করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





প্যাত্রিক মোদিয়ানো সম্পর্কে কতটুকু জানেন
কেকা অধিকারী
কী ঘটল এবারের প্যাট্রিক মোদিয়ানোর বেলায় যখন পৃথিবীর বেশির ভাগ সাহিত্যের পাঠককে অবাক করে দিয়ে এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেলেন এই ফরাসী লেখক? খোদ বড় বড় সমালোচকেরাও থমকে গেলেন। তাদের মুখ থেকে রা বেরোতে সময় নিল। নামটাই যে বড় অচেনা! লোকটিকে চিনে নিতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। সমালোচকদের কিছুটা সময় লাগলো পড়াশোনা, খোঁজ-খবর করে তাকে চিনতে। পাঠক, আসুন আমরা সাধারণ মানুষও একটু চেষ্টা করি প্যাট্রিক মোদিয়ানো সম্পর্কে সাধারণ কিছু ধারণা নিতে।

  • সম্পর্ক ভালো না থাকলেও বাবাকে বেশ কটি বই উৎসর্গ করেন
  • তার নামে ফরাসী ভাষায় যুক্ত হয়েছে একটি নতুন শব্দ
  • লেখা মানে কুয়াশার ভেতর গাড়ি চালানো...

১.    ফ্রান্সের জনপ্রিয় লেখক : ফরাসী ভাষায় লেখেন বলে ইংরেজি ভাষাভাষিরা প্যাট্রিক মোদিয়ানোকে প্রায় চেননই না বললে হয়। অন্যদিকে ফরাসীরা তাকে দেশের অন্যতম প্রধান লেখকের মর্যাদা দিয়ে থাকেন। ‘মিসিং পার্সন’ দিয়ে ৩৬ বছর আগে তিনি ফ্রান্সের সবচেয়ে গৌরবজনক পুরস্কার গনকোর্ট প্রাইজ জিতে নিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি উপন্যাস ‘রিং রোড’ এর জন্যে ফরাসী একাডেমীর গ্র্যান্ড প্রাইজ লাভ করেন।
 
২.    মোদিয়ানো জন্মে ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে। সে সময় জার্মানী চার বছর (১৯৪০-১৯৪৪) ফ্্রান্সকে শাসন করেছিল। মোদিয়ানোর ‘স্মৃতির শিল্পে’ নাজী বাহিনীর শাসনামলে ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা উঠে এসেছে। তিনি যুদ্ধকালীন প্যারিসের বর্ণনা এমন আমুদে মেজাজে তুলে ধরেছেন - সেখানের রাস্তার নাম, ক্যাফে, মেট্রো স্টেশন, তখনকার দৈনন্দিন জীবনের নানান ঘটনা- যা তাকে সাহিত্যের অনন্য নির্মাতারূপে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করেছে। 

৩.    মোদিয়ানো যে শুধু একজন ঔপন্যাসিক তা কিন্তু নয়। তিনি একাধারে টিভি ও সিনেমার কাহিনীকারও।  বেশ কিছু শিশুতোষ বইও রয়েছে তার। এমনকি তিনি ১৯৯৭ সালে বিখ্যাত ফরাসী অভিনেত্রী ক্যাথরিন দেনেয়ূবের সাথে ‘জিনোলজি অব ক্রাইম’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। তার করা চরিত্রটির নাম ছিল বব।

৪.    লেখকের নামানুসারে ফরাসী ভাষায় একটি শব্দ যুক্ত হয়েছে। তিনি নিজেই তার জীবনীগ্রন্থ ‘পেডিগ্রী’ (২০০৫)-এ স্বীকার করেছেন, ‘বিষয়গুলি যতো বেশি ধোঁয়াটে ও রহস্যময় থাকবে, ততো বেশি তা আমাকে আকৃষ্ট করবে। এমন কি যা কিছু আমার নেই আমি তাতেও রহস্যময়তা খুঁজতে চেষ্টা করি।’
তার এ রহস্যপ্রিয় স্বভাবকে সম্মানিত করতে ফরাসীতে একটি নতুন শব্দ সৃষ্টি হয়েছে - ‘মোদিয়ানিসকিউ’।  বিশেষ করে রহস্যময় মানুষ বা পরিস্থিতি বোঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

৫.    পাদপ্রদীপের আলোতে থাকা মোদিয়ানোর একেবারেই স্বভাববিরুদ্ধ। প্যারিসের বাসিন্দা হয়েও তিনি সব সময়ই সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে চলেছেন। পত্র পত্রিকায় তার খুব কম সাক্ষাৎকার প্রকাশ পেয়েছে। প্যারিসের সম্পাদকদের পছন্দের আনন্দ অনুষ্ঠানে তাকে তেমন পাওয়া যায় না, যেমন তিনি সাধারণত থাকেন না কোন জনপ্রিয় টক শো’তে। তার সম্পর্কে এ রকম আরো কিছু তথ্য দিয়ে ফ্রান্স টুডে ম্যাগাজিন লিখছে, ‘মোদিয়ানোর সাক্ষাৎকারের সংখ্যা খুবই নগণ্য, কিন্তু তার শব্দমালা অমূল্য।”

৬.    তার পারিবারিক ইতিহাসও অনেক জটিল। তিনি প্যারিসের শহরতলী বুলঞ্জে ৩০ জুলাই, ১৯৪৫ এ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা আলবার্তো মোদিয়ানো ছিলেন একজন ইতালীয়-ইহুদি আর মা লুসিয়া কোলপিন একজন অভিনেত্রী।

৭.    মোদিয়ানোর শৈশব সুখের ছিল না। তিনি আর তার পরের ভাই একটা বোর্ডিং স্কুলে থেকে লেখা পড়া করেছেন। তার ১২ বছর বয়সের সময় ১৯৫৭ সালে সর্বকনিষ্ঠ ভাই রুডি মারা যায়। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি তার বাবার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন। অবশ্য এ ঘটনার ১৫ বছর পর তারা বাবা মারা যান। বাবার সাথে বন্ধন সুদৃঢ় ছিল না সত্য, তবু তিনি বাবাকেই বেশ কয়েকটি বই উৎসর্গ করেছিলেন।

৮.    এ লেখক কিন্তু লেখাকে মোটেও উপভোগ করেন না। প্রায়শই লেখা তার কাছে আনন্দের বিষয় না হয়ে বোঝাস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। মোদিয়ানো বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি একই স্বপ্ন বারবার দেখি- আমি স্বপ্নে দেখি আমাকে আর লিখতে হবে না, আমি স্বাধীন। হায়! আমি স্বাধীন না, আমি আজও সেই ভূমি পরিস্কার করে চলেছি, আমার অনুভূতি বলছে এ কাজ শেষ হবার নয়।’ প্রথম দিকে লেখার শুরুতে তিনি কী রকম সমস্যায় পড়তেন তাও তিনি বলেছেন, ‘সম্প্রতি আমি আমার প্রথম খসড়াগুলি খুলে দেখেছি আর হতবাক হয়েছি যে সেখানে কোন ফাঁকা নেই, শ্বাস নেবার মতো। সে সময় আমি ঠিক এমনটিও অনুভব করতাম. . . .ঠিক যেন আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।’ তারপরেও তিনি লিখে গেছেন। তিনি লেখাকে কুয়াশার মধ্যে গাড়ী চালানোর সাথে তুলনা করেছেন। ‘আপনি জানেন না আপনি কোথায় চলেছেন, আপনি শুধু জানেন আপনাকে চলতে হবে।’
৯.    মোদিয়ানো সর্বসাকুল্যে ৩০টির মতো গ্রন্থ লিখেছেন, আর তার বেশিরভাগই ছোট আকারের উপন্যাস। মাত্র ২২ বছর বয়সে তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। মায়ের এক বন্ধু তাকে বই প্রকাশের একটি বড় সুযোগ করে দেন। তিনিই মোদিয়ানোকে গালিমার্ড পাবলিশিং হাউসের কাছে নিয়ে যান যেখান থেকে তার প্রথম বই ‘দ্যা স্টার’স প্লেস’ বের হয়।
১০.     ফরাসী ভাষা ও কৃষ্টির বিখ্যাত অভিভাবক ফরাসী একাডেমী মোদিয়ানোকে তাদের ‘অমর’দের দলে সংযুক্ত করার জন্যে ভীষণ আগ্রহী ছিল। কিন্তু সম্ভবত প্রচারণা ও ব্যাপক পরিচিতিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না বলেই তিনি তাদের মনোনয়ন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।