করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





বলা না-বলা
আফসানা বেগম
‘আজকের বাঁধাকপিটা দেখেছ?’
‘কেন, কী দেখব?’
‘আহা দেখই না, এত বড়ো আর এত ফ্রেশ বাঁধাকপি হয় নাকি! যাও দেখ।’
‘শোনো, আজ সন্ধ্যায় ঝিনুক আসবে।’
রুমানার এই কথাটায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না রায়হান। রুমানার বোন ঝিনুকের নাম শুনলে বরাবরই রায়হানের মুখ নির্লিপ্ত হয়ে যায়। বাঁধাকপির কথা আরেকবার মনে করিয়ে রুমানাকে রান্নাঘরের দিকে পাঠিয়ে গোসলে চলে যায় রায়হান। শুক্রবারের বাজারটা সকাল সকাল তার নিজের হাতে করা চাই। এজন্য সে কারো ওপরে নির্ভর করতে পারে না, এমনকি রুমানার ওপরেও নয়। রুমানা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলে মেঝেতে বসে খেলতে থাকা আরিয়ানও তার পেছনে পেছনে রওনা দেয়। দু’ পা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসে, নীচু হয়ে মেঝে থেকে লাল ফায়ার ট্রাকটা হাতে নিয়ে যায়। প্রায় তিন বছর বয়স হয়ে গেছে তার। ছোট্ট জীবনে গত এক বছরে এই লাল ফায়ারট্রাকটাকে সে কোনোদিন হাতছাড়া করেনি। রায়হান খুশি, ছেলে নিজের জিনিস দেখেশুনে রাখতে পারবে নিশ্চয়, যথেষ্ট সচেতন। বাবার মতোই হবে, চোখকান খোলা। বাথরুমে বেশি সময় লাগে না রায়হানের, ফিরে এসে রুমানাকে খোঁজে, ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসে। শুক্রবারের জন্য নিশ্চয় স্পেশাল কোনো নাস্তা করেছে রুমানা। সেসব নিয়ে টেবিলের দিকে তাকে আসতে দেখে রায়হান বলে, ‘তোমার কি মনে হয় না এসব নানান কীটনাশক কিংবা হরমোন ট্রিটমেন্টের ফল?’
‘কোনটা?’
‘আরে ওই যে ইয়াবড়ো বাঁধাকপিটা, অস্বাভাবিক সুন্দর না?’
‘কিন্তু সুন্দর দেখে তুমি এত চিন্তায় পড়ে গেলে কেন?’
‘চিন্তায় পড়ব না! একবার প্লেনে এক বৃটিশ ভদ্রলোকের পাশে বসলাম, তিনি হলেন গিয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়র, অবলীলায় বললেন যে তারা নাকি এখন মাকড়সার লালা পুশ করছেন সবজি গাছে, যেন পোকামাকড় কাছে ভিড়তে না পারে। চিন্তা করতে পার? কী যে খাচ্ছি আমরা!’
কথাটা শেষ করেই রায়হান ফায়ারট্রাক দিয়ে খেলতে থাকা আরিয়ানের দিকে তাকায়। রুমানা জানে রায়হান এখন ভাবছে তার বাচ্চার জেনারেশনে কী হবে, কী খেয়ে বাঁচবে তারা। কথা ঘোরানোর জন্য সে বলল, ‘বাঁধাকপি দেখে তুমি চিন্তায় পড়েছ আর সঙ্গে সঙ্গে তোমার বাচ্চাও চিন্তায় পড়েছে।’
রায়হান যেন কিছু ভাবছিল। রুমানার কথা অগ্রাহ্য করে বলল, ‘একবার বাঁধাকপি নিয়ে কী হলো জানো? স্মাগলিং করতে গিয়ে এক কনটেইনার ধরা পড়ল।’
‘বাঁধাকপিও স্মাগলিং হয়?’
‘আরে না, যতœ করে বড়ো করে তোলা বাঁধাকপি। যখন অল্প একটু বড়ো হলো, চারদিকে ফুলের মতো পাতা ছাড়তে লাগল তখন আধা কেজি হেরোইনের প্যাকেট কপির ওপরে রেখে দেয়া হলো। তারপর পাতাগুলো দিনে দিনে বড়ো হতে হতে হেরোইনের প্যাকেট ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেল, ওপর থেকে দেখতে সাধারণ একটা কপি। আইডিয়া কেমন?’
‘ভালো। তবে তোমার ছেলে কী বলছে সেটা শোনো। তার মনে হয় অন্য আইডিয়া।’
আরিয়ান মাত্র দেড় বছর বয়স থেকে পুরোপুরি কথা বলে। বাক্যের শুদ্ধতা দেখে কখনো অস্বস্তি লাগত। সবাই অবাক হলেও রুমানা আর রায়হানের কাছে তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তারা জানেই যে আরিয়ান কথা বলে খুব কম, দরকারি কথাটা সময়মতো অবিকৃত উচ্চারণে তার কাছে শুনেই তারা অভ্যস্ত। রায়হান আগ্রহী হয়, ‘কী বলে আমার বা”চা?’
রুমানা উত্তর দেয়ার আগে আরিয়ান বলে, ‘এরকম বড়ো বড়ো সবুজ টুপি ছিল। অনেক টুপি। শক্ত শক্ত। অনেক মানুষ আমাদের বাসায় এসেছিল ওরকম টুপি পরে।’
‘আমাদের বাসায়! কবে?’
‘অনেক আগে। আমি ওদের ভয়ে লুকিয়ে ছিলাম।’
‘কোথায়?’
‘খাটের নীচে।’
‘তারপর?’
‘তারপর ওরা আমাকে পেয়ে গেল। খাটের নীচ থেকে টেনে বের করে আনল। আমি চিৎকার করলাম। ওরা আমাকেÑ’
‘আচ্ছা, হয়েছে আরিয়ান, আর বলতে হবে না।’ রায়হান যেন ভয় পেয়ে গেল, তাই বাকিটুকু শুনতে চায় না। রুমানার রাগ হলো, ‘বাচ্চাটা বানিয়ে বানিয়ে একটা গল্প বলছে, শুনতে অসুবিধা কী!’
‘দরকার নেই শোনার।’ মুখ শক্ত হয়ে গেল রায়হানের।
রায়হানের এই মুখ চেনে রুমানা। রায়হান কেবল বিরক্তই হয়নি, সে ভয় পেয়েছে। কিন্তু কেন সেটাই শুধু সে বুঝতে পারল না। বাচ্চাটাকে থামিয়ে দেয়া অন্যায় হয়েছে ভেবে সে মিনমিন করে বলল, ‘এই বয়সের বাচ্চারা বানিয়ে বানিয়ে কত কথাই না বলে! এটা তো ওদের ইমাজিনেশন পাওয়ারের ব্যাপার। এভাবে থামিয়ে দিলে তাদের ক্ষতি হয়।’
রায়হান বিরক্ত চোখে রুমানার দিকে তাকায়; যার অর্থ এ নিয়ে আর কোনো কথা নয়। শেষ পর্যন্ত রেগে গিয়ে সে টেবিল থেকে উঠেই যায়। বেডরুমে যাবার আগে এক পলক তাকিয়ে যায় আরিয়ানের দিকে। সে তার ফায়ার ট্রাক নিয়ে ব্যস্ত, মুখে হুইসেলের শব্দ করছে।
রায়হান ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। হাত দুদিকে ঠেকিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে তাকে। তার সারা শরীর শীতল হয়ে আসে ধীরে ধীরে। হঠাৎ শীত শীত লাগে। সে বুঝতে পারে না, এমন অদ্ভুত অনুভূতি তার কেন হচ্ছে। আরিয়ানকে নিয়ে উলটোপালটা কিছু ভাবার কথা তার কেন মনে হচ্ছে। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে সন্ধ্যাবেলা আরিয়ান তাকে যে কথাগুলো বলেছিল তা যেন তখন খুব সত্যি মনে হয়। সেদিন রুমানা বিকেলে বেরিয়েছিল বান্ধবীদের সঙ্গে কফি খাবে বলে। অফিস থেকে ফেরার পর থেকে আরিয়ান ছিল রায়হানের কাছে। আরিয়ানের কাপড় বদলে দিতে গিয়ে সে একভাবে তাকিয়ে ছিল রায়হানের দিকে। রায়হান বলেছিল, ‘কী দেখ, সোনা?’
‘ছোটোবেলায় আমিও তোমার প্যান্ট বদলে দিয়েছিলাম’, মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিল আরিয়ান।
‘তুমি! আমার প্যান্ট?’
‘হ্যাঁ, মনে নেই?’
রায়হান আরিয়ানের কথা শুনে খুব হেসেছিল। নানা সময় বানিয়ে বানিয়ে নানা কথা বলে ভেবে রায়হান তাকে কোলে নিয়ে আদর করে ছেড়ে দিয়েছিল তখন। ওই ঘটনাটা পরে তার একবারও মনে পড়েনি। এমনকি রুমানা বাড়ি ফিরলেও আর বলা হয়নি। কিন্তু এখন আরিয়ানের মুখ থেকে বাড়িতে সবুজ টুপিওলা মানুষের আসার কথা শুনে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। তবু মেনে নিতে পারে না রায়হান, যে কিনা সেভাবে ধর্মও পালন করেনি কখনো, কুসংস্কার বিশ্বাস করা তো দূরের কথা, আর এখন বসে বসে আরিয়ানের জাতিস্মর হবার কথা ভাবতে পারে ভেবে তার খুব লজ্জা লাগে। ভাবনাটা থেকে বেরিয়ে যেতে চায় তাড়াতাড়ি। অন্য কিছু ভাবতে চায় জোর করে। অথচ বারবার কেবল মনে হয় আরিয়ানকে ডেকে ভুলিয়েভালিয়ে আরো কিছু বলতে বললে হয়, দেখা যাক আর কী বলতে পারে সে। দেখা যাক  সত্যিই রায়হান যা ভাবছে তাই কি না। অথচ সেটা ভাবতে গিয়ে আরো বেশি ভয় রায়হানকে ঘিরে ধরে। যদি সত্যিই আরিয়ান গড়গড় করে বলতে থাকে তাদের বিক্রমপুরের বাড়ির কাহিনি? নিজের অজান্তে কেঁপে ওঠে রায়হান।
‘অ্যাই, কী হয়েছে তোমার?’ রুমানা রায়হানের পাশে এসে বসে।
‘কিছু না তো’, চমকে উঠে তোতলায় রায়হান।
‘কিছু না হলে এরকম করছ কেন? ঘামছ কেন, এত গরম নাকি?’
রায়হান উঠে গিয়ে ফ্যান ছাড়ে। রুমানা তাকে লক্ষ করছে সে জানে। তাই স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে। যে জন্য সে ভয় পেয়েছে তা বললে রুমানাও কি চমকে উঠবে না? আর বলবেইবা কী করে, সবটা কি রুমানা জানে যে তার কথা বুঝবে?
তার পরের সপ্তাহ তিনেক এমন কিছুই হয় না যা নিয়ে রায়হানকে ভড়কে যাবে। জীবনের দৈনন্দিন নিয়মে চলতে চলতে রায়হান সেদিনের ঘটনাও প্রায় ভুলে যায়। রুমানাকেও বলার প্রয়োজন হয়নি কারণ সেই ঘটনায় ধারাবাহিকভাবে আর কিছুই যোগ হয়নি। আরিয়ান কেবলই ছোট্ট তিন বছরের আদুরে আরিয়ান, তার মুখের দিকে তাকিয়ে রায়হানের শিউরে ওঠা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু একদিন অফিসে হঠাৎ ফোন করে রুমানা। রায়হান তখন বেশ ব্যস্ত ছিল, ভাবে পরে কল ব্যাক করলেই হবে। অথচ রুমানা যেন নাছোড় বান্দা, দশ মিনিটেই বেশ কয়েকবার ফোন করে ফেলে। রায়হান মিটিঙের টেবিল থেকে উঠে এসে ফোন ধরে। রুমানার ভয়ার্ত গলা ওদিকে তখন।
‘ফোন ধরছ না কেন!’
‘কী হয়েছে?’
‘আরিয়ান বলছে তার মাথার পেছনে গুলি লেগে সে মারা গেছে।’
‘তুমিই তো বলো আরিয়ান এরকম কতকিছু বলে, তো?’ স্বাভাবিক হতে চায় রায়হান।
‘মানে আরিয়ান হাত দিয়ে তার মাথার পেছনের জায়গাটা দেখাচ্ছে’, রুমানার গলাটা ঢোক গিলতে গিলতে যেন আটকেই যাবে।
‘তারপর?’
‘ওই যে ওখানে একটা জন্মদাগ ছিল না?’
রায়হান আর কথা বলতে পারে না। তারও গলা আটকে যায়। ফোনের লাইন এমনিতেই কেটে যায় নাকি রায়হান বা রুমানা কারো কাঁপা আঙুলের স্পর্শে কেটে যায় তা অবশ্য ঠিক ধরা যায় না।
রাতে আরিয়ান ঘুমিয়ে পড়লে রুমানা রান্নাঘর গোছগাছ নিয়ে ব্যস্ত। ফিরে এসে দেখে আরিয়ান উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে আর রায়হান শেভিং রেজার দিয়ে তার মাথার পেছন দিকের চুল অনেকটা কামিয়ে ফেলেছে। রুমানা ছুটে আসে, ‘কী কর? এটা কেন করছ?’ রুমানার অবাক লাগে, আরিয়ানের জন্মের পর থেকেই রায়হানের কড়া নিষেধ ছিল বাচ্চার চুল কামানো যাবে না। জন্মের পর তো নয়ই এমনকি পরে যখন অনেকে বলেছিল মাথা কামালে চুল ঘন হবে, রায়হান বলেছিল, ‘মাথা কামালে কি একটা লোমকুপ থেকে দুটো করে চুল উঠবে?’ তাই আরিয়ানের মাথায় বরাবরই ছিল কোকড়ানো ঝাঁকড়া চুল। চুলের প্যাঁচানো আগাগুলোতে সামান্য বাদামি আভায় তাকে দেখতে দেবশিশুর মতো লাগে। রায়হানের কাণ্ড দেখে রুমানার রাগ হয়। রায়হান যেন রুমানার প্রশ্ন শোনেই না, পাশে এসে দাঁড়ালেও কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই তার। মাথা নীচু করে আপনমনে চুল কামিয়ে সে একটা টিস্যুর ওপরে রাখে। আরিয়ানের ঘাড়ের সামান্য ওপরে মাথার নীচের দিকে গোল কালচে দাগটা ধীরে ধীরে বেরিয়ে পড়ে। পুরো বৃত্তটাকে বের করে তবেই রায়হান হাত থামায়। তারপর চুপচাপ তাকিয়ে থাকে দাগটার দিকে।
‘এখানে হাত দিয়ে দেখিয়েছিল?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু জন্মের সময়ে দাগটা লালচে ছিল না? এখন কেমন কালো হয়ে গেছে, দেখেছ?’
রায়হান চুপ করে থাকে। রুমানা আরিয়ানের মাথা কামানোর কাজ শেষ করে ফেললে ধীরে ধীরে বলে, ‘বাবার ঠিক ওখানেই গুলি লেগেছিল। আমি শুনেছি।’
‘তুমি কি সত্যিই তেমন কিছু ভাবছ?’
‘ভাবতে বাধ্য হচ্ছি।’
‘তুমি যে একটা কী না, এটা এত সিরিয়াসলি নেবার কী আছে? এমন হতে পারে না, কখনো আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে, আরিয়ান শুনেছে আর সেটাই এখন রিপিট করছে?’
‘কিš‘ সে কী করে জানল যে তার মাথার পেছনে এখানে একটা দাগ আছে?’
‘সে জানে কে বলল? সে তো কেবল হাত দিয়ে দেখিয়েছে।’
‘কিš‘ দাগ তো সত্যিই সেখানে একটা আছে, তাই না?’
‘ব্যস, এতেই প্রমাণ হয়ে গেল যে সে তোমার জাতিস্মর বাবা?’
রায়হান এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেয় না। মনে মনে ভাবে ভয় তার সেটাই। রায়হান কিছুতেই চায় না যে আরিয়ানের মুখ দিয়ে সেসব কথা বেরিয়ে পড়–ক যা সে যতœ করে গোপন রেখেছে। কখনো বলবে না সে পরিবারের সেই লজ্জার কথাগুলো, কাউকে জানতে দেবে না। রুমানা হাল ছাড়ে না, বলে, ‘আজকাল কার্টুনে কত ভায়োলেন্স দেখায় জানো? কোনো একটা কিছু দেখে গোলাগুলির ধারণা পাওয়া তো আশ্চর্য নয়। তাছাড়া, সে কি এমন কিছু বলেছে যা আমরা কোনোদিন আলাপ করিনি? আরিয়ান শার্প বাচ্চা, দেখলে মনে হয় নিজের মনে ফায়ার ট্রাক নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু কান সব সময়ে খাড়া। আমাদের কথা শুনে শুনে কত কিছু কল্পনা করে ফেলে। ওর কথা বাদ দাও। আর এটা নিয়েও ভাবার দরকার নেই।’
রায়হান তারপরেও কোনো কথা বলে না। রুমানা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘ঝিনুকের সাথে তুমি সহজ হতে পার না কেন এখনো? যা হয়েছে তার জন্য না ওর দোষ না আমাদের, আমার নিজের বোন, কিন্তু আমরা আমাদের দায়িত্ব এড়িয়েÑ’
‘আর শোনো, ঝিনুকের ব্যাপার নিয়ে কথা বলা তুমি বাদ দাও।’
রুমানা চুপ হয়ে যায়। আরিয়ান জন্মানোর পর থেকে তার মনটা বেশি নরম হয়ে গেছে। অল্পতেই গলার কাছে কান্না ঠেলে ওঠে। এটা কি পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশনের প্রভাব? কিন্তু রায়হানের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলেইবা কী লাভ। এমনিতেই তারা বিয়ে করেছে দেরিতে, আবার বিয়ের পরে সাত বছর বাচ্চা হয়নি, এখন এতদিনের তপস্যার পরে বাচ্চা নিয়ে নতুন ঝামেলার কথা রুমানার ভাবতে ভালো লাগে না। রুমানার বাচ্চা হবে বলে ঝিনুক ইউনিভার্সিটি হল থেকে বোনের বাড়িতে এসে উঠেছিল। মাত্র ভর্তি হয়েছে তখন, পড়াশোনা সামলে রুমানার দেখাশোনা ভালোই করত সে। অথচ কী থেকে যে কী হয়ে গেল তাদের সংসারে! ঝিনুকের কথা যতবার রায়হানের ধমকের চাপে থেমে যায় ততবার রুমানা সেই ঘটনাগুলোর প্রতিটি ধাপ চুপচাপ পেরোতে থাকে। কাউকে বলা যায় না, তারা ছাড়া যে কথা আর কেউ জানে না। রুমানাকে রুটিন চেকাপের জন্য বিকেলের দিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল রায়হান। ডাক্তারের চেম্বারে ছিল লম্বা লাইন, আগে থেকে বুক করা সত্ত্বেও বিশাল পেট নিয়ে রুমানাকে ঘণ্টাখানেক বসে থাকতে হয়েছিল। তারপর দেখিয়ে ফিরতে ফিরতে আরো এক ঘণ্টা পার। সন্ধ্যা গিয়ে রাত তখন। তারা ফিরে এসে দেখে বাইরের দরজা ভেজানো। হাতের হালকা ঠেলাতেই দরজা খুলে যায়। ভেতরে কোনো লাইট জ্বালানো ছিল না। একটা একটা করে লাইট জ্বালাতে জ্বালাতে তারা এগোচ্ছিল। রুমানা ‘ঝিনুক, ঝিনুক’ বলে ডাকতে ডাকতে তার ঘরের দিকে গিয়েছিল, ভেবেছিল তারা যাবার পরে ঝিনুক দরজা লাগাতে ভুলে গেছে আর তারপর নিজের অজান্তে ভরা সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ঘরের লাইট জ্বালতেই রুমানা চিৎকার করে উঠেছিল। ভয়ানক অগোছানো বিছানায় হাত আর মুখ বাঁধা ঝিনুক পড়ে ছিল, জীবিত না মৃত বোঝার উপায় নেই। শরীরে নামমাত্র কাপড়ও ছিল না তার, শুধু এদিকওদিক ছিল কিছু রক্তের দাগ। রায়হান ছুটে এসে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়েছিল ঝিনুকের, রুমানাকে ধরে পাশে বসিয়েছিল। ঝিনুকের বাঁধন খুলে দিয়ে রায়হান তার গায়ে কাপড়ও চড়িয়েছিল। ঝিনুকের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে কাঁদো কাঁদো গলায় জানতে চেয়েছিল, ‘কী করে হলো ঝিনুক? কে?’ মুখভর্তি লালা নিয়ে অস্পষ্ট উচ্চারণে ঝিনুক বলেছিল, ‘কোন তলার ড্রাইভার যেন, নীচে দেখেছি আগে। আর তার সঙ্গে আরেকজন। বেল বাজল, দরজা খুলতেই আমার মুখ চেপেÑ’
‘আশ্চর্য, আমরা বাড়িতে নেই, তুমি দরজা খুলতে গেলে কেন!’
‘আমি কি জানতাম যে ওরাÑ আমাকে থানায় নিয়ে চল।’
‘থানায় কেন!’ এমনভাবে চমকে উঠেছিল রায়হান যেন এরকম অদ্ভুত কথা কোনোদিন শোনেনি। ঝিনুক চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করেছিল তখন। রায়হানের মনোভাব বুঝে রুমানা কোনোরকমে উঠে বলেছিল, ‘চল, আমি নিয়ে যাব। মেডিকেল চেক আপ করতে হবে আগে।’ রায়হান ছুটে গিয়ে দরজা লক করে এসেছিল। তারপর গলা নামিয়ে বলেছিল, ‘চুপ কর তোমরা, এসব কথা আর বলো না, কান্নাকাটিও থামাও। মানুষ জানলে কী বলবে বলো তো? খুব খারাপ ভাববে ঝিনুককে, ওর আর বিয়ে হবে না।’ এক সময় ঝিনুক নিজেই উঠতে চেষ্টা করছিল একাই থানায় যাবে বলে কিন্তু রায়হানের পাহারার চোটে ঘর থেকে বেরোতে পারেনি। রুমানা বলছিল, ‘রায়হান, তুমি একটা শিক্ষিত ছেলে হয়েÑ’
‘কী হয় শিক্ষা দিয়ে? তুমি কি জানো, ঝিনুককে কোর্টে বর্ণনা করতে হবে ওরা ওকে কী কী করেছে? তারপর  সেসব প্রমাণও করতে হবে, জানো সেটা? কোনো সাক্ষী আছে? কেউ দেখেছে এই বিল্ডিঙের? তবে তো এসেই তাদের এখানে দেখতে পেতে। আর যারা এ কাজ করেছে তারা এতক্ষণে এখানে থাকার কথা না। এটাই স্বাভাবিক। কেন এসব প্রোপাগান্ডা করতে চাচ্ছ?’
‘প্রোপাগান্ডা! হোয়াই ডোন্ট ইউ গেট ইট? শি ইজ রেইপড!’
‘এখন এসব করলে কিছু ঠিক হবে, রুমানা? শুধু শুধু ফ্যামিলির দুর্নাম আর টানাহেঁচড়া, পুলিশ আর নিউজ রিপোর্টার, এই তো।’
‘আশ্চর্য ব্যাপার, এত বড়ো ক্ষতি আমরা চেপে যাব? লোকদুটোর শাস্তি হবে না?’
‘তাতে যা গেছে তা ফেরত পাবে?’
কিছুই ফেরত পাওয়া যাবে না, এই ভেবে দুই বোন জড়াজড়ি করে কাঁদছিল। তবে তার পরেও তারা যদি সিদ্ধান্ত বদলায়, হুট করে বেরিয়ে গিয়ে যদি থানায় উপস্থিত হয়, সেই ভয়ে রায়হান আই পিল কিনতে যাবার সময়ে বাইরের দরজায় তালা দিয়ে চাবি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। ঝিনুক পরে আর কথা বলত না রায়হানের সঙ্গে। রায়হানও আর স্বাভাবিক হয়নি তার সামনে। রায়হানের কাছে ঝিনুক যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে তারপর থেকে। রুমানা ভাবত, এটা কি অপরাধবোধ নাকি ঘৃণা? কোনো উত্তর পায়নি। কোনো উত্তর খোঁজাই হয়নি তেমনভাবে। পুরো বিষয়টা সবাই মিলে চেপে গেছে। তিন তলার ড্রাইভারের চাকরি থেকে ছুটি না নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পেছনের ঘটনা তাই আর কেউ জানতে পারেনি।
রায়হান জানে, ধমকে দিলে রুমানা ঝিনুককে নিয়ে আর কথা বাড়াবে না। কিন্তু সে তখন ঝিনুকের কথা ভাবছিল না, ভাবছিল আরিয়ানের কথা। ভাবতে না ভাবতেই আরিয়ান ফায়ার ট্রাক হাতে নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। এক হাতে ট্রাক আরেক হাতে ছোট্ট চাকা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘বাবা, চাকা খুলে গেছে, লাগিয়ে দাও।’
মেঝে থেকে চোখ উঠিয়ে চমকে উঠল রায়হান। তাকে দেখে মনে হলো আরিয়ান যেন খেলনায় চাকা লাগিয়ে দেবার মতো সাধারণ কোনো কথা বলেনি, বলেছে অন্যকিছু, যেন বলেছে সবুজ গাড়ির চাকায় কারো পা থেতলে যাবার কথা। যেন কোনো বিভৎস দৃশ্য থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিজেকে সামলায় সে, ‘কই দেখি, দাও লাগিয়ে দেই।’
দিনের পিঠে দিন চলে গেলেও রায়হান স্বস্তি পায় না। আরিয়ানকে নিয়ে খানিক বাজিয়ে দেখবে কি না সেই চিন্তাটা থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে পারে না কিছুতেই; আবার এ নিয়ে ঘাঁটতে সাহসও হয় না। কিন্তু একদিন ছুটির দুপুরে আরিয়ান নিজেই শুরু করে। খাওয়ার পরে আরিয়ানকে মাঝখানে নিয়ে দু’দিকে শুয়ে ছিল রায়হান আর রুমানা। আদর আর মজার মজার কথায় ভরে ছিল সময়টা। রায়হান বলছিল, ‘আরিয়ান, আমরা যদি আরেকটা বাবু নিয়ে আসি, তুমি ভাই চাও না বোন?’ আরিয়ান কিছু বলার আগে রুমানা বলেছিল, ‘না রে বাবা, আর না, এর একার দুষ্টুমি আর পাকাপাকা কথার জ্বালায় আমার জান শেষ। তারপর আবার আরেকটা?’
‘কী বলো, আরিয়ান তো আমাদের লক্ষ্মী ছেলে, আরেকজন এলে আরো লক্ষ্মী হয়ে যাবে দেখ, তোমাকে হেল্প করবে।’
‘হুম, করেছে হেল্প, ফায়ার ট্রাকটা গুছিয়ে রাখা ছাড়া একটা কিছু করতে দেখেছ কখনো?’
আরিয়ানের তুলতুলে গালের ওপরে ছিল রায়হানের হাত। হাত সরিয়ে দিয়ে আরিয়ান বলল, ‘আমার বোন ছিল।’
‘বোন ছিল মানে?’ রুমানার মুখে অম্ভুত হাসি।
‘আমরা দুই ভাই-বোন ছিলাম।’
‘তারপর কী হলো? বোন কই তোর, গল্পবাজ?’ আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে রুমানা।
‘দুষ্টু মানুষ ওকে মাছ বানিয়ে ফেলেছে।’
‘মাছ বানিয়ে ফেলল! তারপর কী হলো?’
‘পানিতে চলে গেল।’
‘দেখেছ, কী সাংঘাতিক গল্প বানাতে শিখেছে?’ বলে রায়হানের দিকে তাকাল রুমানা। রায়হানের মুখ ঘেমে গেছে ততক্ষণে, ঠোঁট কাঁপছে, বিষ্ফারিত চোখে সে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়ত ফায়ার ট্রাকের খোঁজে আরিয়ান তখন বিছানা থেকে নেমে দৌড় দেয়। রায়হান তার যাওয়ার দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ‘আচ্ছা, আরিয়ান গল্প বানিয়ে বললে তোমার কী হয়? এমন করে তাকাচ্ছ কেন?’ রুমানার গলায় বিরক্তি।
রায়হান চমকে ওঠে, বলে, ‘রুমানা, আরিয়ান স্বাভাবিক না।’
‘মানে? বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলা অস্বাভাবিক? তুমি মনে হয় কাছে থেকে কোনো বাচ্চাকে বড়ো হতে দেখনি, না?’
‘দেখিনি। কিন্তু আরিয়ান এসব কী করে বলে দিচ্ছে?’
‘কীসব? কার্টুনে দেখায় না ম্যাজিক করে মানুষকে পাখি বানিয়ে ফেলল, আবার হয়ত গাছ বানিয়ে দিল, তেমন ও ভাবছে একজনকে মাছ বানিয়ে ফেলা হয়েছে, তাতে কী এমন হলো?’
‘তাতে অনেক কিছু। তুমি বুঝবে না।’
‘কেন বুঝব না? বলো তো, আজ বলতেই হবে। আরিয়ান গল্প বানিয়ে বললে তোমার সমস্যা কোথায়?’
রায়হান হয়ত বলত না কখনো। কিন্তু আরিয়ান তাদের দুজনের, তার কিছু মানে তাদের দুজনের সমান ভাগ, তাই ভয়ে বা হতাশায় আশ্রয় চাইতেই রুমানাকে বলতে শুরু করে।
‘আমার এক ফুপু ছিল। মানে আমার বাবার বোন।’
‘তাই নাকি? এতদিন তো জানতাম তোমার বাবা একাই ছিলেন।’
‘বলিনি। ভেবেছিলাম কাউকে বলব না। মা মারা যাবার পরে সামনে পেছনে কেউ ছিল না। তাই কেউ কোনোদিন জানতেও পারত না।’
‘তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা আরিয়ানকে নিয়ে কথা বলছিলাম, তার মাঝখানে হঠাৎ তোমার ফুপু কোত্থেকে উদয় হলো কে জানে। যাই হোক, বলনি কেন?’
‘যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান আর্মিরা আমার ফুপুকে পানিতে চুবিয়ে মেরেছিল।’
‘বলো কী!’
‘হ্যাঁ। আমি জন্মানোর জন্য মা তার বাবার বাড়িতে গিয়েছিল। বাড়িতে ছিল আমার স্কুল মাস্টার বাবা আর তার বোন। গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের বাবা সাহায্য করছিলেন, সে খবর আর্মিদের কাছে ছিল। এক রাতে তারা বাড়িতে এলে বাবা খটের নীচে লুকিয়েছিলেন। খোঁজাখুঁজি করে তাকে বের করে গুলি করে মেরেছিল তারা।
এটুকু তুমি জানো। যা জানো না তা হলো, আমার ফুপুকে ওরা রেইপ করেছিল, তারপর গাড়িতে উঠিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি কীভাবে যেন জিপ থেকে লাফিয়ে পড়েন। চাকার নীচে পড়ে তার পা থেতলে যায়। তার সাহস দেখে কয়েকজনের এত রাগ হয় যে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির পাশের পুকুরে তাকে চুবিয়ে মারে। মা ফিরে এসে গ্রামের লোকজনের কাছে এসব শুনেছিল।’
‘এই ব্যাপারটা তুমি গোপন করে রেখেছ শুধু তোমার ফুপু রেইপড হয়েছিলেন, তাই?’
‘হ্যাঁ।’
‘আচ্ছা, তুমি কী! রেইপড হওয়ায় তো তার কোনো হাত নেই, কোনো দোষ নেই, সে সময়ে তো কত মেয়েÑ তুমি বীরাঙ্গনাদের গল্প শোনোনি কখনো?’
‘থাক, আমার শুনতে হবে না। যে লজ্জা আমি ঠেকাতে পারি না তা আমি ভুলে যেতে চাই।’
‘ভুলে গেলে তো কিছু মিথ্যে হয় না। এটা তো আমাদের গর্বের ইতিহাস, তুমি ভুলবে কেন?’
‘কীসের গর্ব? যে পরিবারের ক্ষতি হয়েছে তারা জানে তাদের কী গেছে।’ রায়হানের গলা চড়ে যায়।
‘আমি বুঝি, রায়হান। অন্তত ঝিনুককে দিয়ে আমি বুঝি কী যায় সেই পরিবারের ওপরে। তবু, এটা গোপন করার ব্যাপার নয়, বিচার দরকার, শাস্তি হওয়া দরকার।’
রায়হান কিছু বলে না। রুমানা তাকে কাছে টেনে নেয়, মাথায় হাত বোলায়। ধীরে ধীরে বলে, ‘এটা ঠিক যে যা হারায় তা ফেরত পাওয়া যায় না। অনেকে বলবে এটা তেমন কোনো ক্ষতিই না, কিন্তু কখনো সামান্য কাগজের নৌকো ডুবে গেলেও মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যায়, সেটা কি কেউ জানে? ঝিনুকের কথাই ধরো, সে খুব কষ্ট পেয়েছে। রায়হান, তুমি কি কোনোদিনও সেটা বুঝবে না? শয়তানগুলো শাস্তি পেলে তার মানুষিক শান্তিটাতো অন্তত থাকত।’
রুমানার কথার মাঝখানে আরিয়ান এসে বলে, ‘না, বোন চাই না, ভাই চাই। কিন্তু ওকে আরেকটা ফায়ার ট্রাক কিনে দিতে হবে।’
‘দেখলে তো, এখন জানতে চাও ওর কাছে, ভাই নিয়েও কিছু গল্প শুনিয়ে দেবে’,
আরিয়ানকে কোলে বসাতে বসাতে বলে রুমানা। বলে, ‘কী রে, তোর কোনো ভাই ছিল না আগে?’
‘ছিল তো। খুব কাঁদত, তাই আমি তাকে মেরেছি।’
‘দেখলে তো?’ কিছু খুঁজে পাবার উত্তেজনায় রায়হানকে বলে রুমানা।
রায়হান অন্যমনস্ক হয়ে যায়; বলে, ‘ঝিনুক আসে না বেশ ক’দিন। চলো আজ ইউনিভার্সিটির হলে গিয়ে ওকে দেখে আসি।’
রায়হানের দিকে অবাক হয়ে তাকায় রুমানা। কোনো ভারমুক্তির আনন্দে হয়ত চোখ ভরে আসে তার। রায়হান সে চোখ অগ্রাহ্য করে আরিয়ানকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।

...