করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





জলের মতন মন
রোমেনা লেইস
শিশু কিশোররা জলের মত । যে পাত্রে রাখা হয় সেরকম আকৃতি নেয়। ভাল বিদ্যাপীঠ ভাল শিক্ষক ভাল পারিবারিক শিক্ষা প্রত্যেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান সকল বাবা মায়ের কাছেই প্রিয়।সব বাবা মা চায় তার সন্তান সব দিক থেকে শ্রেষ্ঠ হয়ে বেড়ে উঠুক।আর এইজন্য কেউ কেউ সন্তানের উপর চাপিয়ে দেন অনেক বোঝা। স্কুল, নাচ,গান,ছবি আঁকা, কারাতে, সাঁতার,আবৃত্তি,আরবী পড়া। এখন এই যে আমাদের সন্তানেরা সবার বুদ্ধিমত্তা কিন্তু একরকম না। কেউ কেউ এত চাপ সহ্য করতে পারে না। কারো কারো আবার এর কোনটাতেই মন বসে না।তাদের ইচ্ছে করে ঘুড়ি ওড়াতে।পাখীর বাসা খুঁজে বেড়াতে।পড়ার বই তাদের টানে না।গল্পের বই ,কার্টুন ভাল লাগে।
আমরা ছেলেমেয়েদের সাথে বন্ধুর মত মিশবো। তাদের কী ভাল লাগে আর কী ভাল লাগে না মন দিয়ে শুনি। তারা বড় হয়ে কী হতে চায় তা আমরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাদের কেই সিদ্ধান্ত নিতে দিই। একসময় বাংলাদেশের পিতামাতারা কড়া গার্জিয়ান ছিলেন।কোন ওলটপালট দেখলে মারধর করতেন। সে সময় অনেক ভাইবোনের মধ্যে দেখা যেত সবাই জীবনে সফল হয়েছেন।কিন্তু এখন সেই সময় পার হয়ে এসেছি।এখন সেসময়টা স্বপ্নের মত।মা বাবা এখন সন্তানের সবচেয়ে বড় বন্ধু।
অভিভাবকরা যখন নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন তখনই সন্তানের মধ্যে একাকীত্ব তৈরি হয়। আর এই সুযোগে বন্ধুর বেশে ঢুকে পরে কোন সাপের মতবিষাক্ত প্রাণী।এদের অবয়ব বন্ধুর মত হলেও এরা যে বন্ধু নয় আমাদের কিশোর বা কৈশোর উর্ত্তীর্ন যুবকরা তা বুঝতে পারে না।এদের ফাঁদে পা রেখে আর ফিরেও আসতে পারে না।
আমাদের পরিবার ভিত্তিক সমাজ জীবন।পরিবারে মা এর ভূমিকা সত্যি অনস্বীকার্য। মা যদি নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেন। সন্তানকে কাজের লোকের জিম্মায় রেখে দেন । একসময় দেখবেন কোন বিরাট
ক্ষতি হয়ে গেছে।

আজ এই যে পাঁচটা ছেলের লাশ আমাদের সামনে।এরা কারা?
এরা আমাদের মতই কারো সন্তান, কারো ভাই,কারো বন্ধু।প্রশ্ন হলো এদের কেউ কী কখনো কাউকেই শেয়ার করেনি?এদের কারোরই কী কোন বন্ধু বা প্রেমিকা ছিলো না। যে জেনে তাকে ফিরাতে পারতো?বড় কষ্ট হয় মনে।আমারও এই ছেলেদের বয়সী দুটো ছেলে আছে।আমি জানি এদের দিকে এতটুকু মনোযোগ না দিলে এদের যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে আমার জীবনই বৃথা।
আমার শেরেবাংলা বয়েজ হাই স্কুলের এক ছাত্র যে মোটামুটি ভাল ছাত্রই ছিলো। তখন ফাইভে পড়ত।আমি কিছুদিন তাকে প্রাইভেটও পড়িয়েছিলাম।সে আমার অন্য ছাত্রদের মতই মায়াবী ছিলো।ভদ্র নম্র ছিলো।গতবছর পত্রিকার একটি খবরে চোখ আটকে গেলো।ছবির ছেলেটি আমার সেই ছাত্র। পরকীয়ায় জড়িয়ে এক ব্যাক্তি আর তার প্রেমিকা মিলে প্রেমিকার স্বামীকে হত্যা করে।হত্যার কাজে মাত্র চল্লিশ হাজার টাকার বিনিময়ে সাহায্য করে আমার সে ছাত্র।
আমি নির্বাক হয়ে বসে থাকি।অবিশ্বাস্য মনে হয়।পরে খোঁজ নিয়ে যা জানলাম তাতে বুঝলাম এই অধঃপতনের জন্য পরিবার পুরোপরি দায়ী।এ প্লাস পেয়ে এসএসসি পাশ করে তেজগাঁ বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হয় ছেলেটি। তার বাবা তার প্রয়োজনে টাকাপয়সা দিতে অস্বীকার করেন ।বাসা থেকে বের করে দেন। একটা কাজ করে দিলে চল্লিশহাজার টাকা পাবে। তাই কোন ভালমন্দ না ভেবেই ছেলেটি কাজে সাহায্য করতে চলে যায়।
আমরা শিক্ষকরাও ব্যর্থ। কারণ কী শিখালাম আমরা! ভালমন্দের পার্থক্য বুঝতে পারবে না এ প্লাস পাওয়া একটি ছেলে? টাকার জন্য এমন অপরাধমূলক কাজে যোগ দেবে?
কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েরা বড় বেশী অভিমানী হয়।সব পিতামাতার উচিত প্রতিদিন সন্তানেরা কী করলো কোথায় গেল । সব মন দিয়ে শুনেন।মনখারাপ থাকলে কেন খারাপ জানার চেষ্টা করেন। যা করলে মন ভাল হয় তা করেন। প্রত্যেকটা জীবন মূল্যবান।
 যে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া , বিদেশে পড়তে পাঠানো উজ্জ্বল সন্তানরা ভুল পথে ভুল মানুষের সাথে মিশে এতটা নির্মম হয়ে উঠলো; এত অধপতনে গেল! যেখানে একটা মুরগী জবাই করেই কেউ মন খারাপ করে সেখানে এতগুলো মানুষ হত্যা করলো কোনো ভাবাবেগ ছাড়া কিসের শক্তিতে।
বুক ভরা ব্যথা। লজ্জায় নত হয়ে যায় মাথা। বারবার এরকম ঘটনা ঘটে আর আমরা মুসলিমরাই অন্যদের চোখে হেয় হই। আমাদের ৯-১১ কে দোষারোপ করা হয়।ক্যালিফোর্নিয়ার ঘটনায় দোষারোপ
করা হয়। ফ্লোরিডার ঘটনার পরও আমরাই দোষী হই। আমি কাজ করি একটি স্কুলে।আমার পাঁচজন কলীগ ইতালীয়। এখন সামার ভ্যাকেশন শুরু হয়েছে।তাই ওদের সামনে যেতে হচ্ছে না।কিন্তু স্কুল খুললে ওদের সামনে গেলে কীভাবে দাঁড়াবো?আমি জঙ্গীর বোন, আমি জঙ্গীর খালা? আমি জঙ্গীর আত্মীয়? আমার ছেলে মসজিদে তারাবীর নামাজ  পড়তে যায়। গতকাল বড়ছেলে বললো মসজিদে দুইছেলেকে টেরোরিস্ট বলে মেরেছে এই ব্রুকলীনেই। আমরা ১৯৭১ স্বাধীনতা লাভ করেছি একাত্মতা ছিলো বলেই।আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে সেগুলোকে ধ্বংস করার জন্য অপশক্তি হাত  বাড়ায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সব ভাইবোনের কথা ভাবেন।সবাই কী একরকম ছিলো? কেউ একটু রাগী, কেউ বেশী অভিমানী,কেউ জেদী। আপনার এই অন্তর অনেক বড়। আপনার অন্তর প্রসারিত করে সকল বিভেদ ভুলে দলমত নির্বিশেষে একসাথে কাজ করেন। কেউ কাউকে দোষারোপ না করে সকলে মিলে সবাই সবার পাশে দাঁড়াই।
এ দায় শুধু পরিবারের না।
এ দায় শুধু সরকারের না।
এ দায় শুধু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর না।
যে পরিবারের সোনার ছেলেমেয়ে হারিয়েছে তাদের পাশেও দাঁড়াই।
যে পরিবারের বিপথগামী সন্তানটি হারিয়েছে তাদের পাশেও দাঁড়াই।ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ।পাপকে ঘৃণা করি। পাপীকে নয়।আবু লাহাব সূরার শিক্ষা নিয়ে সবাই কাজ করি একসাথে।