করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৭ বর্ষ ০৩ সংখ্যা
অক্টোবর ২০২৪

লেখক-সংবাদ :





সিলভিয়া প্লাথ ও এ্যান সেক্সটনের কবিতা
অনুবাদ : কল্যাণী রমা

সাগরবেলা ম্যাগনোলিয়া
মূল : সিলভিয়া প্লাথ

উপরে এই এখানে সীগাল কাঁদছে আর আমরা হেঁটে চলেছি –
বিবর্ণ লাল ছোপ ছোপ ধ্বংসাবশেষ, সামুদ্রিক প্রাণীদের দাঁড়া,
আর খোলসের গোলকধাঁধার ভিতর দিয়ে

যেন এখনও গরমকাল।
ওই ঋতু ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
যদিও সমুদ্রে সবুজ বাগান

পথ থমকে, মাথা নুইয়ে ফিরে
পেয়েছে নিজেদের মুখচ্ছবি - যে ছবি
আঁকা এক প্রাচীন বই-এর পাতায়, অবিনশ্বর বাগানে

কিংবা হয়ত দেয়ালে ঝোলানো ট্যাপেস্ট্রির নকশায়,
ফেলে আসা গাছের পাতাগুলো দুমড়ে, মুচড়ে ঝরে পড়ে।
এমনকি শুকায় সময়, ফেলে আসা মাস।

আমার একলা গানে আমার আমি
মূলঃ সিলভিয়া প্লাথ

আমি?
একলা হাঁটি; পায়ের নিচ থেকে
মাঝরাতের রাস্তাটা পাক খেয়ে
নিজেই ঘুরতে থাকে;
আর যেই চোখ বুজি
সব স্বপ্নিল বাড়িই নিভে যায়;
তখন আমার ইচ্ছাতেই শুধু
ছাদের তেকোণা থেকে চাঁদের স্বর্গীয় রূপ
ওই উঁচুতে ঝুলতে থাকে।

আমি
বাড়িগুলোকে ক্রমশঃ ছোট করে ফেলি
গাছগুলো দূরে যেতে যেতে হারিয়ে যায়;
আমার দৃষ্টির সীমানায়
শূন্যে পুতুলের মত মানুষগুলো, দুলছে ওরা
কিভাবে ক্রমশঃ ক্ষয়ে যাচ্ছে না জেনেই
চুমু খাচ্ছে, হাসছে, মাতাল হচ্ছে
অথচ আমার চোখের পলক
পড়লেই সকলের মৃত্যু।

আমি
যখন ভালো থাকি, যখন খুশি থাকি,
ঘাসের গায়ে সবুজ রঙ এঁকে দিই
আকাশের বুকে নীল গয়না পরাই,
সূর্যকে সোণালি;
তবু সব ধূসর-মন-খারাপে
আমার হাতেই সব শক্তি
সব রঙ ধুয়ে ফেলি,
কোন ফুল কোথাও ফোটে না।

আমি
জানি তুমি আস, এসে দাঁড়াও আমার পাশে- জীবন্ত, উজ্জ্বল,
অস্বীকার করলেও তোমার এ জন্ম
আমার মাথার ভিতর থেকেই,
দেখ তবুও ভাবছ
প্রেম এমন আগুন জ্বালাতে পারে যে
শরীর, মাংস, চামড়া সবই সত্য বলে মনে হয়,
প্রিয়, তোমার সৌন্দর্য, মেধা, সব সবকিছু শুধু
তোমাকে আমার উপহার।  


সিলভিয়ার মৃত্যু
(সিলভিয়া প্লাথের জন্য)
মূল :এ্যান সেক্সটন

ওহ্ সিলভিয়া, সিলভিয়া,
পাথর আর চামচ বোঝাই একটা মৃত বাক্স

দু’টো ছেলেমেয়ে, দু'টো উল্কা নিয়ে
একটা ছোট খেলার ঘরে বাঁধনছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছ,

বিছানার চাদরে তোমার মুখ,
কড়িকাঠে তোমার মুখ, তোমার মুখ নীরব প্রার্থনায় জড়িয়ে,

(সিলভিয়া, সিলভিয়া
ডেভনশায়ার থেকে সেই আলু আর মৌমাছির চাষ
করবে বলে লিখবার পর
তুমি কোথায় গেলে?)

কিসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলে?
কিভাবে তার উপর শুয়ে পড়েছিলে?
চোর-
কিভাবে তুমি হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে গিয়েছিলে,

একা একা হামাগুড়ি দিয়ে মৃত্যুর ভিতর,
যে মৃত্যু আমি এত বেশি করে চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম এতদিন ধরে,

সেই মৃত্যু যা কিনা আমরা দু’জনই
ছেলেমানুষের মত পিছনে ফেলে এসেছিলাম, এমনই তো বলেছিলাম
এই সেই মৃত্যু যা আমরা আমাদের রোগা প্যাকাটি শরীরের স্তনের উপর ঝুলিয়ে ঘুরতাম,

এই সেই মৃত্যু যার কথা আমরা এতবার বলেছি,
যতবারই বোস্টনে তিনটা এক্সট্রা ড্রাই মার্টিনি গলায় ঢেলেছি,

সেই মৃত্যু যা বিশ্লেষক আর চিকিত্সার ঔষধের কথা বলত,
সেই মৃত্যু যা ষড়যন্ত্রকারী নতুন বউ-এর মত করে কথা বলত,

যে মৃত্যুর কথা ভেবে আমরা পান করেছিলাম,
মৃত্যুর উদ্দেশ্য আর তারপর তার নীরব দলিল?

(বোস্টনে মরতে বসা লোকেরা ক্যাব চড়ে যায়,
হ্যাঁ, আবার মৃত্যু, যে কিনা আমাদের প্রেমিকের সাথে বাড়ি যায়।)

ওহ্, সিলভিয়া, ওই ঘুম ঘুম চোখের ড্রামারকে আমার মনে আছে
পুরানো গল্প দিয়ে যে আমাদের চোখে আঘাত করেছিল,

আমরা কি ভীষণই না চাইতাম যে ও আসুক,
স্যাডিস্টের মত কিংবা নিউ ইয়র্কের পরির মত

ওর কাজটুকু করবার জন্য,
যেন বড় বেশি প্রয়োজন তাকে আমাদের, দেওয়াল কিংবা ক্রিবের গায়ে জানালার মত,

সেই সময় থেকে ও অপেক্ষা করছে
আমাদের হৃত্পিন্ডের নীচে, আমাদের আলমারির নীচে,

আর এখন আমি দেখতে পাচ্ছি যে সেই সময় থেকে
আমরা তাকে ভান্ডারে জমিয়ে রেখেছি
বছরের পর বছর, পুরানো সব আত্মহত্যা

আর আমি জানি তোমার মৃত্যুর খবরে
তার জন্য এক চরম তিক্ত স্বাদ যেন, লবণের মত,
(আর আমি,
আমিও।
আর এখন, সিলভিয়া,
আবার তুমি,
তুমি আবার মৃত্যুর সাথে,
সেই বাড়ি ফিরে আসা আমাদের প্রেমিকের সাথে।)

আর আমি বলি
আমার হাতগুলো কেবল ওই পাথুরে জায়গার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে,
তোমার মৃত্যু যে কি তা
তা কেবল এক পুরানো ফেলে আসা সম্পদ।

তোমার কোন একটা কবিতা থেকে
ঝরে পড়া তিল?

(ওহ্ বন্ধু,
যতক্ষণ চাঁদটা বিচ্ছিরিভাবে ঝুলে আছে,
আর রাজা চলে গেছে,
রাণী হতভম্ব হয়ে বসে আছে
পানঘরের মাছিটার তো গান গেয়ে যেতেই হবে!)
ও আমার ছোট্ট মা,
তুমিও!
ওগো অদ্ভুত হল্যান্ডবাসিনী!
ওগো সোণালি চুলের মেয়ে!

আন্না-যে কিনা পাগল ছিল
মূলঃ এ্যান সেক্সটন


আন্না-যে কিনা পাগল ছিল,
বগলের নীচে একটা ছুরি আছে।
যখন আমি আঙুলের ডগায় ভর দিয়ে দাঁড়াই
তালে তালে খবর ছড়িয়ে দেই।
আমি কি কোন এক ছোঁয়াচে রোগ?...
তোমাকে পাগল ক’রে দিয়েছি?
শব্দগুলোকে কটু?
আমি কি তোমাকে জানালা বেয়ে উঠে
বাইরে চলে যেতে বলেছি?
ক্ষমা করো। ক্ষমা করো।
বলো না যে আমিই এমন করেছি।
বলো না।
বলো।

আমাদের বালিশে মেরীর কথা ব’লে যেও।
আমাকে-লম্বা, পাতলা, ঢেঙা বারো বছরের মেয়েটাকে
তোমার নিচু হ’য়ে বসে যাওয়া কোলে তুলে নাও।
বাটারকাপ ফুলের মত ফিসফিস ক’রে কথা ব’ল।
খেয়ে ফেল। আমাকে ক্রিম পুডিং-এর মত খেয়ে ফেল।
আমায় শুঁষে নাও।
আমায় নাও।
নাও।

আমাকে আমার আত্মার অবস্থার একটা রিপোর্ট দাও।
দাও আমার কাজ-কর্মের পুরো বিবৃতি।
একটা জ্যাক-ইন-দ্যা-পালপিট ফুল এনে দাও,
তারপর কান পেতে শুনি।
আমাকে স্টিরাপে আটকে একটা ট্যুর গ্রুপ নিয়ে এস।
বাজারের ফর্দে আমার পাপগুলোকে
এক, দুই নাম্বার দিয়ে
আমায় তা কিনতে দাও।
তোমাকে পাগল ক’রে দিয়েছি?
তোমার ইয়ারফোনের ভল্যিউম বাড়িয়ে দিয়ে
দিয়েছি তার মাঝ দিয়ে সাইরেন চলে যেতে?
আমি কি মোচওয়ালা সাইকিয়াট্রিস্ট-এর জন্য দরজাটা খুলে দিয়েছি?
যে কিনা তোমাকে সোনার তৈরী এক্কা গাড়ির মত টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে?
আমি কি তোমাকে পাগল ক’রে দিয়েছি?
কবর থেকে আমাকে চিঠি লিখ, আন্না!
তুমি ছাই ছাড়া আর কিছুই নও, তবু
আমি তোমাকে যে পার্কার পেনটা দিয়েছিলাম, তা তুলে নাও
আমাকে লিখ।
লিখ।