাঁদ অনেক দূরে। নদীর তলার মাটি তার টানে ফুলে উঠছে না। মরাকটাল। ওটা নিলাভ বিবর্ণ হয়ে কালো মারিয়ায় ঘুরে যাচ্ছে। মারিয়া মারিয়া ও মারিয়া, ও চাঁদের অন্ধকার সমুদ্র! চন্দ্র ও মানুষ যখন সমবৃত্তে ঘুরছে তখন হায়েনাদের একটা ধাক্কিয়ে শরীরটা বালিতে ফেলে দিয়ে এক সমকোণে ওপর থেকে চেপে বসে। অন্যরা তৈরী হচ্ছে সারি বেঁধে। বড়োটা মেঝোটা, তারপর ছোটটা এইভাবে।
-যা বলোওসে!
-মোরো গা জ্বলওসে।
-গা ধোয়া নাই করোওসে,খিকখিক।
-উয়ো ভি নাই করোওসে।
-মেয়েমানষির শরীল নোংরা থাকিলে মাইরি মোরো প্যান্টো আঁটো হয়া উঠোসে।
-এ তুই নেড়ের মতো কথা কইছিস্।
-মোরাও তো মোছলমানই না কি? ওদের সঙ্গে উঠি বসি, সব জানি, এই দ্যাখ, এই, এক্ষুনি প্রমাণ দেওসি। হাতে নাতে প্রমাণ করি দেওসি।
ওটা সত্যি আযান দেয়ার জন্য সোজা হয়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করে, তার পা টলছে তাও। কিন্তু পকেট থেকে রুমাল বের করে মাথায় বেঁধে পা সোজা করে কান পর্যন্ত হাত তুললে, একটা হাত তার মুখে চাপা দেয়।
-দিল্লাগি করো না বাপ, আযান দিলে তোমার গুষ্ঠি শুদ্ধু ছুটে আসোবে, তখন দেবদাসী তোমারু নাচিবে কোতায়? সে তো আর মোলুবির সামনে নাচে লা। তার মন্দির চাই। পুরুত চাই।
-কেমন পুরুষ্টু! হবে, মন্দির হবে, পুরুত হবে। সব হবে।
-বন, জল, জঙ্গল।
-পার হয়ে হামা দেওছে গভীর দুয়ারে।
-আর বেরুতে হবে না।
পাগলী কাঁদে। তার মুখে ধূলার আস্তরণ, চুল এলোমেলো-কতদিন তাতে কাঁকই পড়েনি কে জানে। কাঁধ ততোখানি চওড়া যতোখানি নিতম্বের ঘের। কোমর ঝপ করে ঢেউ তুলে নিচে ফুলে উঠেছে যেন। নিঃশ্বাসের সাথে স্বাভাবিক ভাবেই বুক যেমন উঠানামা করছে তরঙ্গের মতো! তাতে ভরাকটালের ডাক! এটা হায়েনাদের দেখা।
আসলে ও একলা। তাকে ঘিরে আছে ছ ছ’টা ষন্ড, নিচের দিকটা আধ ন্যাংটা। সপ্তমটা প্যান্ট নিয়ে টানা হেঁচড়া করছে।
এখন ওর হাসি আসছে না, স্বাভাবিক, জীবন্ত, সুস্থ হাসিটা সরে যাচ্ছে। মুখটা বিকৃত হয়ে উঠছে। তাকে ঘিরে থাবাগুলোর এগিয়ে আসা, ঘিরে ঘিরে তাকে ছোঁয়া, তার কাছে এই মনে হচ্ছে খেলা, এই মনে হচ্ছে ভয়।
যেমন তার বিয়ের রাতের মতো। কিম্বা আর কোনো রাতের মতো বাজারে কোণে, অথবা জঙ্গলে, বা এমনি কোনোও ক্ষেতে-একটা থাকতো।
আজ সাত সাতটা ডোঙ্গা কুকুর জিভ বের করে হাঁপাচ্ছে। একজন ওর বুক উদোম করছে আস্তে ধীরে।
-কেতনা টাইম লাগাওসো, ইয়ার।
পাগলীর পিঠের তলে সরষে ফুল দুমড়ে পড়েছে। সরষে ক্ষেতে যে দৌড়েতো ছোটোবেলায়,
হলাদানি বাটিতে গো বুবু
কি ঘাসন ঘাসিলেন
কিকি গান মাংগাকেন গো বুবু
ছেলের জন্য মাংলি লো বুবু
দুধূ খাওয়া বাটি
আর সোয়ামির জন্য মাংলি লো বুবু
শান্তিপুরের ধুতি।
মোসলমান পাড়ায় শুনেছিল বিয়ের গান। সেটা তার শরীরে ঘুরছিল আসার সময়। ওই গানটার মাঝে অগ্নিদাহ শুরু। আগুনটা লাগে। ঊরুর মাঝখানে সূচের মতো তীক্ষ্ণ লেলিহান ঢুকে পড়ে হাল হয়ে বেরিয়ে যায় তার নাভিমূল হয়ে। মেয়েমানুষের শরীর যে মাটি। বলেছে ধর্ম!
এই মুহূর্তের তরেই চাঁদটা নিভে গেল।
সব নিকষ, মারিয়া পৃষ্ঠ দেখিয়ে দিল চাঁদ!
তরল এসিড জলে প্রথম শৈবাল যুগের রাত। সাতটা হায়েনার খাওয়া খাওয়ির শব্দ ব্যতিত আর কিছু নেই। তা তো শেষ হবার নয়। প্রথম দুটো ষন্ড উঠে মুখ ঘষছে, দাঁত চিবোচ্ছে, চর্বিত চর্বন চলছে।
একবার ক্ষীণ সতীর কানে এলো বুঝি কলকল জল। তখন এক নজর দেখেছিলো কালো আলকাতরার মতো তরঙ্গ দুলছে, চিক্ চিক্ করছে তার গা ভয়াল শঙ্খরাজের পিছল কালো ঢেউয়ের মতো।
কষ্ট পাচ্ছে সে। তাকে সূচে গেঁথে মেরে ফেলছে।
আর পারে না দেহটা। প্রতিরোধ করে। লাথি, ঘুষি হাত নাড়া অসহযোগিতা যত ধরণের সম্ভব।
ষন্ডগুলো মারছে তাকে। ঘুষি মেরে শুইয়ে দিচ্ছে। সে উঠে যেতে চাইলেও তাকে এখন যেতে দেয়া যায় না। এখনও খাওয়া বাকি। অর্ধেক ভোজে গেছে। বাকি অর্ধেকে হামলে পড়েছে বাকিরা। নেতিয়ে পড়ার আগ মুহূর্ত তক সে প্রতিরোধ ইচ্ছা জিইয়ে রাখলো। ভিতরটা শুষ্ক পাথরে ঘষা খেয়ে থ্যাতলে যাওয়ার পরও চলতে থাকলো। আর সে কেবল বললো একবার মারাংবুরু।
দলটা ফিরে আসছিল তৃপিত্সূচক শব্দ করতে করতে। একটা ফিরে গিয়ে দেখে আবার দেহটা নড়ে না কি।
-মাগী টেঁসে গিইছে রে?
-বাঁচোওসে। একরাতেই গর্ভ হয়ে গেসে ওইটার।
-ছেলে হলে তোর মতোন হবে।
-তোদের মতোনও হতি পারে।
কথাটা সত্যি মনে হয়। একটা রড পেয়েছে কোত্থেকে, সেটা দিয়েই একজন মাপছে কতো ভিতরে যায়। এখন হাত টা ঢুকিয়ে দেয় মাটির গর্তের ভিতর, যেন অতো ভেতর থেকে তার ঢালা প্রজন্মকে বের করে নিয়ে আসবে এখনই-ভেতরের ঘরটা না থাকলে তো আর পাগলীটা তার চেহারার একটা ছেলে নিয়ে ঘুরতে পারবে না।
একটানে বের করে নিয়ে আসে ভেতরের বস্তুটা। শরীরটা এই আঘাতে কেঁপে ওঠে।
সে কম্পনে বসা হায়েনাটার নড়াচড়া থেমে যায়।
-যাশ্ শালা, মরে নি?
-নড়ছে? নাড়িভুড়ি ছিঁড়ে নেয়া হায়েনাটা র পাশেরটার রোমহর্ষ হয়,
-জ্যান্ত পেট খসায়ে নিয়ে আসলি? সে আচমকা ঘোরে, একটা দৌড় দেয়।
পেছনেরটা তখন লাশের নড়ার চিন্তায় ভয়াক্রান্ত, দাঁড়া।
দৌড়োচ্ছে। তখন সাতটাই জেনে গেছে মেয়েটা মরে নি। জ্যান্ত নাড়িভূড়ি উগরানো পড়ে আছে। এখনও গরম। তাদের লাঙ্গুল ভাঁজ, শিশ্ন সিঁটিয়ে পেচ্ছাবের ফুটোয় মুখ ঢুকে গিয়েছে। খাওয়া হয়েছে কিন্তু শিকার এখনও জ্যান্ত! 
হায়েনারা শিকার থেকে দূরে যেতে দৌড়োতে থাকে; ভেজা ভেজা মাটি বালি, নদীর খাসজমির ওপর সরিষা শাকের পাতা ফাঁদটা এড়িয়ে চলছে, ছুরীঘাসে পা ছড়ে যাচ্ছে, একবার ডিম পাথরগুলোর ওপর দিয়ে, উড়ে উড়ে বাসকের ঝোপ ভাঙ্গছে, পেরুচ্ছে, আঁকশিকাঁটা লাগছে, উফ্! নির্জন রাত দরকার ছিল, সেটা এখান তাড়া করছে; ওগুলো ছুটছে কোনোও পথ নেই এমন পথে প্রথম পদচিহ্ন এঁকে পুনর্ভবার তীরে প্রাচীন জঙ্গলের দিকে-তাদের আসল আবাস অভিমুখে।

চার.
প্রাচীন পৃথিবী তখন স্থির হয়। এসিড জল থেকে মাথা তোলে প্রথম এককোষী প্রাণ। তার যুদ্ধক্ষেত্রটা দ্যাখে। দাহস্থানে পড়ে থাকা কাঠ কুটো, ধিকিধিক জ্বলন্ত কয়লার মাঝখানে নাভিকুন্ডলী পড়ে থাকে। দেহট ও অমনি পড়ে থাকে, ভেতরের কলকব্জা আধেক টেনে বের করা, টানটান হয়ে ওঠে চামড়া; ভেতরকার হাড়গোড়ের ভাঁজ গুলো যেমনি পড়ে ছিল তেমনি পাটে পাটে।
জল ছেড়ে মৃত্তিকায় নেমে পড়া এককোষী প্রাণ কোন্ ফাঁকে নাভিকুন্ডলীটায় ঢুকে পড়ে। দেহটায় তাপ দিতে থাকে- বারো কি চৌদ্দ ঘন্টা পর লোকগুলো জড়ো হওয়া তক- হাসপাতালে না যাওয়া তক।
বাঁচতে হবে। দেখিয়ে দিতে হবে মানুষকে, সে কী!
প্রাণটা লড়ছেই। ’মারাংবুর ‘একবার সে বললো। কেউ শুনতে পেল না।
 
তারপর সভ্যতা কতোদূর এগিয়েছে!
তাকে নিয়ে পত্রিকার খবর হয়েছে, সে জানে না। কত লোক এসেছে, রাজ্য হতে। দু’দিন সাজ সাজ রব। উন্নয়নের মাল ওভার লোড গাড়িগুলো ছুটছে, এসএমএসে পার হয়ে যাচ্ছে পুলিশের পাহারা। লোকেরা মৃদু একটা মিছিলও করতে চেয়েছে, শেষে প্রশাসনের জোড়হাত দেখে বাড়ি ফিরে গেছে। পুলিশ খুঁজছে দুষ্কৃতিকারীদের, ম্যালাই খুঁজছে।
লোকে বসে থাকছে ওর বাঁচার মির‌্যাকল দেখতে।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনতে হাজার হাজার ভীড়; মানুষ, ষন্ড, হায়েনা, মোষ, যে কোনও জানোয়ারের-চেনে না কেউ।
মাঝখানে এসিড থেকে প্রাণটার মাটিতে উঠে আসতে মিলিয়ন ইয়ারস পার হয়ে গেলো। বড়ো বড়ো পাখিগুলো সব সাইজে ছোটো হয়ে এলো, তাদের লাঙ্গুল গুটিয়ে শিশ্ন হয়ে গেলো।
এই ভীড়ে ও চোখ খুললে চিনবে কোন্টা ষন্ড, কোন্টা হায়েনা, কোন্টা মোষ না মানুষ? মির‌্যাকল দেখিয়ে যে কোনও জানোয়ার মানুষে রূপ নিয়ে নিতে পারে। নাভিকু-লীটির ভিতর প্রাণটি চোখ মেলে বসে আছে, সেই মির‌্যাকলটা কখন ঘটে!
ব্যবহৃত চিত্রকর্ম: কনক চাঁপা চাকমা