করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





৭ কবির সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কবিতা


রিমঝিম আহমেদ
মানুষ সমীপে
....................
হিন্দু-মুসলিম শত্রু বটে, কখনো বন্ধু নয়
এ কথা বলেছে যারা–
তারাই দিয়েছে ফুঁক আগুনে, বাতাসের আস্কারা
পানিতে মিশিয়ে ধর্মের বড়ি জল করে দিল ঘোলা
তোমার দুয়ারে ঝোলায় কারা স্বর্গ নামক মুলা!
তুমি কি পড়েছ ফাঁদে?
তোমার আগুনে কেন তবে আজ মানবতা পুড়ে কাঁদে!
তুমি কি শেখনি মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়ায় শুধু?
সংবিধানের পাতা ভরে আছে ধূসরতা, ধুলো ধু ধু
তারাই করেছে ভূমি দখলের নকশা চমৎকার
দেশের মাটিতে বিদেশ নেমেছে, চেতনা অন্ধকার
পানিতে তুমি জল মেশাবে অথবা জলেতে পানি
কোন ফাঁদে দেবে পা?
মানুষ এসেছে ধর্মের আগে, মানুষ-ই প্রার্থনা...
==


জ্যোতির্ময় নন্দী
স্বীকারোক্তি
....................

আমার উপাস্যের প্রতিমা আর আলয়
ভেঙে তছনছ করে দিলে
প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে
আমার উপাস্য ও ধর্মের বিরুদ্ধে
অবিরাম বিষোদ্গার করলে
আমার কোনো অবমাননা হয় না
আমার মা, বোন, স্ত্রী বা কন্যাকে
ধর্ষণ করলে
আমার কোনো অপমান হয় না
আমার সারাজীবনের সমস্ত সঞ্চয়
সর্বস্ব লুটপাট করে নিলে
আমার কোনো কষ্ট হয় না
হাজার বছর ধরে এ ঐতিহ্য সমানে চলছে
আমার ভূমিতে আমাকে
বানানো হচ্ছে
মানবেতর প্রাণী
জবাইযোগ্য পশু
আমার সাতপুরুষের বাস্তুভিটায়
চরানো হচ্ছে
অপরাজনীতির ঘুঘু
আমার সামনে সম্প্রীতির মুলো ঝুলিয়ে
পেছনে টেনে নেয়া হচ্ছে পাছার কাপড়
বার বার লাথি মেরে ভেঙে দেয়া হচ্ছে
আমার কোমর
শুধু কোমর বেঁধে ঘুরে দাঁড়াতে
পারছি না বলেই
হাজার বছর ধরে...
==


টোকন ঠাকুর
হাসিকান্না ২০২১
....................

সংখ্যালঘু দেখতে কেমন জানো?
সংখ্যাগুরু দেখতে কেমন হয়?
বাঁশখালিতে পুড়ে মরল কারা?
কুমিল্লায় আজ কাদের মুখে ভয়?
রামুতে যে মরেছে আক্রমণে
কী নাম তার? কী তার পরিচয়?
সাঁওতালি ঘর পুড়িয়ে দিল কারা?
রোহিঙ্গারা দেখতে মানুষ নয়?
রক্ত রক্ত রক্তমাখা ভূমি
ধর্ম ধর্ম ধর্ম কারে বলে?
মানুষ হত্যা কী আর এমন পাপ?
রাজনীতিতে সবই যখন চলে
রাজনীতিই তো আসল কথা গুরু
সংখ্যালঘু-ফগু কথার কথা সব
কে কতটা দখল করে খাবে
তার মহড়াই ধর্মীয়-মতলব
তাই নিয়েই তো দিন গড়িয়ে যায়
দস্যু আসেন মহান দাতার বেসে
তার ইচ্ছাই ধর্মশাস্ত্র, তিনি
মুচকি হাসেন কান্নাচাপা দেশে।
==


শামীম আজাদ
সংখ্যায় লঘু হয়ে গেছি
....................

সংখ্যায় লঘু হয়ে গেছি
পদে পদে উষ্ঠা খাচ্ছি
দেশগেহ নাপাক করে
একটির পর একটি
কবিরাহ্ গুনাহ করে করেও
পার পেয়ে যাচ্ছে ওরা
কুলকুচি করেও দাঁত থেকে
সংখ্যালঘুর দাগ ধু’তে পারছি না
আমি কুন্ঠিত, মর্মাহত ও অর্ধমৃত
ওরা আমার গা থেকে খুলে নিচ্ছে
একাত্তরে পাওয়া রক্ষাকবচ
মানবতা, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির
আমি বেআব্রু হয়ে গেছি
তবে আমি কোন সখের সওয়ারী নই
আমিও পিরানী কবি
মর্মাত্মা দিয়া দেখে লইতেছি,
চিহ্নিত করিতেছি
বাংলাদেশের পৃথিবী-নিকৃষ্ট
পাপিষ্ঠদিগের ছবি
==


মজিদ মাহমুদ
মহিষাসুর
....................

তোমার হাতে হত্যা হতে হতে
ঠাঁই পেয়েছি পায়ের তলে- হয়তো কোনো মতে
খাড়ার ঘায়ে মারার আগে দৃষ্টি হেনে বান
মাগো আমি পাতক ছিলাম তোমায় অপমান
খুন করেছি পুত্র তোমার সুন্দরী এক কনে
বিশ্বটা আজ পদানত অবৈধ এক রণে
শাসন করার মানস নিয়ে শোষণ করার পণ
তোমার খাড়া আসলে নেমে নাশতে কতক্ষণ
ঘোড়ার পিঠে আসন মাগো গাধার পিঠে ঠাঁই
তোমার থানে ভাগ্য গোনে দুঃশাসনের ভাই
অসুর বধের প্রজ্ঞা নিয়ে খাড়ায় কুপোকাত
তারাই এখন তোমার পায়ে পুষ্প করে পাত
জগত জুড়ে শাসন করে বক্ষে রেখে পা
হয়তো অসুর- সবাই জানে তুমিই তাদের মা
তোমায় রেখে বাপের বাড়ি মাত্র কটা দিন
লোক দেখানো মায়ের সেবা তিলক এঁকে ঋণ
এক অসুরে বধতে তোমায় ধরার আগমণ
তোমার সেবায় মত্ত অসুর লক্ষ কোটি জন
কোন অসুরকে মারবে তুমি কোন অসুরে ঘায়
পাপ-পুণ্যের হিসাব জটিল আজকে বসুধায়
তবু যদি শান্তি আসে তোমার খাড়ার বলে
এই অসুরে বিনাশ করো তোমার পদতলে
বিশ্ব থেকে বিদায় করো দুঃশাসনের রাজ
তবেই তুমি অসুরনাশা মায়ের মতো কাজ।
==


কামরুল হাসান
দীপার কারণে
....................

সীমান্তে দেখা হল নীল বুনোফল।
কে কোন ভূমির পরে, কে কোন জমিন ছেড়েছে
কে কোন জলবায়ু হতে টেনেছে জীবন?
এ তো এক অবিভাজ্য মাটি, সহোদরা ঘরদোর
জমজ জুড়নে আছে আলো-হাওয়া মিশে
এ কার বনভূমি বল, ও কার নদী
এ নদী-মাটি-জল আলাদা করে কারো?
কে টেনেছে সীমারেখা, কে তুলেছে বিভেদী দেয়াল
একটি হৃদয় কেটে দুটি খণ্ড কে করেছে বলো,
কার তাতে লাভ হল, দীপা?
তুমি কি অচেনা দ্বীপ, খুব দূরে গেছো?
এখন তোমাকে যদি টেনে নিই বাহুর ভেতর
দুটি ঠোঁটে ঠোঁট গুঁজে রাখি
জানি খুব চেচামেচি হবে
মুখোমুখি দাঁড়াবে দুই সৈন্যবাহিনী।
আমাদের কুচি কুচি করে কেটে
ভাসিয়ে দেয়া হবে গঙ্গা ও পদ্মায়।
জলে ভেঙে, জলের ভেতর হয়ে জল
তোমার গভীরে খুব মিশে যাব দীপা,
সীমান্ত উপড়ানো দুই ভূমি যাবে মিশে
কাটাকুটিহীন!
==


মারুফুল ইসলাম
এ উগ্রবাদ আমার ধর্ম নয়
....................

এ উগ্রবাদ আমার ধর্ম নয়
এ জঙ্গিবাদ আমার ধর্ম নয়
এ মৌলবাদ আমার ধর্ম নয়
আমার ধর্ম মানুষ
আমার ধর্ম প্রকৃতি
আমার ধর্ম পৃথিবী
এ রগকাটা আমার ধর্ম নয়
এ এসিডবাজি আমার ধর্ম নয়
এ উন্মত্ততা আমার ধর্ম নয়
আমার ধর্ম সত্য
আমার ধর্ম সুন্দর
আমার ধর্ম কল্যাণ
এ হিংসা আমার ধর্ম নয়
এ জিঘাংসা আমার ধর্ম নয়
এ তাণ্ডব আমার ধর্ম নয়
আমার ধর্ম ভালোবাসা
আমার ধর্ম সহিষ্ণুতা
আমার ধর্ম শান্তি
এ রক্তপাত আমার ধর্ম নয়
এ অগ্নিকাণ্ড আমার ধর্ম নয়
এ ধ্বংসযজ্ঞ আমার ধর্ম নয়
আমার ধর্ম যুক্তি
আমার ধর্ম মুক্তি
আমার ধর্ম সৃষ্টি
এ সংকীর্ণতা আমার ধর্ম নয়
এ সাম্প্রদায়িকতা আমার ধর্ম নয়
এ গোঁড়ামি আমার ধর্ম নয়
আমার ধর্ম সম্প্রীতি
আমার ধর্ম সাম্য
আমার ধর্ম সৌষম্য
এ কূপমণ্ডূকতা আমার ধর্ম নয়
এ পশ্চাৎপদতা আমার ধর্ম নয়
এ প্রতিক্রিয়াশীলতা আমার ধর্ম নয়
আমার ধর্ম হৃদয়
আমার ধর্ম চেতনা
আমার ধর্ম প্রগতি
এ অশিক্ষা আমার ধর্ম নয়
এ অপসংস্কৃতি আমার ধর্ম নয়
এ অন্ধকার আমার ধর্ম নয়
আমার ধর্ম শিক্ষা
আমার ধর্ম সংস্কৃতি
আমার ধর্ম আলো
এ অজ্ঞতা আমার ধর্ম নয়
এ অন্ধতা আমার ধর্ম নয়
এ বদ্ধতা আমার ধর্ম নয়
আমার ধর্ম জ্ঞান
আমার ধর্ম বিজ্ঞান
আমার ধর্ম বিপ্লব
সামূহিক জীবনবিমুখতার বিরুদ্ধে
উজ্জ্বল সূর্যের নিচে শ্যামল বাংলার অবারিত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে
আমি আমার কথা বলে যাই অরুদ্ধ কণ্ঠে
এ আমার অধিকার
এ আমার বোধন
এ আমার ধর্ম