করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





মাসরুর আরেফিনের প্রথম উপন্যাস আগস্ট আবছায়া
বইমেলা উদ্বোধনের ঠিক নয়দিন আগের কথা। মাসরুর আরেফিনের ফোন পেলাম, আজকেই তাঁর কর্মস্থলে যেতে হবে। দাবী আছে বিলক্ষণ, তাই এমনভাবে ডাকতে পারেন। সকালের কাগজে মাসরুরের ছবি দেখেছি। সব কাগজেই নিশ্চয়ই থাকার কথা। খুব গতিময় আর সৃজনশীল একটি অসরকারি ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে আসীন হয়েছেন তিনি, সে খবরটিই ছবিসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সেদিন। আমার যেতে একটু দেরি হয়ে গেল। এমন দিনে না যাওয়াই ভালো, এই দোটানায় ভুগতে ভুগতে। কত মানুষ যে আসছেন ফুলের কেয়ারি হাতে অভিনন্দন জানাতে। তাঁর কক্ষ থেকে বিদেশি ক’জন বেরিয়ে যাওয়ার পর আমাকে ডেকে নিলেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কক্ষ যতোটা বড় হয়, তার চেয়েও কি খানিকটা বেশি বড় এটি? আমাকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে মহাআসনটি পিছনে ঠেলে সহাস্যে এগিয়ে এসে আলিঙ্গনে বাঁধলেন। আমি তাঁর আবেগ অনুধাবন করতে পারছিলাম বেশ।
সেই নব্বুই দশকের গোড়া থেকেই তো তাঁকে চিনি। পড়তেন ভারতে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে। আমি সদ্য সাহিত্য পত্রিকা মাটি তৈরির আনন্দযজ্ঞে যুক্ত হয়েছি। মাসরুর চিঠি লিখে জানালেন বিশ্বসাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ পাঠাচ্ছেন কিছু দিনের মধ্যে। ডাকে এসে গেল প্রবন্ধ। এরপর আর থামাথামি নেই- মার্কেজ, কাফকা, স্যঁ ঝন পের্স- কী নয়! ছুটিতে ঢাকায় এসেই মাটি পত্রিকায় আমার সঙ্গে দেখা করে গেলেন। তারপর... থাক সেসব কথা। সাহিত্যপাঠকমাত্রই জানেন, আমাদের এই মাসরুর আরেফিন বাংলা ভাষায় কাফকার গল্পসমগ্র অনুবাদ করেছেন; করেছেন হোমারের ইলিয়াড। অনুবাদ অনেকেই করেন, কিন্তু তার বিশ্লেষণ টীকাভাষ্য এবং বিশদ পাঠ-পর্যালোচনা দেন ক’জন? মাসরুর আজ কেন ডেকেছেন আমি অনুমান করতে পারছি। প্রথম উপন্যাস ‘আগস্ট আবছায়া’ মাত্র শেষ করেছেন, সেটি নিয়ে কথা বলবেন।
কথা তো অনেক হলোই, তবে সেটিই সব নয়। স্পাইরাল বাইন্ডিং করা ঢাউশ একটি কম্পোজকৃত পা-ুলিপি আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন... সে যাক। কথা যেন ফুরোয় না। এই উপন্যাস নিয়ে তাঁর কত কথা! দুতিনটে অধ্যায় থেকে পড়েও শোনালেন খানিকটা করে। শিহরিত হলাম। এমন লেখা কি আগে পড়েছি? প্রথম উপন্যাসের মাধ্যমেই মাসরুর বাংলা সাহিত্যে একটা সমীহ-জাগানো আসন করে নেবেন- এমনটা বিশ্বাস জন্মালো। পরদিন রাজশাহীতে কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হককেও তিনি পা-ুলিপির একখানা কপি পাঠালেন। এ ফোর সাইজের প্রায় ৩০০ পাতা পড়তে সময় তো লাগবেই। ছাপালে এটি ৪৫০ পাতা হবে নিশ্চয়ই। ঘুমোনোর সময় ছাড়া ওটি আমার চোখের সামনেই থাকতে লাগলো। অফিসে যাওয়া-আসার পথেও পড়ি; দেখলাম এর এমন আকর্ষণ যে অফিসের কাজ ঠেলে সরিয়ে রেখে, এমনকি বাসায় ফিরে ওয়াশরুমে না গিয়ে, ঘরের পোশাক না পরেই সোফায় বসে বইটি পড়ে চলেছি। এমনই এক ঘোর আর টান। উপন্যাসখানা তখনো আমার শেষ হয়নি। হাসান ভাই কি পড়তে শুরু করেছেন? ক’দিন পর ফোনে উপন্যাসটার কথা জিজ্ঞেস করলে একটানা অনেকক্ষণ এটি নিয়ে বলে গেলেন তিনি। সেই বক্তব্যের ভেতর থেকে কয়েকটা লাইন যদি গুছিয়ে বলতে চাই তবে তা হবে এমন- ‘অসাধারণ উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যে এমন লেখা আছে বলে আমার মনে হয় না। মাসরুরের পা-িত্য, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞানের পরিধি- সব মিলিয়ে আমি মুগ্ধ। প্রত্যেক পাঠকের জন্যে এ অনন্যগ্রন্থটি অবশ্যপাঠ্য।’
প্রথমাকেই মাসরুর নির্বাচন করেছেন প্রথম উপন্যাসটির প্রকাশক হিসেবে। কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা বইটি চেয়েছিল। মাসরুর আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কাকে দিলে ভালো হয়। মাসরুর তো আর এখন সেই ছোটোটি নেই যে আমার কথা শুনবেন। আমিও তা চাই না। সেজন্যেই প্রকাশনা সংস্থাগুলোর ফ্যাক্টস বিশ্লেষণ করে উপসংহারে জানিয়েছিলাম, আপনি প্রথমাকে দেবার কথা ভাবতে পারেন।
প্রথমা থেকে যে কোনোদিন উপন্যাসটি চলে আসবে। সেই কবে থেকে আমি মাসরুরকে নিজের লেখা লিখবার জন্যে তাগাদা দিয়ে আসছি। বিশ্বসাহিত্যের অনুবাদ তিনি করছেন, সেটি প্রশংসাযোগ্য। তবে আমার সাফ কথা, ওসব অন্যের লেখা। আমি চাই আপনার নিজের লেখা। নিজের উপন্যাস। তিনি বলেন, লিখছি তো! এই তো ১৫০ পৃষ্ঠা লিখেছি... ২০০ পাতা শেষ করে উঠলাম, ইত্যাদি।
একজন ঔপন্যাসিকের জন্ম প্রত্যক্ষ করার মধ্যে আশ্চর্য এক বিস্ময় ও বিরল আনন্দ রয়েছে। এবছর আমি একটু অনিয়মিত বইমেলায় যাচ্ছি। প্রথমা প্যাভিলিয়নের আশপাশ দিয়েও হাঁটি। কিন্তু জানি, যেদিন আগস্ট আবছায়া আসবে, সেদিন সকালবেলায় ফোন পাবো মাসরুরের। সেদিন বইমেলায় নিশ্চয়ই যাব, দূর থেকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখবো মাসরুর আরেফিনকে, যেমন বহুবছর আগে কাফকা বেরুনোর দিন করেছিলাম...।
- মারুফ রায়হান




পুনশ্চ:
এ লেখা আপলোড হওয়ার সময় মাসরুরের বার্তা পেলাম, বইমেলায় ১৫ ফেব্রুয়ারি আসছে উপন্যাসটি। এই সুযোগে শেষ প্রচ্ছদ থেকে কিছু কথা তুলে দিতে ইচ্ছে হলো।
‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে মানুষের ভালোবাসার ক্ষমতা সীমিত, অন্যদিকে তার নৃশংস ও পাশবিক হওয়ার শক্তি সীমাহীন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে উপন্যাসের নায়ক এক মাথা-ঘোরানো সফরে নামেন মানব ইতিহাসে বর্বরতার যতো অলিগলি রয়েছে, তার অনেকগুলো ধরে। তিনি বুঝতে চান কী সম্পর্ক আছে ’ ৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের সঙ্গে দূর ইতিহাসের নিয়ানডারথাল মানুষদের ঝাড়ে-বংশে নির্মূল হওয়ার? রাশিয়ান দুই মহান কবির মর্মান্তিক মৃত্যু কী সূত্রে গাঁথা শেখ কামালের খুনের সাথে? আর ‘সময়’ ও ‘স্মৃতি’ নিয়ে এত পড়াশোনা করেও কেন তিনি বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- নিয়ে তার প্রবল অবসেশনের তলটা খুঁজে পেতে? কেন এ পৃথিবীকে এমন হতেই হলো, যেখানে সহিংসতাই সভ্যতার নিগূঢ়ার্থ? কে বানালো এই গর্বোদ্ধত মহিষ-নিয়ন্ত্রিত পাষাণ পৃথিবী, যেখানে মানুষের বিশ্বাসগুলোর মধ্যে আছে শুধু কাব্যিকতা, লড়াইগুলোয় হাস্যরস, আর সব লড়াইয়ের উপসংহারে দুর্বিষহ এক মৃত্যুময়তা?’