১.
আফ্রিদা তানজিম-এর চিত্রকলা প্রদর্শনী মোহাম্মদপুরে কলাকেন্দ্রে শুরু হয়েছিলো জানুয়ারি ১২, শেষ হলো জানুয়ারি ২৭। আর ১৫ তারিখেই, আফ্রিদা’র জীবনাবসান ঘটলো- দৈহিক মানবী জীবনের, সঙ্গে-সঙ্গে তার চিত্রশিল্পকর্ম-জীবনের। মাত্র ২১ বছরে যখন আত্মহত্যা করেছে, তখন তার নিজের মনে দ্বন্দ্ব অবশ্যই ছিলো, হয়ত অনেকদিন ধরেই ছিলো। তার কিছু ছবির মধ্যে সেইসব সংকটের প্রকাশ আছে। কিন্তু সেই মানসিক প্রক্রিয়া, অন্তর্ঘাত, অস্থিরতা, বেদনা, এ-সব নিয়ে আমি বিস্তার করবো না। আমার মূল উদ্দেশ্য, আফ্রিদির ছবির গুণাগুণ, শিল্পগত গুণ। এবং সঙ্গে-সঙ্গে তার কল্পনা, বরং জীবনানন্দীয় ভাষায় আফ্রিদা’র কল্পনাপ্রতিভা, যার জন্য তার ছবিগুলো সম্ভব হয়েছে।
২.
প্রথমেই বলে রাখি, আমি যা দেখেছি সব ইন্টারনেটের মাধ্যমে। প্রত্যক্ষ ছবি দেখার সুযোগ এখন আমার নেই। তবু বোঝা যায়। আফ্রিদা যা এঁকেছে তার মধ্যে ড্রয়িং (পেনে, পেন্সিলে) এবং অ্যাক্রিলিক, প্যাস্টেলে আঁকা। অয়েলও আছে, তবে কোনটা তেলরঙে, তা ঠিক ধরতে পারি নি। ইউরোপীয় ক্লাসিকাল ট্র্যাডিশনের ড্রয়িং আফ্রিদা করে নি। তার নিজের ঢং, কিন্তু হাত পাকা,– এই অর্থে যে সে তার অভিব্যক্তি ঠিকই দৃঢ়ভাবে দেখাতে পারে। তার একাকীত্বের সংকটজনিত কয়েকটি শুধু কালির ড্রয়িং আছে,– অ্যাবস্ট্র্যাক্ট, শুধু রেখার প্যাঁচানো কিন্তু দ্যোতনাশীল। সেগুলো আমি এখানে দ্যাখাচ্ছি না। নিচের আত্মপ্রতিকৃতিটিই অদ্ভুতভাবে নানা অনুভূতির বাহক। শাদা-কালোর মধ্যেই টোনালিটি, কিওরসোকুরো (শাদা-কালোর ভেদে অন্তর্দীপ্তি), ত্রিমাত্রা- সমীচীন এবং বিমূর্ত, দুটোই- সব আছে। অথচ মনে হচ্ছে পানিতে আলো ছায়ার যে ভেদ হয় তারই পরল দিয়ে এঁকেছে কেউ। মেধা এবং বহু পরিশ্রমেই এই অর্জন সম্ভব, যা চিত্রকরের অরিজিনালিটি ধরিয়ে দ্যায়। পরের প্রতিকৃতিটি সিমপ্লি অসাধারণ।
শাদা-কালোয় জীবন্ত- আদলে, ভ্যলুমে, বর্তুলে, অর্ন্তদীপ্তির স্ফূট চারিত্রে, মনন উপস্থাপনার কল্পনায়। তার মাথার চারপাশে কি বিদ্যুৎ, কি চ্ছটা, কি কোন লাভার স্ফূরণ, কি বৃক্ষশিকড়ের চাঞ্চল্য, কি কিছু খুদে জীবের বিচরণ ? কখনো ফুলের পাপড়ির ফেটে পড়া! আর কপাল, নাকে, মুখে ত্রিমাত্রার মধ্যে প্রবহমান প্রাণ-স্রোত। উজ্জ্বল দাঁতা আর চশমার মধ্যে দিয়ে দু’থোকা ছোট ছোট চখের সমাহার। বাস্তব এবং কল্পনার রসায়নে এক ইউনিক আত্মপ্রতিকৃতি।
একটি আশ্চর্য পাখি এঁকেছে আফ্রিদা, রঙিন। তারিখ দেয়া আছে / ৮/ ১৪। অপরূপ এবং অসাধারণ। রিয়ালিস্টিক ছবি, এতো বাস্তবিক অন্য ছবি নেই গ্যালারি প্রদর্শনীতে। ডালটি শাদা-কালোয়, মূর্ত, পত্রালীহীন – যেন শীতের। ডালের শাদা কালোর বিন্যাস তার তৃতীয়মাত্রার দূরত্ব খুব সূক্ষ্মতার সঙ্গে প্রকাশ করেছে। কিন্তু পাখিটি রঙিন – নীলমাথা, লাল্বুক, হলুদ-সবুজ-লাল আর তাদের ভিন্ন শেডের। চোখ, ঠোঁট কালো। কালো ও কালচে সবুজের ব্যাকগ্রাউন্ডে অদ্ভুত ফুটে উঠেছে পাখিটি, থমকানো শান্ত দৃষ্টি। ডালের শাদা-কালোর মতো কিন্তু রঙের দক্ষতায়, পাখির লাল-নীল-হলুদ-সবুজ-শাদা রঙ আর তাদের মধ্যে হাল্কা কালোর ব্রাশ পাখিটির শরীরের তৃতীয় মাত্রাকে জ্বলন্ত করেছে। কৌশলে, মর্মীতায়।
এটি পূর্ণ ছবি, ড্রয়িং নয়। তবে এতোটা বললাম এই জন্য, যে এই ছবির অন্তরে পাকা ড্রয়িং সেঁধানো আছে এবং যা পরিপক্ক চিত্রশিল্পীই পারে।
টেকনিকাল দক্ষতার সূত্রে শুধু ড্রয়িং-এর কথা একটু বললাম। কিন্তু পুরো শর্তে,
ড্রয়িং
ত্রিমাত্রিক ডেপথ
কম্পোজিশন
পারস্পেক্টিভ
রঙ
মু-ন
আলো
এবং তদুপরি কল্পনার কথা বলতে হবে। বলবো, সংক্ষেপে- আফ্রিদি’র ইউনিকনেসের প্রতি লক্ষ্য রেখে – প্রধানত তার দুই বিষয়ধারার ছবি ধ’রে।
৩.
আফ্রিদি’র ছবির বিষয়বস্তু হচ্ছে: প্রকৃতি, আত্ম- মানে নিজে সমূহ অস্তিত্বসহ, পরিবার, সমাজ ও তার মানুষ। আসলে, এতে তো সবই ধরা পড়ে। তবে, বাছাই- চিন্তা-কল্পনা-প্রকাশ আফ্রিদি’র।
৪.
ব্যক্তিগত বিষয়: তার বিষণœতার ছবি নিয়ে বলবো না বলেও দুটি চিত্র এবং একটি ভাস্কর্যের কথা তুলতে হচ্ছে । তবু আমার প্রক্ষেপ চিত্রকর্মের শৈলী এবং সার্থকতার দিকে। প্রথম ছবিটির নাম কি, তা জানি না। আফ্রিদি ছবিটি পোস্ট ক’রে সঙ্গে একটি কবিতার মতো ধারাবিবরণী দিয়েছিলো। সেটি উদ্ধৃত করছি না।
৪. ক: - এ এক অদ্ভুত চিত্র- সাইকিডেলিক, সুর-রিয়াল, যাদু-বাস্তব, পপ- অনেক কিছুই আখ্যা দেয়া যায়। কিন্তু নাম বড়ো নয়, বড়ো হচ্ছে ব্যাপক অভিজ্ঞতা এবং মানসিক ভূগোলকে কি ভাবে ক্যানভাসের আওতায় আনা যায়। এখানে অনেক চিত্র, একটি চিত্রের শাখা থেকে অন্য একটির শাখা-লতা-পাতা, তার পাশে আরেক বৃক্ষ –আবার তার শাখা-লতা-পাতা, পাশে আকাশও আছে, অন্ধকারও আছে। কেন্দ্রে একটি তরুণী চোখ, সেই দেখছে । উদরস্থিত শিশুটি উজ্জ্বল, তার প্রতিবেশটুকু উজ্জ্বল। কিন্তু অন্যান্য শাখা-প্রশাখার ছবিতে ধূসর কালো বেশি। দানব, পিশাচ, ভুত, গ্রহ-তারকা, নগর, কর্পোরেট-কারিগর, মোটরকার, দেয়াল, শ্রমিক, রোবট, যেন বৃক্ষোদ্ভূত রোবট পুরুষ, পিঁপড়ে, মাথায় পিস্তল তাক করা জনতা, যৌনতা, ধ্যান (নিচে ডান কোণে), দালান – সব মিলিয়ে এক অবাক-করা মানসিক চিত্র এঁকেছে আফ্রিদা। পুরো ক্যানভাস রঙে ভরানো, তবু রেখার প্রাধান্য আছে – রেখার মাধ্যমেই অনেক অকথ্যকে বলা। যেখানে বাঁ দিকে আর্তনাদের মুখ সেখানে কালোর ভিতর দিয়ে কিছু টোনালিটি - চীৎকারের তীব্রতায় এবং মুখ-মাথার থেকে বি¯্রস্ত হওয়া অসংখ্য টেলিভিশনের অপনেয়তায়। এই ছবির নিঃসঙ্গতা, আর্তি, যন্ত্রণার বোধ আমি পাঠক, দর্শকদের ভার দিচ্ছি। যা বললাম, তা চিত্রের প্রকাশ ক্ষমতার কথা। জানি না, এই ছবিটির কোনো নাম দেয়া হয়েছিলো কি না ! কিন্তু এর নাম হতে পারতো, “সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে”।
৪. খ: - এই ছবিটি একটি ভুক্তভোগী প্রধান মুখ এবং অন্য দুটি মুখের – কানে কথা বলা এক নারী ও এডভার্ট মুংক-এর আঁকা “চীৎকার”-এর মুখের সমন্বয়ে আঁকা। আসলে এটি একটি যৌন অত্যাচারের মূর্ত-বিমূর্ত প্রকাশ। কিন্তু কি শক্তি ! নারীটির গলায় থাবানো-চাপানো হাত, কানে কারুর মন্ত্রণা। কিন্তু নারীটির চোখদুটো টর্চের গোলার মতো ঠিকরানো আর তার মানসপটে এডভার্ট মুংক-এর “চীৎকার”-এর স্বরূপ। তার মুখের কাছে সুতোয় ঝোলানো একটি আপেল এবং নীচে বাঁ কোণায় যৌনচিহ্ন।
এ এক অদ্ভুত চিত্র কালো, শাদা, খয়েরি, লাল, নীল, হলুদে আঁকা । এই ছবিতে রেখার চাইতে টোনালিটি বেশি, যাতে তৈলচিত্রের ক্ষমতা প্রভাসিত। ছবিটি কি অ্যাক্রিলিকে ? জানি না। তবে, কিছুটা অ্যাবস্ট্রাক্ট হলেও, মু-ন- বর্তুলায়নের প্রকাশ আছে – ক্লাসিক রীতির নয়, আফ্রিদির নিজস্ব শক্তির। এই ছবিতে আমি মানতে রাজী যে, আফ্রিদা অয়েল পেইন্টার এবং বেঁচে থাকলে এক সম্মোহনকারী বাংলাদেশী তৈলচিত্রী হতে পারতো। তার চিত্র-বিষয়কে যে ভাবে মূর্ত করা হয়েছে তা শক্তিতে অতুলনীয়।
৪. গ: একটিই ভাস্কর্য, বেদনা-চীৎকার-আর্তনাদের মুখ। বিমূর্ত-অবিমূর্ত । দর্শক, নিজেই বিচার করুন – মুংক-এর চীৎকার, সিক্যুরিয়স-এর চীৎকার, পিকাসো’র গুয়েরনিকার চীৎকারের পাশে।
৫. পুস্তকের প্রচ্ছদ? দেখে চিত্রই মনে হয়। আবছা একটি দোকানের পটভূমিতে, যেখানে “দি নিউ রহিমা পদ্যবিতান” সাইনবোর্ড, একটি বইয়ের শেলফ, আটজন নারী এবং একটি পুরুষ ব’সে আছে। কালোর থেকেই ফুটে উঠেছে মানুষগুলো। লক্ষ্যণীয় ট্রাডিশনাল টোন নয়ম খুব খাড়া ক’রে রঙ ব্যবহার করেছে আফ্রিদা। তাতেই মুখভঙ্গীর ডিটেল ব্যঞ্জনা ফুটে উঠেছে। আর শাড়িগুলোতে সামান্য ফুটকিতেই ডিজাইন। চমৎকার ইকোনমি ।
৫. কল্পনা - অপরূপ এবং শক্তিশালী একটি ছবি। দুরন্ত, ভয়াল প্রতিবেশ, প্রকৃতি থেকে কন্যা-শিশুকে আগলে রেখেছে মা। হননকারী প্রতিবেশ মেরুন পর্দা উন্মোচন ক’রে শাদাটে আকাশে বিক্ষুব্ধ উড়ন্ত পাখিরা। আর মা শিশুকে খাটের নিচে লুকিয়ে হাত আগলানো। মা, সে দরদী পাখি, পাখাবৃত- অথচ চোখ জ্বলন্ত। রেখা নয়, রঙ আর টোনের প্রাধান্য – নন-ট্রাডিশনাল।
৬. আরো দুটো চিত্র - এরা আত্মজীবন বিষয়ক নয়, বহির্বাস্তবিক ঢাকার জীবনের। প্রথমটি নগরের একটি সরু রাস্তার, যার দুপাশে শেডওয়ালা দোকানের সারি। একটি খোলা, বাকী বন্ধ। সামনের ডানের দোকানটির শেড দোমাড়ানো । দূরে গলির প্রত্যন্ত দেশে, দুই পুলিস আর সহযোগীরা খুঁজছে আর জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পুলিস আর দোমাড়ানো শেড থেকে বোঝা যায় কোনো অঘটন ঘটেছে, উচ্চারিত না হলেও, সম্ভবত সন্ত্রাসী ঘটনা। সামনের দিকে এক বৃদ্ধ- শাদা দাড়ি, শাদা জামা- লুঙ্গি একটু তুলে স্যান্ডেল পায়ে উল্টো দিকে হেঁটে আসছেন। হাল্কা বৃষ্টি, তাঁর পিছনের দুজন ছাতা মাথায় সম্মুখগামী। দূরে আবিছা দালান, ল্যাম্পোস্ট। রিয়ালিজম হয়েও ঠিক রিয়াল নয়। ঘটনার অন্তর্গত রহস্য দর্শককে অভিভূত করে। শৈলীর দিক থেকে যা ভীষণ পোক্ত, তা পার্সপেক্টিভ এবং কম্পোজিশন। রাস্তা- গলির দূরত্ব চমৎকার খুঁটিনাটিতে বিন্যস্ত। টিনের শেডগুলোও জীবন্ত, ঝাপসা বৃষ্টির আবহে। সবচেয়ে মোক্ষ হচ্ছে প্রান্তিকের দুই পুলিস আর দু-একজনের সমারোহ- খুবই ইকোনমির মধ্যে একটা ডিটেকটিভ ঘাপলা ফুটে উঠেছে। এবং যার থেকে ত্বরিত পদে বৃদ্ধ ভদ্রলোক দূরে স’রে আসছেন। দক্ষ, সম্মোহনকারী চিত্র।
পরের ছবিটি অসাধার- শহরের রাস্তার রিকশা আর মানুষের চিত্রায়ন। বিষয় , কম্পোজিশন, পার্সপেক্টিভ, রঙ, ডিজাইন, ভাব, আলো, কিয়ারসোকুরো – কোনটাকে বলবো। সবই চূড়ান্ত দক্ষ। এই দৃশ্য তো ঢাকায় আমরা প্রতিদিনই দেখি। কিন্তু কোন চিত্রকরের ক্যানভাসে এসেছি কি ? এই ভাবে! ছবিতে রিক্সা, মানুষ উভয়েই জ্বলন্ত। কত বিচিত্র রিকশা, নানা রঙের ডিজাইনের ‘; মানুষ- ভিন্ন বয়সের, ভঙ্গীর, চাহনীর, পোশাকের, অভিব্যক্তির। একটি দুটি ভ্যানও আছে, রিকশার মধ্যে মিশে। ভ্যানের উপরকার উল্টো দিকে চাওয়া মানুষটিকে দেখুন - তার কাপড়ের ভাঁজ। রস্তাটি যে নিচে, তাও পরিস্ফূট। যেমন টোন, তেমনি কালার, ছোট দূরত্বের মধ্যেও পার্সপেক্টিভ। অসাধারণ ।
৬. আফ্রিদা’র শক্তি -
আফ্রিদা যে ধরনের বিষয় নিয়ে চিত্রকর্ম করেছে, তা বাংলাদেশ কেন সারা ভারতবর্ষেই বিরল। নদী, নৌকো, চাষী, বৃক্ষ এবং বিশেষ প্যাটার্নের নারী-পুরুষ অথবা অ্যাবস্ট্রাক্ট মডার্নিজমের অনুসরণ। আর আমাদের কাজ বেশি রেখাপ্রধান। আর রঙের প্রলেপ প্রধানত ফ্ল্যাট, দ্বিমাত্রার দিকে। মু-ন, আবর্তন, ভ্যলুম, টোন, পার্সপেক্টিভের প্রধানতা নেই। নানা কারণ। সেদিকে যাবো না। শুধু শিল্পী কামরুল হাসান-এর একটি লিখিত মন্ত্যব্য স্মরণ করি: “ চিত্রকলা সংজ্ঞা ধরতে গেলে, যাকে আমরা পেইন্টিং বলি, তা জলরং বা তেলরঙ-এর হোক, যেমনটি পশ্চিম ইউরোপে ভা জাপানে দেখি ঠিক তেমনটি আমাদের নেই।’১ এই সূত্রেই, আফ্রিদা’র কাজে, অল্প কালের হলেও, এক দেশজ তৈলচিত্রের সম্ভাবনা ছিলো। আমি সেই অর্থে বলছি যেখানে দিয়েগো রিবেরা, ওরোসকো, সিক্যুরিয়স-এর তুলিতে মেক্সিকোর চিত্রকর্ম গড়ে উঠেছিলো।
৭. আত্মকথা -
তার অভিজ্ঞতা এবং শিল্পসত্তার কথা কিছু লিখেছিলো আফ্রিদা তার ব্লগে এবং নোটবইতে। ‘আমি আঁকি, কারণ এই কাজে নিজেকে কখনও জোর করতে হয় না। শিল্প আমাকে অভিভূত করে এবং ভাসমান আবেগ ও আমার অস্তিত্বহীন ভাবনার সমাধিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। সময়ের উপলব্ধি আমার কাছে অস্পষ্ট, কিন্তু সুখ পাই এই ভেবে যে আমার বর্ণগুলো আমার মনে ধরে আছে।’
‘আমার অস্তিত্বের একমাত্র প্রমাণ হচ্ছে আমার চিত্রকর্ম। ওগুলোই আমার প্রতিকৃতি। আমার যতো বলা, না বলা কথা। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় এরকম একটা সময়ে কেন আমি একক প্রদর্শনী করার সিদ্ধান্ত নিলাম – তাহলে আমি বলবো অতীতের সঙ্গে মিলবার, শান্তি স্থাপন করার জন্য এ আমার একমাত্র পথ। আমি আমার নিজের থেকে, পৃথিবীর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। কিন্তু প্রয়োজন অনুভব করেছিলাম দেখার এবং দেখানোর এবং অবশেষে মুক্তি পাবার। আমার চিত্রকর্মের সামনে দাঁড়িয়ে আমি কখনও স্বস্তি পাই নে। যেসব ঘটনা আমি ভুলে থাকতে চাই, ছবিগুলো সেসব ঘটনা আমাকে মনে করিয়ে দেয় অথচ আমিই সেগুলোর অমরত্ব দান করে চলেছি। সেইসব কথা ভুলে থাকতে পারতাম হয়তোবা কিন্তু ছবিগুলো, ইমেজগুলো তো আর মুছে ফেলা যায় না।ৃ যখন আমি মরিয়া হয়ে উঠি নিজেকে প্রকাশ করার জন্য, পৃথিবীর সঙ্গে কমিউনিকেট করার জন্য- তারই এক আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফসল হচ্ছে আমার সেলফ পোর্ট্রেট। কখনও আমি নিরপরাধ মানুষের সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি করি, হিস্টিরিয়া-গ্রস্ত লোকের মতো আচরণ করি, কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই ছবি আঁকি। যখন কিছু বলতে চাই কিন্তু বলার মতো মানুষ খুঁজে পাই নে, তখন আমি ছবি আঁকি। আর যদি সেরকম কাউকে পাইও, নিজেকে প্রকাশের জন্য শব্দ বা কথা খুঁজে পাই নে।’ - // অনুবাদ, রাজিয়া সুলতানা।
৯. শেষকথা - তার ছবির এক্জিবিশনের নাম দিয়েছিলো লস্ট ইন ট্রানজিশন। মনের সঙ্কল্প সে জানতো। তবু, আফ্রিদা’র উজ্জ্বল উচ্ছল হাসিখুশির ছবিগুলি আমাকে অবাক করে। আনন্দ তো ছিলো তার মধ্যে। তার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ, আফ্রিদা মে ২৫, ২০১৫’র একটি নোটে লিখে গিয়েছে – আফ্রিদা’র থেকে আফ্রিদা’র কাছে চিঠি ।
AfridaTanzim published a note.
May 25, 2015 •
To Afrida, From Afrida.
Dearest Afrida,
You may be in midst of great despair or drenched in immense misery. Your insides may crumple with agony and your heart may freeze in pain. You just might go blind in anxiety and in nervousness you may go deaf, but regardless of how you may feel, just know! Know that...that right this very moment...You are happy.
You are as happy as a child who just learnt to spell her name out loud. You are as happy as a bird that fluttered her wings for the first time and felt the breeze swirling beneath her feathers. You are as happy as the sun that shines after a heartbreaking storm. YOU ARE HAPPY! YOU ARE FEARLESS! Your heart is as light as the mist hovering over the dew dropped grass on the first morning of winter.
Some days it may feel like the end of the world, but believe me, IT’S NOT! IT NEVER IS. Time heals all wounds, my dear. However, for the time being I shall prescribe you with one special medicine, and that is: PATIENCE. Be patient till the storm has passed. When the right time comes you will witness the dark clouds mystically disappearing. The vibrant colors of the rainbow will find its way to your heart and fill the hollow spaces with bright and beautiful shades of red, orange, yellow, green, blue, indigo and violet. The gentle sunlight will glisten upon your eyes and dry those nasty tears.
Never fear loneliness, for I am the shield that defends you from the cruelty of reality. I am the spine that holds your head up high and the rib cage that guards your fragile heart. I am you.
With love, Afrida
অনুবাদ করি নি, কেননা আফ্রিদা’র নিজস্ব শব্দ শোনা দরকার। ‘প্রিয়, সময় সব ক্ষত সারিয়ে তোলে – রঙধনুর স্পন্দিত রঙগুলো তোমার হৃদয় খুঁজে বার করবে আর সব শূন্যস্থান লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, বেগুনী রঙের উজ্জ্বল প্রচ্ছায়ায় ভ’রে তুলবে। ধীর সূর্যালোক তোমার চোখের উপর চ’মকে বিশ্রী চোখের জলগুলো শুকিয়ে দেবে।’ দুঃখ, তা হবার ছিলো না । আফ্রিদা তানজিম-এর অ্যালবাম অসমাপ্তই রয়ে গেল।
নির্ঘণ্ট:
১ কামরুল হাসান, আমাদের কথা: বাংলাদেশের শিল্পী আন্দোলন