কেমন হতো যদি যা ভাবছি তা বলতে পারা না যেতো?
বলতে পারছি বলেইতো বুঝতে পারছি, বোঝাতে পারছি, তাই না? আসলে কোন ‘ভাবনা’ বলতে পারাটা শেখার ক্ষেত্রে আর বোঝানোর ক্ষেত্রে একটা শক্তি। শিশুরা যখন গল্প বলে, ‘তোমার মনে আছে? আমার ছোট বেলায়...’ মনে করার কী এক চেষ্টা, প্রকাশ করার কী ভঙ্গি! এই চেষ্টায় আছে অতীতকে ছুঁয়ে দেখার বাসনা, আছে আত্মতৃপ্তির পরিসরকে বেশ ঘটা করেই বড় করার প্রবণতা। আবার যেমন: এক যে ছিল রাজা, ৃএভাবে শুরু করলে একটা উৎকণ্ঠা বা সাসপেন্স তৈরি হয়। যা ছিল তা এখন নেই কিন্তু স্টো কত ভালো ছিল! আসলে বলতে পারছি বলেই না এত সব।
গল্প বলতে পারাটা শক্তি। জীবনের প্রথম তিন বছরে শিশু বলতে পারার শক্তিটাকেই পোক্ত করে নেয়। তারা তখন গল্প বলতে শেখে, বলার সময় গল্পের প্রধান চরিত্রগুলোকে চিহ্নিত করতেও পারে। বলার শক্তিকে শাণিত করার পদ্ধতি বা উপায় কিন্তু একটাই; কথা বলা, সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানো। কথা বলার কিছু সরঞ্জাম বল, পুতুল বা পশু বা পাখির খেলনা। অন্য কিছুও হতে পারে। একটা কাঠের টুকরাকে গাড়ি বানিয়েও খেলা যায়।) সাথে থাকলে আরও ভালো হয়।
যে কোন বই থেকেই গল্প পাঠ শুরু হোক। পড়ার আগে বইটির লেখক সম্পর্কে জেনে নিলে বেশ ভালো হয়। শিশুদের মধ্যে লেখকের অভিজ্ঞতার সাথে লেখার মেলবন্ধন খুঁজে বের করা সহজ হয়। গল্প পড়ার সময় কন্ঠস্বর ওঠানামা করানো, শিশুদেরকে অক্ষরগুলো ছুঁয়ে দেখানো, শিশুদের দিয়েই বইয়ের পাতা ওলটানো, গল্প পড়তে পড়তেই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা, কিছু কিছু শব্দের উচ্চারণের সাথে সুর জুড়ে দেয়া- এ সব গল্প পাঠের মান বাড়িয়ে দেয়।
কেমন হয় যদি গল্প পাঠের পর সেই গল্পটাই শিশু নিজের মতো করে বলতে চেষ্টা করে! আমিতো বলবো দারুণ! গল্প বলা এবং পুনঃ পুনঃ একই গল্প বলার চর্চা প্রতিবারেই নতুন শব্দ শেখাবে, শেখাবে বলার নানা ভঙ্গী, ভাবতে শেখাবে নতুন করে প্রতিবার!
গল্প পাঠের জন্য একটা রুটিন থাকা কিন্তু দারুণ ব্যাপার, কারণ তাতে করে একটা ফ্লো থাকে। ঘুমাবার আগে হলে মন্দ হয় না বা বিকেলের আড্ডায়, ঘোরাঘুরিতে বা ট্রাফিক জ্যামে! যখন বা যেখানেই হোক রুটিন থাকুক। গল্প করা বা বলার সময় টিভি বন্ধ থাকুক। আর মাঝে মাঝে শিশু নিজেই বেছে নিক তার বই। নিজের পছন্দে, পাঠের আনন্দ বাড়ে বহু।
গল্প বলার চর্চা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অন্যতম ভিত্তি। নতুন শব্দ শেখা, বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ানো, উচ্চারণ শেখা- এ সবই কিন্তু গল্প পাঠের উপকারিতা। একটা শিশুর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য গল্প পাঠ বা বলার কিন্তু বিকল্প নাই।
কেন গল্প বলা; এ নিয়ে দরকারি সব কথা অনলাইনেই পাওয়া যাবে। কিন্তু তার আগে একবার নিজেরাই বসে ভাবি না কেন, আমাদের শৈশবে আমরা কেন গল্প পড়েছি, শুনেছি বা বলেছি? নিজেদের বোঝার কারণগুলো অনলাইন থেকে খুব আলাদা হবে না। যা ভালো তা ভালোই। কাজেই হিসেব কষে হোক বা না কষে ভালো কিছুকে স্বাগত জানাতে কোন ক্ষতি নেই! তবে চলুন, গল্প পড়া-বলা-লেখা শুভ হোক, শুভ সূচনা হোক তবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আর সাজানো হোক একটি চমৎকার শৈশব।