[সম্পাদকের নোট: মানুষের জীবনসায়াহ্ন অনেক বেশি নৈঃসঙ্গের। বিশেষ করে যিনি দূরারোগ্য মারণব্যাধিতে ভোগেন, যিনি অনেকটা জেনেই গেছেন যে তার বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে। ড. ফজলুল আলম ফুসফুসের ক্যান্সারে প্রায় মরোমরো অবস্থায় পৌঁছেছিলেন বেশ ক’বছর আগে। তার ভাই দেশের অন্যতম ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসক ফজলুল করিম তখন তার অ্যাগ্রেসিভ ট্রিটমেন্ট করেন। চিকিৎসায় কাজ হয়। তিনি ফিরে আসেন জীবনে, কিন্তু ক’বছরের জন্য!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারটির আধুনিকায়ন ঘটে এই ফজলুল আলমেরই হাতে। যদিও যৌবনের প্রায় পুরোটা সময় তিনি কাজ করেছেন ইংল্যান্ডে। দেশে ফিরে এলে অল্প যে ক’জন তরুণ লেখকের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে তাদের ভেতর ছিলাম আমিও। বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও প্রায় এক যুগ বলা যায় আমি ছিলাম তার কাছের ‘বন্ধু’। প্রথম থেকেই তাকে ড. আলম বলেই সম্বোধন করতাম, একটু হয়ত বেখাপ্পাই শোনাত অন্যদের কানে। তাকে যিনি ছোটকাকু বলতেন, এবং অধুনা সুনাম অর্জনকারী চলচ্চিত্র ‘ছোট কাকু’ যার কাহিনী নিয়ে নির্মিত সেই ফরিদুর রেজা সাগরকে বলি সাগর ভাই। সাগর ভাইয়ের মা খ্যাতিমান কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুনকে ডাকি রাবেয়া আপা। ছোট কাকু সিনেমার প্রিমিয়ারে গিয়েছিলাম শুনে ড. আলম মিটিমিটি হেসে বলেছিলেন, ‘জান তো আসল ছোট কাকু কে?’ সাগর ভাইয়ের বাবা-চাচাদের জীবন সিনেমারই মতো। সেখানে এই ছোট কাকু অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং আশ্চর্য এক চরিত্র- বুদ্ধিদীপ্ত, প্রাণবন্ত, আড্ডাবাজ, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। সেই প্রসঙ্গ থাক। ড. আলম অকস্মাৎ চলে গেলেন। এই যে বিদায় না নিয়ে তিনি চলে গেলেন এ নিয়ে তাকে দু’কথা শোনানোর সুযোগ তো আর পাচ্ছি না। বেশ অনেক বছর যাবত রাবেয়া আপা আর সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন একসঙ্গে পালিত হচ্ছিল মহাসাড়ম্বরে। কয়েকটিতে আমি গেছি। সৈয়দ হকের চিকিৎসা যখন চলছে লন্ডনে সে সময় একদিন ড. আলম বললেন, অনেককাল তার দুই ছেলেমেয়েকে দেখা হয় না। ওদের দেখতে লন্ডনে যাবেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই। ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেখা করার পর তার সবচেয়ে বড় কর্তব্য হবে সৈয়দ হকের সঙ্গে দেখা করা। হাসপাতালে গিয়ে তার হাত ধরে অভয় দেয়া। ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে তিনি তো এতগুলো বছর বেঁচে আছেন, প্রতি বছর জোড়ায় জোড়ায় বই লিখছেন। সৈয়দ হকও ভালো থাকবেন।
লন্ডন থেকে ঢাকায় চলে আসা, নিজের ফ্ল্যাটে একেবারে একাকী জীবনযাপন- সবই তো লেখার জন্যেই। তার গল্প-উপন্যাস ভিন্ন স্বাদের, এক নিঃশ্বাসে পড়ার মতো। গত কয়েক বছর সব ধরনের সব লেখা ছাপানোর আগে আমাকে পড়তে দিতেন। সব সময় পড়া হতো না ব্যস্ততার জন্যে। রোজার ঈদে তার বাসায় গেলে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন, আর আমি বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলাম, কেননা সেদিন তার বাসায় আমিই ছিলাম একমাত্র অতিথি!
আহা। লন্ডনে সৈয়দ হকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল কিনা ড. আলমের আমার জানা হলো না। সৈয়দ হক ঢাকায় ফেরার অল্পকাল পরে প্রয়াত হলেন। ঢাকা ত্যাগের আগে ড. আলম বলেছিলেন, ‘দেখা হলো না, তবে কষ্ট করে দেখা করতে আসার দরকার নেই। যেয়ে মেইল করব।’ প্রতিবার মেইল করেন, ফোনও করেন। এবার তার মেইল পেলাম না, ফোনও নয়। আর আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পাক্কা এক মাস বিছানায় শুয়ে থাকায় সব এলোমেলো হয়ে গেল। কবে তিনি দেশে ফিরলেন, কবে হাসপাতালে ভর্তি হলেন- সব আমার কাছে ব্ল্যাক আউট!
‘সহস্রাব্দ’ নামে একটা সিরিয়াস সাময়িকী সম্পাদনা করতেন ড. আলম। আর পেরে উঠছিলেন না। চাইছিলেন ওটা আমি বের করি। সব স্বত্ব ছেড়ে দিয়েই সেটা চাইছিলেন। আর আমার কথা ছিল, ‘যদি সময় বের করতে পারি তাহলে পত্রিকাটির ভার নেব, তবে আপনিই থাকবেন যথারীতি তার সম্পাদক। আপনার অনুমোদন বিনা একটিও লেখা প্রকাশিত হবে না।’ জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যায় প্রবাসী বাঙালিদের কিছু প্রবণতার সমালোচনা করে লিখেছিলেন তিনি। কালের কণ্ঠের কলামগুলো ধারণ করতো গভীর চিন্তার উপাদান। তার অন্তিমশয্যা হতে পারতো বুদ্ধিজীবী গোরস্তানে, আজিমপুরে নয়। চ্যানেল আইয়ের নিউজ স্ক্রলে টিভি উপস্থাপক হিসেবে উল্লেখিত হলো তার পরিচয়, লেখক হিসেবে নয়! কেন এ কার্পণ্য? একমাত্র জনকণ্ঠকেই দেখলাম যথাযথভাবে ড. ফজলুল আলমের পরিচয় তুলে ধরতে-‘প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক, সংস্কৃতিতাত্ত্বিক’। ড. আলমের প্রস্থানে, নিঃসঙ্গতার যবনিকাপাত হলো বটে। কিন্তু আমরা কেউ কেউ বন্ধুহীন নিঃসঙ্গ ও অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম।
এই গল্পটি ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে তিনি আমাকে মেইল করেন। গল্পটি পড়ে না ছাপানোর পক্ষে মত দিই। লিখি: লেখার থিম ঠিক আছে। আপনার / “অরণ্যের দিনরাত্রি” স্টাইলও বজায় আছে। কিন্তু আপনার নামে ছাপাতে হলে এটাকে অপ্রত্যক্ষ এবং সাহিত্যরসময় করে তুলতে হবে। তা নাহলে ‘চটি’ বলতে পারে দুষ্ট লোকে। ধন্যবাদ, আমার মন্তব্য জানার আগ্রহের জন্য। ভালো থাকুন।
উত্তরে ড. আলমের সরস বক্তব্য: অতো ভয় পেলে চলবে না। চটি হোক বটি হোক কেউ ছাপালে দেখা যাবে। তুমি কোনও সাহিত্যপাতায় দিলে খুশী হবো। শুভেচ্ছা।
লেখাটি কোথাও দিতে চাইনি। এখন তিনি আমাদের মাঝে অনুপস্থিত। তাই গল্প পড়ে সমালোচনা শোনার ধার আর ধারতে হবে না তাঁকে। ]
***
এক
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষার পর আমি গ্রামে এসেছি। একাই। বাল্যকালে ভাইবোনমাবাবা একসঙ্গে আসা হতো। এবার আমার সঙ্গে আসবে তেমন কাউকে পেলাম না। অথচ লম্বা ছুটি কাটানোর কর্মকাণ্ড নির্ণয় করাও কঠিন। গ্রামের একদিকে নানা বাড়ি, অপর দিকে দুই ক্রোশ দূরে দাদা বাড়ি। আমি উঠলাম নানা বাড়িতে। আমার থাকার ব্যবস্থা হলো বহির্বাটিতে অর্থাৎ বাড়ির বাইরের ঘরে, যাকে এই গ্রামে বলা হয় ‘খাংকা ঘর’ - অতিথি আপ্যায়নের ঘর। এখানে আমার বয়সী কেউ নাই - কম বয়সী ছেলে মেয়ে আছে, তাদের সঙ্গেই ডাংগুলি, মার্বেল, চাক্কা খেলে বা তাদের খেলা দেখে দিন যায়। ঠিক করলাম কয়েকদিন পরে দাদা বাড়ি যাবো।
এই বাড়িতে কুয়া আছে, সেটার পাড়ে আমার গোছল করতে মন ওঠে না। দ্বিতীয় দিন দুপুরের আগেই একজন ত্রাণকর্ত্রী এসে গেল। সে আমার নানা বাড়ির দুই তিন ঘরের পরে থাকা মমতা। আমারই বয়স। এক সময় খেলাধুলা করেছি এক সাথে। বছর পাঁচেক আগে মমতার বিয়ে হয়। এই সময়ে সে বাবামার কাছে এসেছে বেড়াতে। আমি তাকে পেয়ে কেন যে মহাখুশি হলাম নিজেও জানি না - মনে হচ্ছিল মমতার সাথে আড্ডা মারা যাবে।
দুপুরে গোছলের সমস্যার কথা বলতে সে বলল, ‘চল্ আমরা মজাপুকুরে ডুব দিয়ে আসি।’ যেমন প্রস্তাব তেমন কাজ। আমার চার মামাতো ভাইবোন সহকারে আমরা কিছু দূরে মজাপুকুরের উদ্দেশ্যে চললাম। যেতে যেতে মমতা বললো যে তাঁর স্বামী প্রায়ই দোকানের ব্যবসার কাজে শহরে যায়, তখন সে নিজের বাবামার কাছে থাকে। তাদের কোনও সন্তান নাই তাতে সে অনেক ম্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। শ্বশুর বাড়িতে একজন ভাসুর ও তার পরিবার ছাড়া আর কেউ নেই। আমার মমতার সাথে সেসব অবান্তর কথা শুনতে মন্দ লাগছিল না, আরো ভালো লাগছিল গ্রামের মধ্যে দিয়ে কাঁচা পথে কখনও আল ধরে, কখনো অন্যের উঠান পেরিয়ে যাওয়া। রোদ কড়া থাকলেও তা গায়ে লাগছিল না, প্রায়ই বড় গাছের ছায়া পাচ্ছিলাম, তা ছাড়া ঝিরঝির বাতাসও ছিল।
[দুই]
পুকরে ডুব দিতে আরো ভালো লাগলো। গ্রামের অনেক নারীপুরুষ গোছল করছে, ছোট ছেলেমেয়েরা পানিতে হই হুল্লোড় করছে। আমার ছয়জনেই একটা ঘাট খালি পেয়ে একসাথে পানিতে নামলাম - আমি শার্ট খুলে পাড়ে রেখেছি, পায়জামা পরেই নেমেছি। আর সবাই যে যা কাপড় পরে ছিল সেসব পরেই পানিতে। ছোট ছেলে মেয়েরা সাঁতরিয়ে বেড়াচ্ছে। মমতা অভিজ্ঞভাবে শাড়ি সামলিয়ে একটু সাঁতার দিয়ে ঘুরে এসে বলল, ‘তুই সাঁতরাবি না?’ আমি বললাম, ‘ভুলে যাইনি তো? দেখি একটু পরে।’ মমতা হেসে আমার সামনে কোমর পানিতে দাঁড়ালো। ‘র্দু ! সাঁতার কেউই ভোলে না।’ আমি সাহস পেয়ে একটু চিৎ সাঁতারের চেষ্টা করলাম। পারলামও। মমতাকে বললাম, ‘ঠিকই বলেছিস’। মমতা শাড়ির আঁচল টেনে কোমরে জড়াচ্ছে ...
ঠিক তখনোই আমার চোখের সামনে রূপা গাঙ্গুলী ভেসে উঠলো, ‘আমারে ধরিস ক্যানে, কলসিটা র্ধ্’ ভেজা সুতির শাড়ির মধ্যে দিয়ে রূপার স্তনযুগল স্পষ্ট। রাইসুল আসাদের বুকে সেদুটো ঘষা খাচ্ছে। মমতার ভেজা শাড়ির মধ্যে দিয়ে তার পেলব স্তন দেখা যাচ্ছে। ইচ্ছা হচ্ছিল কাছে যাই। মমতা আমার দৃষ্টির গতি বুঝেছে, সে বলে উঠলো, ‘কী দেখিস?’ আমি চোখ না ফিরিয়েই বললাম, ‘তুই বড় হয়ে গেছিস কতো!’ মমতা আমার নি¤œাঙ্গের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তুইও।’ আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিজেকে দেখলাম, পাজামার মধ্যে দিয়ে একেবারে স্পষ্ট আমাকে দেখা যাচ্ছে। চিৎ সাঁতারের সময় সেটা ভাসছিল নিশ্চয়ই। আমার সুবিধার জন্যই সম্ভবত, অথবা রূপার সমকক্ষ হতে মমতা একটা ডুব দিয়ে ব্লাউজ খুলে ফেললো। এবার কোমর পানিতে তার বোঁটা পর্যন্ত পরিস্ফুট - সত্যিই ছবির রূপা গাঙ্গুলি এবার আমার সামনে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো পানি থেকে একটু ওপরে উঠলাম তার প্রশ্রয়ের প্রতিদান দিতে - মমতা যাতে আমাকে দেখতে পারে। পরিষ্কার উপলব্ধি করছি এই দৃষ্টি বিনিময়ের মধ্যে যৌনতা আমাকে দৃঢ় ও উত্তেজিত করে তুলেছে।
[তিন]
গ্রামে সন্ধ্যার সাথে সাথে সব নিঝ্ঝুম হয়ে যায়। আমিও খাংকা ঘরে একা হারিকেনের আলোতে একটা বই নিয়ে শুয়ে পড়েছি। একটু ঝিম ধরতেই মমতার স্তনযুগল চোখের সামনে ভেসে উঠলো। একই সঙ্গে হারিকেনের আলো নিভে গেল। মমতা এসেছে - সত্যিই। সে আমাকে সরিয়ে পাশে শুয়ে পড়লো। আমাকে টেনে তার দিকে ফেরাতেই আমার বুক তার স্তন স্পর্শ করলো। পানিতে দেখা সেই রূপা গাঙ্গুলির পেলব স্তন এখন আমার অধিকারে। তবু আমি নিজেকে সংযমী করতে ফিসফিসিয়ে বললাম, ‘এ কী করছিস? থাক্।’ মমতা সাদরে আমাকে স্পর্শ করে বললো, ‘আমাকে নিয়ে তুই যা খুশি করবি। আমি এখন তোর।’ মমতার স্তন যেন ফুলে উঠেছে, সেদুটোর বোঁটা শক্ত হয়ে যেন বাড়ি দিয়ে দিয়ে আমাকে ডাকছে। আমার নিজের দৈহিক কী অবস্থা সে সম্পর্কে আমি প্রায় অচেতন - সেটার ভার মমতার হাতে তুলে দিয়েছি। মমতা কখন যে সেটা নিজের মধ্যে গ্রহণ করেছে তাও জানি না।
[চার]
পরের বছর খবর পেলাম। মমতা একটা পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছে। কৃতিত্বটা রূপারই।