করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৭ বর্ষ ০৩ সংখ্যা
অক্টোবর ২০২৪

লেখক-সংবাদ :





শিল্পের অন্দরে স্বাধীনতার রাজপথ
সিলভিয়া নাজনীন
সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধিকারের জন্য আত্মউৎসর্গের সবচেয়ে মহৎ উদাহরণ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা, শিল্পী, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষের নির্ভীক অংশগ্রহণে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয় মাত্র নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে। কিন্তু এর জন্য ছিল সুদীর্ঘ কালের প্রস্তুতি; যা আমাদের শিল্প সংস্কৃতিকে দিয়েছে নতুন মাত্রা, নতুন অভিমুখ ও গতিশীলতা।

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে তিনটি আলাদা রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নবাব, ওমরা এবং ভূস্বামীদের দ্বারা গঠিত মুসলিমলীগের নেতারা ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের নামে পূর্ববাংলার প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা করে। পূর্ববাংলাকে শৃঙ্খলিত করা হয় পূর্বপাকিস্তান নামে। দু’টি আলাদা ভূখ-, তার ভাষা আলাদা, সংস্কৃতি আলাদা, আচার-আচরণ, ঐতিহ্য, ধ্যানধারণা, অর্থনীতি আলাদা। স্থলপথে দু’হাজার মাইল এবং জলপথে তিনহাজার মাইল ব্যবধানে দু’টি ভিন্ন জাতিকে ধর্মের দোহাই দিয়ে একটি রাষ্ট্রে আবদ্ধ রাখা হয়। পূর্ব বাংলায় শোষণের ক্ষেত্র তৈরির উদ্দেশে গঠিত পূর্বপাকিস্তানে অচিরেই ধর্মের খোলস ভেঙ্গে পশ্চিমা লুটেরাদের চেহারা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। সংখ্যাগুরু বাঙালির মুখের ভাষাকে বিলুপ্ত করে মুষ্টিমেয় সংখ্যালঘুর ভাষা উর্দূকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্তের শুরুতেই বাংলার মানুষ রুখে দাঁড়ায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীতে ছাত্রজনতার অকাতরে প্রাণ বিসর্জন পশ্চিমা চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রথম রক্তাক্ত প্রতিবাদ, যা বাংলাদেশের অভ্যূদয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। ভাষাআন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এদেশের শিল্পীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। মিছিল, সমাবেশ, বক্তৃতা এবং তুলির আঁচড়ে শিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছেন পশ্চিম পাকিস্তানের নির্যাতন ও চক্রান্তের নানাবিধ কূটকৌশল। রাতের পর রাত জেগে শত শত প্রাচীরে এঁকে, দেশাত্মবোধক বক্তব্য এবং ব্যঙ্গচিত্র চিত্রায়নের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের প্রতি শিল্পীরা যেসব কটাক্ষ করে তা ক্ষমতাসীন সরকারকে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন করে তোলে। পাকিস্তান সরকার শত চেষ্টা করেও শিল্পীদের থামাতে ব্যর্থ হয়। যেখানে এদেশের মানুষ মাতৃভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেন ভাষাআন্দোলন কমিটি ঠিক সেই স্থানেই একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। সরকারের আদেশে প্রথমে পুলিশ এবং পরে সামরিক বাহিনী এই স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙ্গে দেয়। ভাষা আন্দোলন কমিটি রাতারাতি এই স্তম্ভ পুনঃনির্মাণ করে। পঞ্চাশ দশকের প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ভাঙ্গা গড়ার প্রতিযোগিতা চলে। ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় শিল্পী হামিদুর রহমান ও শিল্পী নভেরা আহমেদের যৌথ প্রচেষ্টায় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয় যা পরবর্তী দশকে তরুণদের ভেতর দেশাত্মবোধের চেতনা সৃষ্টিতে সহায়ক হয়। ১৯৫৪ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ.কে. ফজলুল হক এবং মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট দালাল মুসলিমলীগের বিরুদ্ধে নির্বাচণে বিজয়ী হলে শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সেনাপতি আইয়ূব খান ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে সামরিক শাসন জারি করে বাঙালির সব ধরনের স্বাধীনতা হরণ করে শোষণের পথ নতুন করে উন্মুক্ত করে।

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পূর্ববাংলার মানুষের জন্য স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ছয় দফা ঘোষণা করেন। ছয় দফা ছিল পূর্ববাংলার বাঙালিদের সব রকম অর্থনৈতিক শোষণ, বঞ্চনা আর নিপীড়ন থেকে মুক্তির এক অসাধারণ দলিল। ছয় দফা দাবি করার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সব নেতাকে জেলে নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে কঠিন শাস্তি দেয়ার উদ্দেশে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে দেশদ্রোহিতার মামলার প্রধান আসামীও করা হয়েছিল।

শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে গণআন্দোলন ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়। এর ফলে আইয়ূব খান বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে এবং মামলা প্রত্যাহার করে পদত্যাগে বাধ্য হয়। তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন সামরিক প্রধান ইয়াহিয়া খানের কাছে। ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল ছিল অবিশ্বাস্য। পূর্বপাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনের ১৬৭ টি আসন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ। ইয়াহিয়া খান তখন নির্বচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা টালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। এরপর সেই ভয়াল ২৫ মার্চ। নিরস্ত্র মানুষের উপর সেনাবাহিনী ঝাপিয়ে পড়ে পাশবিক বর্বরতায়। শুরু হয় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। মৃত্যুর  এই বিভিষিকার মধ্যেও অসহায় বাঙালি তার দুর্জয় মনোবল আর সাহস নিয়ে রুখে দাঁড়ায় মরণপন প্রতিরোধ যুদ্ধে।

বাংলাদেশের এই ক্রান্তিলগ্নে শিল্পীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন সামর্থ অনুযায়ী। ২ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্বরে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে বাংলার চারু ও কারুশিল্পী সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে চিত্রশিল্পীরা ‘স্বাধীনতা’র প্ল্য¬াকার্ড বহন করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে মিছিল করা হয়। এই মিছিলে রফিকুন্নবী, হাশেম খানসহ অনেকের আঁকা কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র, স্লে¬াগান, পোস্টার ছিল। কেউ সরাসরি রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে, কেউবা রঙতুলি হতে প্রচারণায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘এজমা-ই-ইমতিয়াজ’ এবং পাকিস্তানের নাগরিকত্ব বর্জন করেন। কামরুল হাসান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশা প্রস্তুত করেন। অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচামন্ত্রণালয়ে কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একদল শিল্পী মনোগ্রাম, পোস্টার, কার্টুন, লিফলেট, ব্যানার, নকশা তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকৃষ্ট করেন। এই সময়ে তৈরি হয় শিল্পী কামরুল হাসানের অবিস্মরণীয় পোস্টার ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’। এভাবে অন্যান্য শিল্পীরা মিলে ‘বাংলার হিন্দু বাংলার খ্রিস্টান বাংলার বৌদ্ধ বাংলার মুসলমান আমরা সবাই বাঙালি’, ‘সদা জাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী’, ‘বাংলার মায়েরা মেয়েরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা’, ‘রক্ত যখন দিয়েছি আরো রক্ত দেবো’ শীর্ষক পোস্টারগুলো তৈরি করেন। এসময়ের শিল্পীরা ছিলেন কামরুল হাসান, নিতুন কু-, দেবদাস চক্রবর্তী, নাসির বিশ্বাস, প্রাণেশ ম-ল, বীরেন সোম প্রমুখ। এছাড়া শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, স্বপন চৌধুরী, গোলাম মওলাও ছিলেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পে নানা অনুষ্ঠানের মঞ্চসজ্জা, দৃশ্যপট অঙ্কন এবং নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন। শিল্পী শাহাবুদ্দিন সরাসরি রণাঙ্গনে কমান্ডার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। শিল্পী আবুল বারক আলভীও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনের ফলে বাঙালিদের মধ্যে যে জাতীয়তাবোধের বীজ অঙ্কুরিত হয় তা পূর্ণতা লাভ করে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে। স্বাধীনতাত্তোর কালে এদেশের শিল্পী সম্প্রদায়Ñবিশেষত নবীন শিল্পী ও শিল্প শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশাত্মবোধক ধারা বিশেষ প্রাধান্য পায়। তবে ভাষা আন্দোলনের তুলনায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাজের পরিমাণ কম। মুক্তিযুদ্ধের বিশাল পটভূমিতে বিভিন্ন শিল্পীর অভিব্যক্তি ভিন্ন রকমের। অবয়বী ধারায় কেউ সরাসরি চিত্রিত করেছেন গেরিলা যোদ্ধা, বধ্যভূমির দৃশ্য, বিজয়োল্লাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মরণীয় মুহূর্ত, দগ্ধ শহর-গ্রাম-লোকালয় ইত্যাদি মুক্তিযুদ্ধের অন্তপ্রবাহকে।

শিল্পী কামরুল হাসানের ছবিতে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা ছিল, অন্যদিকে শিল্পাচার্যের ছবিতে জীবনের সাহসিক উচ্চারণ, আশাবাদ দেখা যায়।  শিল্পী এস.এম. সুলতান গণহত্যার নিষ্ঠুরতা তুলে ধরেন তাঁর চিত্রকর্মে। তেমনি শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ এঁকেছেন রেখাধর্মী চোখের ফর্মে কান্নার ‘সিম্ফনি’। শিল্পী হামিদুর রহমানের মনে মুক্তিযুদ্ধ গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ধারাবাহিক কাজগুলোর মধ্যে ‘ভীতি’, ‘বন্দি শিবিরে নারী’, ‘হাতগুলো’, ‘ঢাকার দিকে বিজয় মিছিল’ উল্লে¬খযোগ্য। এছাড়া শিল্পী আমিনুল ইসলামের গণকবরের ইতিহাস, শিল্পী কিবরিয়ার ছবিতে জর্জরিত আঘাতে হৃদয়ক্ষরণ আমাদের স্বাধীনতার সময়কালকে তুলে ধরে। শিল্পী মুর্তজা বশীরের ‘স্বাধীনতার এপিটাফ’ গুরুত্বপূর্ণ চিত্রকর্ম। তাঁর ছবিতে কান্না, শোক, গভীরতা, আত্মার শুদ্ধতা উন্মোচিত হয়েছে। এছাড়াও শিল্পী মনিরুল ইসলাম, কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন্নবী, হাশেম খান মুক্তিযুদ্ধের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে চিত্রপট উজ্জ্বল করেছেন।

বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ছিল একই সাথে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই। এই লড়াইয়ে অদম্য শিল্পীদের মনোবল ও দেশপ্রেমের অনন্য কীর্তি হয়ে আমাদের জানিয়ে দেয় বাংলার শিল্পীদের গর্বিত ইতিহাস। ’৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাশিল্পী শাহাবুদ্দিনের চিত্রে বিপুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধার দেহের পেশী, অস্ত্র, আক্রমণ, বিজয়ী যোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতার পতাকাÑনানারূপে মূর্ত করেছেন। শিল্পীদের বিচিত্র অভিনিবেশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে গভীর প্রাণসঞ্চারী করে তুলেছে। ১৯৭২ সালে চারুকলার তরুণ শিল্পীদল  ‘পেইন্টার’স গ্রুপ’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রদর্শনী করে। শিল্পীদের মূল বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ, তার ভয়াবহতা, স্বাধীনতা অর্জন ও স্বাধীনতা কেন্দ্রিক রোমান্টিসিজম। এসময়ের উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন চন্দ্র শেখর দে, হাসি চক্রবর্তী, কাজী হাসান হাবীব, মনসুরুল করিম প্রমুখ। এছাড়া তরুণ শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী হয়ে ছাত্রাবস্থা থেকেই ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। ১৯৭৩/’৭৪ সালে ঢাকা পেইন্টার’স গ্রুপ নামে অপেক্ষাকৃত তরুণ শিল্পীদেরও আবির্ভাব হয়। তারাও মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে বিষয় হিসেবে নিয়ে প্রচুর কাজ ও প্রদর্শনী করেছেন। শিল্পীরা হলেন তরুণ ঘোষ, দীপা হক, বিমল পাল, সুকুমার পাল, নজরুল হোসেন, কুহু, উত্তম দে প্রমুখ। উল্লে¬খ্য, শিল্পী তরুণ ঘোষও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর ‘একাত্তর সিরিজ’ নামে বেশকিছু চিত্রকর্ম রয়েছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ অত্যন্ত প্রকাশবাদী ভঙ্গিতে এসেছে। আশির দশকে ‘সময়’ গ্রুপের প্রদর্শনীর মধ্যেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয় হিসেবে এসেছে। বিশেষ করে শিল্পী ঢালী আল মামুনের ‘সেভেনটি ওয়ান ইন দ্য টাইম অব প্রেগন্যান্সি’, শিল্পী নিসার হোসেনের ‘ঘাতকের মুখ’, শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যরে ‘তিনজনের প্রতিকৃতি’ উল্লে¬খযোগ্য। এছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে আশির দশকের শেষে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা’ বিষয় নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছিল এবং আরো অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এসময়ে শিল্পী কাজী রকিবের কথা উল্লে¬খ করা যায়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদের বিজয়লগ্নে ১৪ ডিসেম্বর জাতির সেরা সন্তানদের খুঁজে হত্যা করে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থানকে চিহ্নিত করতে সচেষ্ট হয়। সেই ক্ষত আজো রয়েছে। চিত্রকলা থেকে শুরু করে সকল সৃজনশীলতার বিরুদ্ধবাদীদের বিপক্ষেই ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সাংস্কৃতিক এই পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের অর্জন অসামান্য হলেও প্রকৃত বিজয়ের জন্য আমাদের প্রয়োজন দেশাত্মবোধের গভীর অনুধাবন।

আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ। সহস্র প্রতিকূলতার মুখেও বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন ও আদর্শ, প্রেম ও সংকল্প, ধৈর্য ও প্রত্যয়, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ বিজয়ী করে তুলেছে। স্বাধীনতার এই অর্জনকে নতুন প্রহরে প্রজন্মান্তরে বিস্তৃত করার দায়িত্ব সকলের।