করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৭ বর্ষ ০৩ সংখ্যা
অক্টোবর ২০২৪

লেখক-সংবাদ :





মন্বন্তরের কবিতা : জীবনানন্দ দাশ
ওমর শামস
কেউ তাঁকে নির্জনতার কবি হিশেবে, কেউ তাঁকে প্রকৃতির কবি হিশেবে, এমন কি কেউ তাঁকে বিভ্রান্তির অথবা মানব বিমুখিনতার কবি হিশেবে গৌরবান্বিত, তবু সীমা-পারিধিস্থ করে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ষাটের দশকের পরে থেকে এ কথা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, অভিজ্ঞতার বলয়ে ক্রমসমৃদ্ধ এবং বিশোধিতপ্রাণ হয়ে নিজেকে উৎসারণ করবার ক্ষমতা ছিলো জীবনানন্দ দাশের। ‘উপমাই কবিত্ব’, -সত্য অথচ কেবল প্রতিভাসিক- এই ধরনের প্রজ্ঞার কথাই শুধু তিনি বলেন নি, তিনি ভাবতে এবং বলতে পেরেছিলেন যে,- “মহাবিশ্বলোকের ইশারার থেকে উৎসারিত সময়চেতনা আমার বাক্যে একটি সঙ্গতি সাধক অপরিহার্যের মতো... আজ পর্যন্ত যে সব কবিতা আমি লিখেছি সে সবে আবহমান মানব সমাজকে প্রকৃতি ও সময়ের শোভাভূমিকায় এক ‘অনাদি’ তৃতীয় বিশেষত্ব হিশেবে স্বীকার করে, কেবল মাত্র তারি ভিতর থেকে উৎস-নিরুক্তি খুঁজে পাইনি। নাট্যকবির পক্ষে এটা পাওয়া প্রয়োজন। প্রতিভাসিক কবিতাজগতের একাগ্রতা ভেঙে ফেলে তাকে নাট্যপ্রাণ বিশুদ্ধতা দেয় সেই কবি। কিন্তু তবুও তিন জগতেই বিচরণ করে সে- মানবসমাজকেই চিনে নেবার ও চিনিয়ে দেবার মুখ্যতম প্রয়োজন আন্তরিক হয়ে ওঠে।”১
তিনি যখন বরিশালে ছিলেন তখন বাংলার প্রকৃতির কবিতা লিখেছিলেন- তাও তাঁর বিশিষ্ট জীবনবোধ জড়িয়ে নেহাৎ শুদ্ধ প্রকৃতির মাহাত্ম্য নিয়ে নয়; শহরের উপকণ্ঠের লাশকাটা ঘর নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন, সুন্দরবনের প্রাণীর মধ্যে দিয়ে জীবনে মৃত্যুর অনিবার্যতা নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন। যখন বাস্তুত্যাগ করেছিলেন এক অশ্বত্থের মুখ থেকে বলিয়েছিলেন বিদায়ের বেদনার কথা এবং উদ্বাস্তয়নের মধ্যেও জীবনের কিছু ধ্রবত্বের কবিতা; এবং যখন কোলকাতায় ১৯৪২-৪৮তে দেখলেন দুর্ভিক্ষ তখন লিখলেন মন্বন্তরের মর্মন্তুদ কবিতা। এই নিবন্ধের বিষয়- “তিমির হননের গান”, জীবনানন্দ দাশের মন্বন্তরের অবলোকনের, অনুতাপের ও তিমির হননেচ্ছার মহৎ মহৎ উচ্চারণ। এটি সাতটি তারার তিমির কবিতাগ্রন্থের আঠাশতম কবিতা- মুক্তক, অসমপদী জীবনানন্দের নিজস্ব বিলম্বিত লয়ের অক্ষরবৃত্তের রচনা। পুরো কবিতাটি উদ্ধৃত করা যাক :

তিমির হননের গান
কোনো হৃদে
কোথাও নদীর ঢেউয়ে
কোনো এক সমুদ্রের জলে
পরস্পরের সাথে দু’-দ- জলের মতো মিশে
সেই এক ভোরবেলা শতাব্দীর সূর্যের নিকটে আমাদের জীবনের আলোড়ন-
হয়তো বা জীবনে শিখে নিতে চেয়েছিলো।
অন্য এক আকাশের মতো চোখ নিয়ে
আমরা খেলেছি;
স্মরণীয় উত্তরাধিকারে কোনো গ্লানি নেই ভেবে
একদিন ভালোবেসে গেছি।
সেই সব রীতি আজ মৃতের চোখের মতো তবু
তারার আলোর দিকে চেয়ে নিরালোক।
হেমন্তের তারার আলোক।
সেই জের টেনে আজো খেলি।
সূর্যালোক নেই-তবু-
সূর্যালোক মনোরম মনে হ’লে হাসি।
স্বতই বিমর্ষ হ’য়ে ভদ্র সাধারণ
চেয়ে দ্যাখে তবু সেই বিষাদের চেয়ে
আরো বেশি কালো-কালো ছায়া
লঙ্গরখানার অন্ন খেয়ে
মধ্যবিত্ত মানুষের বেদনার নিরাশার হিসেব ডিঙিয়ে
নর্দমার থেকে শূন্য ওভারব্রিজে উঠে
নর্দমায় নেমে-
ফুটপাত থেকে দূর নিরুত্তর ফুটপাতে গিয়ে
নক্ষত্রের জ্যাৎ¯œায় ঘুমাতে বা ম’রে যেতে জানে।
এরা সব এই পথে;
ওরা সব ওই পথে-তবু
মধ্যবিত্তমদির জগতে
আমরা বেদনাহীন-অন্তহীন বেদনার পথে।
কিছু নেই-তবু এই জের টেনে খেলি;
সূর্যালোক প্রজ্ঞাময় মনে হ’লে হাসি;
জীবিত বা মৃত রমণীর মতো ভেবে-অন্ধকারে
মহানগরীর মৃগনাভি ভালোবাসি।
তিমিরহননে তবু অগ্রসর হ’য়ে
আমরা কি তিমিরবিলাসী?
আমরা তো তিমিরবিনাশী
হতে চাই।
আমরা তো তিমিরবিনাশী।

কবিতাটির সুর একটি ইতিবাদী ইতিহাসবোধের স্বস্তি দিয়ে। “কোনো হ্রদে কোথাও নদীর ঢেউয়ে কোন এক সমুদ্রের জলে পরস্পরের সাথে দুদ- জলের মতো মিশে সেই এক ভোরবেলা শতাব্দীর সূর্যের নিকটে আমাদের জীবনের আলোড়ন।” এ এক প্রায় ডারউইনীয় ভোর যখন পৃথিবীর ও প্রকৃতি জীবনের জন্য তৈরি। তর এর মধ্যে জীবনানন্দ প্রাকিৃতিক ফ্রয়েডীয় হননেচ্ছা আনেন নি। বরং মানুষ যেন “জীবনকে শিখে নিতে চেয়েছিলো”। “আমরা হেসেছি, খেলেছি; স্মরণীয় উত্তরাধিকারে কোন গ্লানি নেই”- ভেবেছি। এই সবের মধ্যে উহ্য আছে জীবনানান্দীয় “হয়তো”। কবিতাকে তিনি উপস্থাপন করেছেন এই ধরনের ধনাত্মক শুদ্ধবোধ দিয়ে। কিন্তু এরপরেই বিপরীতধর্মী বাস্তবতার ছবি তুলে সংঘাতের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছেন।
তার দ্বিতীয় চিন্তা : আসলে এই সব শুদ্ধবোধ মৃত- “রীতি আজ মৃতের চোখের মতো... তারার আলোর দিকে চেয়ে নিরালোক।” কেননা তিনি বাস্তবতা চোখে দেখেছেন,- “বিষাদের চেয়ে আরো বেশি কালোছায়া লঙ্করখানার অন্ন খেয়ে মধ্যবিত্ত মানুষের বেদনার নিরাময়ে হিসেব ডিঙিয়ে নর্দমার থেকে শূন্যে ওভারব্রিজে উঠে নর্দমায় নেমে ফুটপাত থেকে দূর নিরুত্তর ফুটপাথে গিয়ে নক্ষত্রের জ্যোৎ¯œায় ঘুমাতে বা মরে যেতে জানে।” এই তো দুর্ভিক্ষের দৃশ্য। ১৯৪২-৪৩ এর মন্বন্তরের কোলকাতা কি মূর্ত হয়ে উঠে নি? শুধু জীবন্ত নয়, এক গভীরতর লজ্জায় আরক্ত ও অবনত হয়ে গিয়েছে কেননা,- “মধ্যবিত্তমদ্্ির জগতে আমরা বেদনাহীন” - “অন্ধকারে-মহানগরীর মৃগনাভি ভালোবাসি”। ১৯৪২-৪৩ এর কোলকাতার রাস্তার পারে মৃত্যুন্মুখ মানুষের যে সব ছবি জয়নুল আবেদীন এঁকেছিলেন যে সবেরই সগোত্র এই ছবি জীবনানন্দ দাশের। এবং ছবি অবশেষে যা পারে না অক্ষরের তুলনায়, সেই চিত্রাতীত অনুশোচনাটুকু জীবনানন্দ ছেঁকে তুলেছেন,- অসহায় অর্থহীন, খাদ্যহীন, সম্বলহীনদের মৃত্যুমুখ পরিণতিতেও শহর ও সমাজের মধ্য ও উচ্চাবিত্তদের উদাসীনতায়, বেদনাহীনতায়। অবশেষে প্রশ্ন করেছেন, “আমরা কি তিমিরবিনাশী?” এবং মানুষের প্রতি অবিশ্বাসী না হয়ে বিশ্বাস করতে চেয়েছেন : “আমরা তো তিমিরবিনাশী হতে চাই। আমরা তো তিমির বিনাশী।”
এই কবিতা এতোই স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বসমুত্থ যে এর কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে না। কবিতা নিজেই উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, মর্মরিত হয়ে ওঠে, বেদনাকে ঋদ্ধি দ্যায়। তবু, এটি মাত্রাস্তনিত হয়েও প্রায় গদ্যের মতো কবিতা। অনেক অংশে গদ্যের মতোই পড়া যায় এবং মাত্রায় পুনর্বার ফিরে যাওয়া যায় কোন হোঁচট ছাড়াই। উত্তর-বোদলেয়ারীও আধুনিক কবিতায় কবিতাকে নির্মেদ করে তোলা এবং পদ্যানুগ করে তোলার সাধনায়, বাংলা কবিতায় এটি একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ সেই প্রচেষ্টার। এই সাধনার অন্য উদাহরণ পাওয়া যাবে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘দশমী’-র কিছু কবিতায় এবং বুদ্ধদেব বসুর শেষপর্বের কিছু কবিতায়। কিন্তু সে সব উদাহরণ ঐ কবিদ্বয়ের নিজস্বতা সম্পৃক্ত। এই কবিতার বিশেষত্ব প্রাতিস্বিক জীবনানন্দের।

এই কবিতার রচনা-কৌশলের একটি চোখে পড়বার মতো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ৭টি ঘটমান অসমাপিকা ক্রিয়াপদের। ‘খেয়া’, ডিঙিয়ে’, ‘উঠে’, ‘নেমে’, ‘গিয়ে’, ‘সরে’, ‘ঘুমাতে’ ক্রমাগত ব্যবহার করে সবশেষে ‘জানে’ ক্রিয়াপদে বাক্যের সম্পূর্ণতা। ক্রিয়াপদের২ এই ধরনের কুশলী পৌনপুনিক ব্যবহার দক্ষ শ্রুতিকল্প অধিকারী কবি-গদ্যকারের হাতেই সম্ভব। এই প্রয়োজনের ফলাফল দাঁড়িয়েছে পরপর দৃশ্য এবং ঘটমানতার পরিপ্রেক্ষিতে একটি তুঙ্গ ব্যঞ্জনার সৃষ্টি এবং আঘাত। স্মরণ করা যেতে পারে এই ধরনের ব্যবহার বোদলেয়ার৩ তাঁর একটি গদ্য কবিতায় করেছিলেন। জীবনানন্দের এই শৈলীর প্রয়োগ আরো অন্যান্য কবিতায় রয়েছে। তবে এখানে দুর্ভিক্ষের হতাশাগ্রস্ত বুভুক্ষুদের বেদনা এই ক্রিয়া-পারম্পার্যেই তীব্র হয়ে উঠেছে। এখানে ক্রিয়াপদ নেহাতই ক্রিয়া নয় সে বিশেষণের চারিত্র গ্রহণ করেছে এবং চিত্রকল্পের বৈশিষ্ট্যের সমাগম ঘটিয়েছে।
‘তিমির হানের গান’ কবিতাট আগাগোড়া মন্বন্তরের ভিত্তিতে লেখা। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, যে অন্ততঃ আরো তিনটি কবিতায়,৪ ‘বিভিন্ন কোরাস’ ‘প্রতীতি’ এবং ‘সূর্যপ্রতিম’-এর অংশ বিশেষে উনিশশো বিয়াল্লিশ তেতাল্লিশ, চুয়াল্লিশের মন্বন্তর এবং মানুষের “দুঃখ, ক্লান্তি, দীপ্তি এবং অধঃপতনের” কথা স্মরণ করেছেন। এককালের এই আত্মমগ্ন ও অন্তর্যামী কবি সময়-সমাজ- ইতিহাস দেখে, ভেবে, বুঝে যে মর্মস্পর্শী ও প্রত্যয়ের কবিতা লিখেছেন তার বোধ ও আস্বাদ কবি জীবনানন্দকে যেমন আরো উদ্ভাসিত করে তোলে, আমাদেরও তেমনি আরো অন্তর্দীপ্ত করে। ভাবতে অবাক লাগে যে ১৩৫৯ সনেও কোন বামপন্থী সাহিত্যপন্থী এই বলে তাঁকে ব্যঙ্গ করেছিলেন যে, “...অথচ বিস্ময়ের কথা এই যে এমন সমালোচক আছেন যাঁরা (জীবনানন্দর) এই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন, চিন্তাহীন, উদ্ভট অনুভূতিস্রােতকেই আখ্যা দেন ‘ঐতিহাসিক বোধ’ বলে”!

টিকা ও গ্রন্থপঞ্জী :
১. জীবনানন্দ দাশ, কবিতা প্রসঙ্গে (কবিতার কথা), ১৩৭৯, তৃতীয় সংস্মরণ, সিগনেট প্রেস।
২. ওমর শামস, জীবনানন্দর শ্রুতিকল্প।
৩. Charles Baudelaire, At One O'clock in the Morning- গদ্য কবিতা, এই গ্রন্থে Joseph M. Bernstein, Baudelaire, Rimbaud Verlaine, The Citadel Press কবিতাটির ক্রিয়াপদসমৃদ্ধ আংশবিশেষ নীচে উদ্ধৃত হলো।
Fifteen Were unknown to me having shaken hands in the same proportion, and that without having taken the precaution to buy gloves; having gone during shower, to the rooms of a dancing-girl who wanted me to design for her a costume of Venustre; having tried to court the favor of the Manager of a Theatre, who said as he ushered me out; "Perhaps you ought to call on Z: he's the heaviest, the stupidest and the most celebrated of all my playing Go to see him, and then we shall see"; having boasted (why?) of several villainous actions I had never committed, and having in a cowardly fashion denied certain other misdeeds that I accomplished with joy, an offence of boasting, a crime against human respect; having refused a simple favour to a friend, and having given a recommendation to a perfect knave : of! what a reliet to have finished with all that!

At on P.Clookin the Morning, Irose Poems

৪. এই তিনটি কবিতার প্রাসঙ্গিক আংশবিশেষ উদ্বৃত হলো :

ক্ষতবিক্ষত জীব মর্মস্পর্শে এলে গেলে- তবুও হেঁয়ালি;
অবশেষে মানবের স্বাভাবিক সূর্যালোকে গিয়ে
ঊত্তীর্ণ হয়েছে ভেবে- ঊনিশশো বিয়াল্লিশ সাল।
‘তেতাল্লিশ’ পঞ্চাশের দিগন্তরে পড়েছে বিছিয়ে-
মাটির নিঃশেষ সত্য দিয়ে গড়া হয়েছিল মানুষের শরীরের ধুলো:
তবুও হৃদয় তার অধিক গভীরভাবে হতে চায় সৎ:
ভাষা তার জ্ঞান চায়, জ্ঞান তার প্রেম,- ঢের সমুদ্রের বালি
পাতালের কালি ঝেড়ে হয়ে পড়ে বিষণœ, মহৎ
(প্রতীতী)


ডাইনে আর বাঁয়ে
চেয়ে দ্যাখে মানুষের দুঃখ, ক্লান্তি, দীপ্তি, অধঃপতনের সীমা;
উনিশশো বেয়াল্লিশ সালে ঠেকে পুনরায় নতুন গরিমা
পেতে চায় ধোঁয়া, রক্ত, অন্ধ আঁধারের খাত বেয়ে;
ঘাসের চেয়েও বেশি মেয়ে;
নদীর চেয়েও বেশি ঊনিশশো তেতাল্লিশ, চুয়াল্লিশ উৎক্রান্ত পুরুষের হাল;
কামানের ঊর্ধ্বে রৌদ্রে নীলাকাশে অমল মরাল
ভারতসাগর ছেড়ে উড়ে যায় অন্য এক সমুদ্রের পানে-
মেঘের ফোঁটার মতো স্বচ্ছ, গড়ানে;
সুবাতাস কেটে তারা পালকের পাখি তবু;
ওরা এলে সহসা রোদের পথে অনন্ত পারুলে
ইস্পাতের সুচীমুখ ফুঠে ওঠে ওদের কাঁধের পরে, নীলিমার তলে;
অবশেষে জাগরুক জনসাধারণ আজ চলে?
রিরংসা, অন্যায়, রক্ত, উৎকোচ, কানাঘুষো, ভয়
(বিভিন্ন কোরাস)

‘কেবলি ব্যক্তির- ব্যক্তির মৃত্যু শেষ ক’রে দিয়ে আজ
আমরাও ম’রে গেছি সব’-
দলিলে না ম’রে তবু এ-রকম মৃত্যু অনুভব
ক’রে তারা হৃদয়বিহীনভাবে ব্যাপ্ত ইতিহাস
সাঙ্গ ক’রে দিতে চেয়ে যতদূর মানুষের প্রাণ
অতীতে ম্লানায়মান হয়ে গেছে সেই সীমা ঘিরে
জেগে ওঠে উনিশশো, তেতাল্লিশ চুয়াল্লিশ, অন্তরের
অফুরন্ত রৌদ্রের তিমিরে;
(সূর্যপ্রতিম)