সকলে কবি নয় কেউ কেউ কবি। তো যারা কবি নয় তারা কি করবে? পদ্য লিখবে ও বিজ্ঞাপন দিয়ে তা বেঁচবে! সমসাময়িক কাল মানেই বেচা বিক্রির হাট, যার বিজ্ঞাপন যত শক্তিশালী তার বিক্রি তত।
খ
গ্রামের কবির লড়াই বা অনুরূপ আয়োজন যাহারা উপভোগ করিয়াছেন তাহারা জানেন শুরুতে কবিকূল আল্লাহ/ভগবান-গুরু-পিতামাতা থেকে শুরু করে উপস্থিত দর্শক সাধারণ সকলেরই বন্দনা করিয়া কিছু সুর বাক্য সময় ব্যয় করেন। ইহা কি? বিনয়! সংযুক্তি! তাতো বটেই, আসলে অন্নদাতার স্তুতি বা সাধারণকে তৈল মর্দন। কবি যখন কাগজে কলমে রচনা করিছেন তখন! মহাকাব্য হইলে পৃষ্ঠপোষক রাজার গুণকীর্তন/তৈলমর্দন করিয়া দশ/বিশ পদ অতি নগণ্য রচনা। না, সামন্ত বা রাজার তৈলমর্দনে দোষ ছিল না, সমকালের স্কুল পাঠ্য বইতেও তাহা অন্তর্ভূক্ত হয় তাহার পাঠ্য বা কাব্য গুণে। কিন্তু সমস্যাটা সমকালের বা আধুনিক কালের। সামন্ত রাজারা নাই, নাই গ্রাম্য নবান্ন দর্শক-শ্রোতাকুল। পুস্তক ভূমিকায় সাধারণকে যতই তৈল দেয়া হোক, তাহা পড়িয়া থাকে মূক, মলাট না সরাইলে সে কি ভাবে কথা কইবে? তো তাহার কর্ণকুহরে আমার প্রতিভা কে পৌছাইবে? বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞাপনই পারে আমায় কবি বানাইতে...
কারণ, আধুনিক কবি রচনা করেন অজানা বাজারের জন্য।
গ
অজানা বাজার! কে ক্রেতা তাহা কে জানে! ক্রেতা কোথায় থাকেন? দেশে না বিদেশে? শাহবাগে না গুলশানে? খুলনায় না চট্টগ্রামে? ঢাকায় না নিউইয়র্কে? জানা নাই জানা নাই... তিনি সর্বত্র, তিনি সর্বগামী, তিনি সর্বজ্ঞ, তিনি আন্তর্জাতিক, তিনি নিরাকার ঈশ্বর।
ঘ
যাহারা জানেন ক্রেতা তাহার ঢাকায়। তাহারা পরস্পর উচ্চস্বরে ঝগড়া করিয়া ক্রেতার কর্ণ কুহরে নিজ কন্ঠস্বর পৌছাইতে চাইতেন। কবির লড়াই। ইহাই বিজ্ঞাপন। যাহাদের পকেটে কিছু মুদ্রা (চাকুরি কিংবা ছাপাইবার ক্ষমতা) আছে তাহারা পোষেন দল। ছাপান পত্রিকা বা লিটলম্যাগ। তো মাঝে মাঝে দলে দলে বচসা হুল্লোড়ও হইবে ইহাই সৌন্দর্য। ইহাই বিজ্ঞাপন।
ঙ
যাহার মস্তিক ক্ষুরধার, যাহার চক্ষু শিকারী; তিনি ক্রেতা বিশেষ চিনিতে দেরি করেন না। তিনি ক্রেতা বিশেষের নিকটে উপস্থিত হইয়া ‘ভগবান’ ‘ভগবান’ কহিয়া কীর্তন জুড়িয়া দেন। স্তুতি মন্ত্রে ভগবান তুষ্ট। পুজারীর বরলাভ। ইহাই বিজ্ঞাপন ও তাহার ফলাফল।
কিন্তু সময়টা আধুনিকের, কোন শিশু কখন যে রাজাকে বলে ‘রাজা তুমি নেংটো’। ক্রেতারাজা তাই আর নিছক সভাসদে নির্ভরশীল নয়, তাহার সভাও সর্বত্র, সর্বগামী, সর্বজ্ঞ, আন্তর্জাতিক, নিরাকার ঈশ্বর...
চ
কবির রচনা কিভাবে বিকোবে? সংসদে পাশ হইলে তবেই তাহা আইন, তবেই তাহা কবিতা। তো চলো সংসদ নির্বাচনে। দল জিতিলে তোমার কবিতা পাশ, না জিতিলে অপেক্ষায় থাকো পরবর্তী নির্বাচনের জন্য। একাডেমি, পরিষদ, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, পত্রিকা। কতো কতো নিন্দা, কত প্রশংসা, কত কত পরীক্ষা। অতঃপর মিলিবে লক্ষ টাকার পুরস্কার। ইহাইতো তোমার চাওয়া! মস্তিক কর ক্ষুরধার, চক্ষুকে কর শিকারী... ক্রেতা ভগবান, ক্রেতা অন্নদাতা... ভগবান স্তুতিই তোমার বিজ্ঞাপন বিপণন...
ছ
একাডেমি, পরিষদ, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, পত্রিকা আরো আরো কত কি! লিখ আবেদন পত্র, আবেদন পত্র লিখতে পারাই প্রতিভা। ফেরদৌসির ছিল এক সুলতান, সগীরের ছিল এক সুলতান। তুমি ভাগ্যবান, তোমার অজস্র। লিখ লিখ লিখ আবেদনপত্র, প্রজেক্ট প্রপোজাল। শুধু গরমের ওয়াজ শীতকালে দিও না, তবেই সর্বনাশ। তোমার প্রতিভা তোমায় দেখাবে পথ। মিলিবে লক্ষ মুদ্রা। বিজ্ঞাপনেই বিক্রয়।
জ
তুমি এসব কিছুই চাও না! তুমি শুধু রচনা করিতে চাও! তবে এর উত্তর- আধুনিককাল সর্বোত্তম সময়। ফেসবুক, টুইটার এবং আরো আরো সব ব্লগ তোমার লিখিবার খাতা। জনারণ্যে গেয়ে যাও তোমার গান...
যদি তোমার রচনা মহামানবের হৃদয় স্পর্শ করে, তবে একদিন; কোন একজন শ্রোতা তোমাকেই একদিন তোমাকে শুনিয়ে যাবে তোমারই গান...
(বি: দ্র: যারা কবি নন তারা লিখাটি পড়বার সময়, কবি শব্দের স্থলে নিজ পরিচয়টি বসিয়ে নিয়ে পড়বেন, যেমন চিত্রকর, গায়ক ইত্যাদি)