করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৭ বর্ষ ০৩ সংখ্যা
অক্টোবর ২০২৪

লেখক-সংবাদ :





একাত্তরের একজন শহীদ: লে. আতিক
মালেকা খান
ভাই বোনদের মধ্যে আমি সবার বড়। আর আতিকের স্থান হল পঞ্চম। বড় বোন হিসেবে আতিক যখন মাস তিনেক বয়সের তখন থেকে ওকে কোলে নেওয়া, ঘুম পাড়ানো, ওর কাপড়-চোপড় ইত্যাদি সবকিছু ভাজ করে গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর। শিশু আতিকের যত্ন-আতিœ করতে গিয়েই আতিককে ছোটবেলা থেকেই খুব কাছ থেকে দেখার ও জানার সুযোগ হয়; যেমন: ক্ষিদে না পেলে আতিক কখনো কাঁদতো না। খলখলিয়ে হাসতো। প্রথম জম্মদিনে একপা দু’পা করে হেঁটেছে। আমরা তো দারুণ খুশি। দু-তিন বছরের আতিক ছিল হৃষ্ট-পুষ্ট শিশু। স্বভাবে ছিল শান্তশিষ্ট। যে পোশাক পড়াতাম বিনা আপত্তিতে তাইই পরতো। একটুও বিরক্ত করতো না। ছোট হলে কি হবে বেশ বুদ্ধিমান ছিল আতিক।
একবার এক শিশুদিবসে ‘বেবি শো’ দেখতে গেলাম আমাদের সুরুজ ভাইয়ের সাথে। ‘বেবি শো’ আয়োজন করা হয়েছিল সদরঘাটের লেডিজ পার্কে। মঞ্চের দু’পাশে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা। প্রতিযোগিতার জন্য তালিকাভুক্ত শিশুদের লম্বা লম্বা বেঞ্চে বসানো হয়েছে। ডাক্তার শিশুদের স্বাস্থ্য ও ওজন দেখছে। দেখছে পরিচ্ছন্নতা  ও সার্বিক পরিপাটির বিষয়টিও। সবাই শিশুদের উৎসাহিত করছে হাত তালি দিয়ে। মাঠের চর্তুদিকে দড়ি দিয়ে ঘেরা। দড়ির বাইরে সাধারণ দর্শনার্থীদের দাঁড়াবার ও অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ। আতিক সুরুজ ভাইয়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সঙ্গে। হঠাৎ বেবি শো-এর দুই কর্মকর্তা আতিককে দেখিয়ে বললেন, এই বেবির সঙ্গে কে এসেছে। আমরা হাত উঠিয়ে বললাম ‘ওর সাথে আমরা এসেছি’। কর্মকর্তা দু’জন এরপর সুন্দর পরিপাটি পোশাক পরা আর মায়াভরা চেহারার আতিককে কোলে করে ভিক্টোরি স্ট্যান্ডের কাছাকাছি নিয়ে গেলেন। আতিক কিন্তু ‘বেবি শো’-এর কোনো প্রতিযোগী ছিল না। আতিক র্নিবিকার, কোনো  ভয়-ডর নাই। আমরা দেখলাম, ডাক্তার আতিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে, ওজন নিচ্ছে। আতিকের সাথে কথা বলছে। আমরা দূর থেকে শুধু দেখছি। কিছুই শুনতে পাই নাই। সাধারণ একটি শিশু, যার নাম আতিক, বেবি শোতে সে হয়েছে ‘ফার্স্ট’। বার বার আতিকের নাম ঘোষণা হচ্ছে। আমরা অন্য ভাইবোনরা আনন্দে কেঁদেই ফেললাম। সকল দর্শক করতালি দিয়ে আতিককে অভিনন্দিত করতে লাগলো। ভিক্টোরি স্ট্যান্ডে সবার উপরে আতিক; আর এক ধাপ নিচে দু’পাশে সেকেন্ড ও র্থাড হওয়া দুই শিশু দাড়িয়ে। আতিক নিজেই হাততালি দিচ্ছে আর হাসছে। পরদিন খবরের কাগজে এই ছবিটা ছাপা হয়েছিল।
এই ঘটনায় আমাদের পাড়ার সবাই খুশি। দু’তিন দিন কেবল আতিকের এই অর্জনই আলোচনার বিষয় হলো এবেলা-ওবেলা।
আতিকের জন্ম ১৫ জানুয়ারি ১৯৫১। তিন বছর পার হলে বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি করলেন। প্রকৌশলী পিতার অফিসের উল্টো পাশেই আতিকের স্কুল। স্কুলের নাম সেন্ট জ্যাভিয়ার্স কনভেন্ট। আতিক ভর্তি হলো কেজি ওয়ানে। তারপর কনভেন্টের পড়া শেষ হলে আবার ভর্তি হলো সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে। দু’টোই ইংরেজি-মাধ্যম স্কুল। স্কুলে আতিক বরাবরই ভালো ছাত্র ছিল। সে বাবার সঙ্গে ইংরেজিতে কথাবার্তা বলত, আর আমরা অবাক হতাম। তবে আতিক ছিল একদিকে সহজ-সরল কিন্তু চঞ্চল, অন্যদিকে আত্নসম্মানবোধ সম্পন্ন ও পরিচ্ছন্ন স্বভাবের। খেলাধুলাতেও সে বরাবরই ভালো ছিল। তবে আতিক সম্পর্কে আমাদের বাবা বলতেন, “ছেলেটা আমার মতো দুরন্ত হলো না”।
আতিক যখন ক্লাস সিক্সে পড়ে, তখন আমার বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি গ্রামের যে স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেছেন আতিকও সেই স্কুল থেকেই ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিবে। কাজেই বাবার সিদ্ধান্তকে মর্যাদা দিয়ে মা’কে ঢাকার সংসার গুটিয়ে দাদুর বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার রসুলপুরে যেতে হলো। বাবার স্কুল ধলা হাই স্কুলে আতিককে ভর্তি করা হলো। আমাদের গ্রাম রসুলপুর থেকে ধলা হাইস্কুলের দূরত্ব দুই মাইল। কখনো পায়ে হেটে, কখনো বা সাইকেলে চড়ে স্কুলে যেতো আতিক।
আমার যখন বিয়ে হয় তখন আতিক সিক্স-এ পড়ে। ম্যাট্রিক পাশ করে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে আইএসসি’তে ভর্তি হয়। বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় সামরিক বাহিনীর কমিশন অফিসার পদে যোগদানের জন্য একান্ত নিজস্ব চিন্তায় আবেদন করে যা ছিলো আমাদের কাছে অজানা। ঢাকায় সে আমার কাছেই থাকত। ফলে অন্যান্য ভাই-বোনের তুলনায় আতিককে কাছে দেখার, জানার ও বোঝার সুযোগ আমি বোধহয় একটু বেশিই পেয়েছি। কলেজ থেকে সে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসতো। তার প্রধান আকর্ষণ ছিল দাবা খেলা। দাবা খেলায় আমরা সবাই ছিলাম আতিকের শিষ্য। দাবা সে খুব ভালোইর্ পত করেলো। নিজে খেলত এবং এটাও সে মনে-প্রাণে চাইত যে, বাসার অন্যান্যরাও যেন ভালো দাবারু হয়। তার আরও সখ ছিল সবাই মিলে ঘুরে বেড়ানো, নয়তো ছুটির দিনে সিনেমা দেখা। একা থাকলে সে সময় কাটাতো বই পড়ে ও গান শুনে। সজীব একহারা গড়নের সংস্কৃতমনা প্রাণোচ্ছল আতিককে পরিবারের সবাই ভালবাসতো। আমার স্বামী অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান ছিলেন আতিকের সাংস্কৃতিক চেতনা ও যুক্তিগ্রাহ্য চিন্তার উন্মেষের প্রধান সহায়ক। বই পড়ার ক্ষেত্রে এবং পড়ার পর বইটি নিয়ে আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে একটা সখ্যতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। হাতে ধরে আতিককে তিনি বাংলা এমনকি মাঝে মাঝে ইংরেজিও পড়াতেন। বাংলা সাহিত্যে মূলত তাঁর কাছেই হয়েছিল আতিকের হাতে খড়ি। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও আতিক দিন দিনে বাংলা সাহিত্যের প্রতি দারুণ অনুরাগী হয়ে উঠেছিলো।
আতিক আইএসএসবি-তে টিকে যাওয়ার পর আমরা নিশ্চিত হলাম যে, তাকে পশ্চিম পাকিস্তানের কাকুলস্থ মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ট্্েরনিংয়ে যেতে হবে। গ্রামের বাড়িতে আতিকের বাবা-মা তখনও জানেন না যে আতিক কাকুল যাচ্ছে। বাবা-মা তার এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন কি না। পশ্চিম পাকিস্তানীদের সঙ্গে তখনই বাঙ্গালীর সর্ম্পক দিন দিন খারাপ হচ্ছিল।
যাহোক, শেষ পযর্ন্ত সবাই জানল, আতিক কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে যাচ্ছে ট্রেনিং নিতে। আমি আর আমার স্বামী গেলাম বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাতে। বাঙ্গালীদের মধ্যে তখন যেভাবেই হোক সামরিক ট্রেনিং নেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষও বাঙ্গালীদের কিছু অধিক সংখ্যায় সামরিক বাহিনীতে নেওয়ার লোক দেখানো নীতি গ্রহণ করেছিল। বিমানবন্দরে আমরা দেখলাম, কাকুলে যাওয়ার জন্য আতিকের সহযাত্রী আরও বেশ কিছু সংখ্যক যুবক। উদ্দেশ্য একই। এতগুলো টগবগে বাঙ্গালী তরুণকে একসঙ্গে দেখে আতিকের সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ অনেকটাই কমে গেলো।
ভবিষ্যতের বাঙ্গালী সেনা অফিসারদের নিয়ে বিমানটি আকাশে উড়ল। যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ আমরা আকাশে বিমানটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
আতিক আমাকে এবং আমার স্বামীকে কাকুল থেকে প্রায়ই চিঠি লিখত। খামে পরিবারের অন্যান্যদের নামেও আলাদা চিঠি থাকত। এক সময় ট্রেনিং শেষে কমিশন পেয়ে সেকেন্ড লেফটেনেন্ট আতিক ফিরে আসল ঢাকায়। তার পোস্টিং হলো কুমিল্লা সেনানিবাসে। সেখানে জয়েন করে দু’দিনের ছুটি নিয়ে এসে বাবা-মা ও আমাদের সবার সঙ্গে দেখা করে আবার কুমিল্লা ফিরে গেল।
১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসে বাংলার দক্ষিণাঞ্চলে স্মরণাতীতকালের প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়। জানমালের ক্ষতি হয় বর্ণনাতীত। এক কথায় বিশাল এলাকা সম্পূর্ণ তছনছ, লন্ডভন্ড। এ অঞ্চলে অবস্থানকারী সেনা বাহিনী, বিশেষ করে বাঙ্গালী সৈন্য ও অফিসাররা ছুটে গেল উপদ্রুত এলাকায়। আতিকও ছিল তাদের একজন উদ্ধারকর্মী। পাকিস্তানের পশ্চিমা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের কেউই সেখানে আসেনি। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশেও দাঁড়ায়নি। সেসময় নিজ হাতে আতিক অনেক লাশ উদ্ধার করেছে। অন্যদের সঙ্গে মিলে দূরবর্তী এলাকায় লাশ নিয়ে দাফন করেছে। আমার মনে আছে, ত্রাণ কার্যে নিয়োজিত আতিকের ছবি প্রকাশিত হয়েছিল ইত্তেফাকে। আমরা সেই ছবি দেখে দারুণ গর্বিত। একবুক পানিতে দাড়িয়ে উদ্ধার কাজ করছে এক বাঙ্গালি সেনা অফিসার। সে আমাদের আতিক।
সেসময়কার এবং পরবর্তীকালের বাঙ্গালীর সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সবারই জানা। সেই ইতিহাস পাকিস্তানীদের হাতে পৃথিবীর জঘন্যতম গণহত্যার ইতিহাস। সেই নৃশংসতা, বর্বরতা ও বিশ^াসভঙ্গের ওপর অনেক লেখালেখি হয়েছে। আমার দুর্বল লেখনীর সামর্থ্য নেই তা প্রকাশ করার। শুধু প্রসঙ্গক্রমে বলছি, সেই তান্ডবে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা বাহিনী চরম নিষ্ঠুরতায় অনেক বাঙ্গালী  সৈন্য ও অফিসার নির্বিচারে হত্যা করেছিল। তাদের একমাত্র অপরাধ ছিল তারা স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালী। আতিকও চেয়েছিল কুমিল্লা সেনাবাহিনী থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিতে; কিন্তু সে তা পারেনি। তার আগেই বাঙ্গালী অফিসারদের নিরস্ত্র করে  গ্রেপ্তার ও হত্যা শুরু করে। আতিকও গ্রেপ্তার হয়ে যায় এবং নিষ্ঠুরভাবে ৩০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে তাকে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়। তার সঙ্গে একইভাবে জ্ঞাতিভাই লে. কর্ণেল আনওয়ারুল ইসলামসহ মোট ২৪ জন সেনা অফিসারকে  সেদিন হত্যা করা হয়। ব্রিগেড গ্রাউন্ড-এ সারি সারি করে দাঁড় করিয়ে নিরস্ত্র সাধারণ সৈন্যদের ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলা হয়। বিধির কি বিধান ছেলের অপেক্ষায় থেকে থেকে অসুস্থ পিতা ঢাকা মেডিকের কলেজে একইদিনে ৩০ এপ্রিল ১৯৭২ সনে না ফেরার দেশে চলে যান।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আতিকের সন্ধানে আমরা ছুটে গেছি বার বার কুমিল্লার ময়নামতিস্থ সেনানিবাসে। অবশেষে ৪ মে অনেক মরদেহ তোলা হলো। পরের দিন সেখানে পৌঁছালে গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী রমনীশীল আমাদেরকে সাথে নিয়ে সব দেখালো। একে একে শহীদদের দেহগুলো কাঠের বাক্সে সারি সারি করে রাখা। আতিকের পরনে তখনো ইউরিফরম। বা দিকের বুকে ধুলা মাখানো শুকনো রক্ত। আমি তার দেহটাকে উল্টে দেখলাম। দেখি পেছনে কিছুই নেই। বুলেটের আঘাত শরীরের সবকিছু নিয়ে বেরিয়ে গেছে। তবুও মনে হলো আতিক যেন হাসছে। আমি তার সম্পূর্ণ দেহটাকে সদ্যফোটা কৃষ্ঞচূড়া দিয়ে ঢেকে অভিবাদন জানালাম। আতিকের সাথে এই আমার শেষ দেখা।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা করা বহু সেনা ও বেসামরিক লোককে হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। একসঙ্গে অনেক লাশ একই গর্তে মাটি চাপা দেয় বর্বর পাকিস্তানী সৈন্যরা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সমস্ত গর্ত খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় অগণিত শহীদের দেহাবশেষ। তাদের অনেককে সেনা বাহিনীর ডাক্তার এবং তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ‘আসামী’ ডা: কণের্ল খুরশীদের তত্ত্বাবধানে শনাক্ত করা হয়। সেই শহীদেরই একজন সেকেন্ড লে: আতিকুর রহমান সিরাজী। শহীদ আতিক এখন আরও অনেক শহীদ সেনাদের সঙ্গে ঘুমিয়ে আছে কুমিল্লা সেনানিবাসের বিশেষ সমাধিস্থলে। সমাধিস্থলের গেটে লেখা,‘যাঁদের রক্তে-মুক্ত স্বদেশ’। সমাধিস্থলের পাশে রয়েছে একটি ছোট যাদুঘর। যাদুঘরে আতিকসহ আরও অনেকের স্মৃতিচিহ্ন এবং তাদের সম্পর্কে তখনকার পত্র-পত্রিকায় লেখা করুণ ভয়ঙ্কর অনেক কাহিনি মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করছে। সেসব কাহিনি পুনঃমুদ্রিত হয়েছে ‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র’ সংক্রান্ত ১৬ খ-ের প্রকাশনায়। অষ্টম খ-ে একটি রিপোর্টে আতিকসহ অনেক সেনা অফিসার ও বিশিষ্ট দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হত্যা কা-ের বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অসহায় ভগ্ন হৃদয় নিয়ে বহুবার ছুটে গেছি কুমিল্লা সেনানিবাসে আতিকের খোঁজে। কতবার যে চারটা নদী পার হয়েছি নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুধু ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর সত্যটুকু জানার জন্য। শেষ অবধি আমরা সাহস হারাই নাই, হারিয়েছি প্রিয়জনদের। যাঁরা একে-একে হয়েছেন ত্রিশ লক্ষ শহীদ।  তাঁদেরই রক্তে ¯œাত আমাদের মাটি ও পতাকা। অভিবাদন আমাদের সকল শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি।