করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





বাঘস্বপ্ন
রুখসানা কাজল
তেজগাঁ ষ্টেশনে ট্রেন থামতেই হাচোড় পাচোড় করে নেমে পড়ে সহেলি। দশ বছরের মেয়ে শাবনূর বেশ চটপট। কাঁধে ঝুলানো ভারী ব্যাগ নিয়ে আগেই বেরিয়ে গেছে ভিড় ঠেলেঠুলে। এদিকে ভয়ে ছেলেটা একেবারে বুকের সাথে লেপ্টে আছে। ঠিক মত পা ফেলে এক পাও এগুতে পারছে না। তার উপর বোরখার নেকাবে বার বার চোখ ঢেকে যাচ্ছে। এত মানুষজন এই ষ্টেশনে! গিজগিজে ভিড়ে ঘামের গন্ধে বমি ঠেলে আসছে । তার উপর দুঃখে বুকটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে আছে। মনে মনে ভাবে, আল্লাহ কি গরীবদের জন্যে কেবল দুঃখই রাখছুইন ? বেডার কি ক্ষ্যামতা নাই যাগোরার তিনবেলা ফেলাইয়া ছড়াইয়া খাইয়া পইরা হাউসে কান্দে হাউসে হাসে তাগোরার জন্য একটু দুঃখ দিবারার !নেকাব তুলে ভিড়ের ভারে ঠোক্কর ঠোক্কর খেতে খেতে সহেলি এগিয়ে যায়।পেট ঘুলিয়ে টক রস উঠছে মুখে। ওয়াক থুঃ। কে একজন তার গা ঘেঁষে চলে যায়। একজনআবার হুমড়ি খেয়ে ঠিক গায়ের উপর এসে পড়ে। সহেলি ভাবে ভিড়ে বোধহয় বেসামালঘটছে এসব। কিন্তু লোকটি সরে যাওয়ার আগে এমন বিশ্রী একটি কথা বলে যে সহেলিরমুখের ভেতরটা নিম তেতো হয়ে মাথায় রক্ত উঠে যায়।গ্রাম হলে সে কড়া করে উত্তর দিয়ে দিত শুয়োরের বাচ্চাটাকে। হাতেরমাথায় পেলে লাগিয়ে দিতো দু এক ঘা। এমনিতেই মন ভাল নাই তার উপর নতুন জায়গা,ভাবগতিক কিছুই এখনো জানেনা তাই হাঙ্গামা করতে ইচ্ছা করল না সহেলির। ওদিকেমেয়েটা আগে আগে চলে গেছে বলে দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। এই ষ্টেশন থেকে নাকি অহরহমেয়ে পাচার হয়। পুলিশি পাহারা কম থাকে আর যারা থাকে তারাও দেখে না দেখার ভানকরে বলে এখানে পাচাকারীদের পোয়াবারো। সহেলি তাড়াতাড়ি পা চালায়। পাচারকারীদেরনজর দশ বারো বছরের মেয়েদের উপর বেশি। ভাবতেই চোরা স্রোত বয়ে যায় বুকেরভেতর। এক লহমায় সব সংকোচ ঝেড়ে ফেলে ভিড় ঠেলেঠুলে এগিয়ে যায় সামনে।ভিড় থেকে বেরিয়ে চোখ টেরিয়ে মেয়েকে বকা দেয় সহেলি। ভয় দেখায় হারিয়েযাওয়ার। পাচারকারীদের হাতে পড়লে রক্ষা নাই। মেয়ে ধরাদের কথা বলে মেয়েকে এবারসাথে সাথে রাখে। মেয়ে হাসে। সে নাকি মুখস্থ করে রেখেছে সবকিছু। রাস্তাঘাটসাইনবোর্ড দেখে সে মাকে বলে ভয় নাই। আমি চিনি। এবার বৈশাখে ঢাকা এসেছিল ওরাসবাই। ঠিক পয়লা বৈশাখের ভোরে এই স্টেশনে এসে নেমেছিল। একা একা আসতে ভয়পাচ্ছিল শুনে হারুণ মোবাইলে সহেলিকে বলেছিল, তুই সোজা চইলে আইবি । আইয়াতেজগাঁ ইশটিশনে নামবি। আমি থাকবাম ভয় কি। আর শুন টেরেনে কেরো সাথে কথা কইছনা। ভালা মাইনষের বড় অভাব।”চৈত্রের শেষ রাতে ট্রেনে উঠে পড়েছিল সহেলিরা। শাবনূর খুশীতে থই থই।পাশের বাসার লায়লাখালার ঘরে টিভি দেখে দেখে শাবনূরের মাথায় ঢাকা শহর ঢুকে গেছে।সে কিছুতেই আর গাঁও গেরামে থাকতে চায়না। হারুন বাড়ি এলেই বায়না করে , বাপ তুইকবে ঢাকায় নিবি ? আমরার ঢাকা যাইয়াম।” সহেলি মেয়ের তড়বর মুখকে ঠোনা দিয়েবন্ধ করে, আমরার ঢাহা গেলে তোর দাদা দাদিকে দেখফার ক্যালা ? বাতাস খায়াএতহানি বড় হইছস নাহি!” শাবনূর তাও থামে না। হারুন বলে “এই তো যাইয়াম যাইয়াম।আয় বাড়াবার ভাও করতাছি । তোরের ব্যাকটিতে ঢাহায় লইবাম।”বড় ব্রিজ পার হয়ে এবার ওরা তেজগাঁ কলেজের সামনে দিয়ে গলি খুঁজেরাজাবাজার বস্তিতে রওনা হয়। রিকশাওয়ালা , ফেরিওয়ালা বেশির ভাগ মানুষইময়মনসিং থেকে আসা। তারাই সাহায্য করে বাসা চেনাতে। রোদ্দুর মাথায় বস্তিতে পৌঁছেদেখে সাজেদাবু তখন বাসায় নাই। কাজের বাড়ি ধানমন্ডি। বুবুর জামাই রিকশা নিয়েবেরুচ্ছে এমন সময় ওদের দেখে ফিরে আসে। সামনের দোকান থেকে ঠান্ডাই আরপাউরুটি চিপস কিনে এনে বলে, বহ বউ। জিরোও । আমি বাইরাই। বান্দা খ্যাপ আছে ।যাওন লাগব।” সহেলি দেখে সামান্য ফাঁকা জায়গা রেখে রেখে বস্তির ঘরগুলো বানানো।প্রচুর ভাড়া গুনতে হয় বলে একেক ঘরে আট দশজন গাদাগাদি করে থাকে আলো হাওয়াখোলা আকাশের গ্রামের মানুষরা । থাকা তো নয় কোনো রকমে রাত পার করে বেঁচেথাকা। মোবাইলে ধরমগুরুর মত উদাস গলায় সাজুবু বলেছিল, অই রাতটুকুই যা কষ্টেরবোন। নইলে কাজের মাতালে সময় কই কেউ কাউরে দেখার!”ওদের দেখে সাজেদাবুর ঘরের সামনে ছোটখাটো ভিড় জমে যায় । একজনদুজন করে সহেলিদের ঘিরে সান্ত্বনার কথা বলতে শুরু করে। বুড়ো মত একজন লোককাশতে কাশতে বলে, গরীবের ভাগ্য আল্লায় নিজের হাতে লেখছে। এই দুন্নিয়া চালাইবারলাইগ্যা গরীবের রক্ত মাংস হাড় নিত্যই দরকার গো মা। তাই ত ঝড় নাই বৃষ্টি নাইকিছু নাই পাতরের বাঘডা ঠিক তোমার স্বামীর মাতার উপরে ভাইঙ্গে পড়ল! হে যেগরীব! মরণ যে তার নিয়তি হেয়া পাতরের বাঘতেও বেবাক বুঝছিল গো। বুড়ো মানুষেরকথায় অনেকেই সায় দেয়। অনেকেই আফসোস করে হাচাই ত ঘটনাখান। যেদিন বাঘটাভাইঙ্গে পড়ে সেদিন তো কোন ঝড় বৃষ্টির বালাই আছিল না। আল্লার ইচ্ছা ছাড়া কিকিছু হয়? হারুণের মৃত্যু আল্লায় এইভাবেই লেখে রাখছিল। মানুষগুলো আরো একবারমহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি নুয়ে পড়ে।একটু পরেই চীৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে সাজেদাবু এসে পড়ে। সহেলিওকাঁদে । কিন্তু দম পায়না জোরে শোরে কাঁদার । সহেলি বোঝে এক সময় কান্নাও ফুরিয়েযায়। বুড়ি শাশুড়ি আসার সময় বলে দিয়েছে,“ ও বউ আমরার কান্দন দেহার লোক কই?কান্দনে তো খাওন জুই্টপে না। ছেড়াছেড়ি বাঁচানোর লাইগপে যে বউ । এহন ওগোরেরতুমিই বাপ, তুমিই মাও। দুব্বল হলে কাক পক্ষীতেও ছিঁইড়া খাবে। যাও ঢাহায় চইলাযাও। আমরার বুড়োবুড়ি টুকায় বাছায়ে কোনো হরমে বাঁচুম নে মা।”কাজ ঠিক করেই রেখেছে সাজেদাবু। সকাল থেকে পাঁচ বাড়ি। ঘর মোছা,থালাবাসন কাপড় ধোয়া, তরকারি কাটাকুটি সব সংসারের কাজ । কাল থেকে বস্তির একঘরে চার জনের সাথে শেয়ার করে থাকবে সহেলি। সব কিছু এই চারদিনের মধ্যে ঠিককরে ফেলছে সাজুবু । গরীবের পেট হা পেট। সঞ্চয় যে কিছুই থাকে না। দুদিন খাবার নাপেলেই খাই খাই শুরু করে। আর গরীব রে গরীব ছাড়া বুঝবে কে ! দেকপে কে ! হারুণেরখালাতো বোন সাজেদা। সেই হারুণকে ঢাকায় ডেকে এনেছিল। তাই কেমন এক দায়িত্ববোধ করে । সহেলি ছাড়া সংসার ছেলেমেয়ে কে দেখবে ? কামাইসুদ পুরুষ বলতে তো একাহারুণই ছিল।রাতে সাজেদাবুর কাছে সহেলি তার গোপন ইচ্ছাটি জানায়, বুবু আমগোরেকি সেই বাঘডা দেখাইবা একবার ? সাজেদাবু জানায়, হায় হায় বুনগো বাঘডা যে অইদিনসকালেই সরায়ালাইছে রে বুন। কইত্থে দেখাইয়াম তরে ? ঘুমন্ত ছেলে হাবিবের পিঠেহাত রাখে সহেলি, বাঘের লগে নাকি বাঘের একডা বাচ্চাও আছিল ? হ আছিল তো।ফনেরার গো দেহাইবার লাইগা সুন্দজ্জ কইরছিল সরকারে। সেই পাতরের বাঘখাইয়ালছে তর সোয়ামীরে। একবার যাইতে মন চায় গো বু। দেখবারের চাই সেইকারবালার প্যান্তর। লমুনে তোরে। কাল হারুনের মালিকের লগে তুই কথা কইয়া কিছুটাহা চাইয়া লছ। হেই সময় দেহাইমুনেরে তোগেরে। অর সামনে একডা ফুয়ারা আছে।ঝরঝর কইরা পানি আহে মাটির নীচা থাইকা ।মনে কয় আবে জমজমের পানি ঝইরতাছে।সাদা ফকফকা পানি। বড়ই সুন্দজ্জ লাগে দেইখতে। এহন ঘুমা বুন। আজানের লগেউইঠতে হইবোআনে। তোরে কাজ বুঝাইয়া আমি কাজে যামু গা।সাজেদাবু ঘুমিয়ে পড়ে। একটুকরো ঘরে স্বামী স্ত্রী ছেলেমেয়ে অন্যমানুষদের নিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস নাই সহেলির। তার বড় লজ্জা লাগে। হারুনের কাছেশুনেছে এইরকম করেই বস্তির ঘরে থাকে গ্রাম থেকে আসা অভাবি খেটে খাওয়ামানুষগুলো। দড়িতে চাদর না হয় শাড়ি টাঙ্গিয়ে যে সামান্য ব্যবধান করা হয় তাতেচোখের আড়াল হলেও স্বামী স্ত্রীর জৈবিক ক্রিয়াকর্মের ঘনঘটা সবই বোঝা যায়।প্রতিটি নিঃশ্বাস, শরীরি বিক্ষোভ, কাতরতা, সন্তুষ্টি, যৌন প্রলাপ শুনে ফেলে সবাই।এই জন্যে হারুন কারো ঘরে থাকত না। সব সময় বলত, আগে নিজে কামাই হইরা ঘরলইয়াম পরে তোগোরে আনবাম । ঢাহায় আমরার কুত্তার লাহান জেবন রে বউ। সব কিছুফকফকা। লাজ লজ্জা কিছছু নাই। হারুন তাই ঘুমাত যে দোকানে ঠেলা টানত সেইদোকানের সামনের রাস্তায়। কেন যে সেদিন সোনারগাঁ হোটেলের সামনের বাঘের পায়েরকাছে শুতে গেছিল!সেদিন কি জ্যোৎস্না ছিল? জ্যোৎস্নাধারায় ভেসে গেছিল এই বদ্ধশহরের আকাশ ? হারুন খুব দুধজ্যোৎস্না ভালবাসত। আকাশ ছেয়ে জ্যোৎস্নানামলেই বলত, বউ ল গাঙ পার যাই। নতুন গান বানছি । হুনবি চল। সেদিন সহেলিকে নাপেয়ে সে কি পাথরের বাঘিনীকে শোনাতে চেয়েছিল তার রচিত গান ? অই গানেই কিপাথরের বাঘিনী জেগে ওঠেছিল আজন্মের ক্ষুধা নিয়ে? মরার আগে কি গান বানছিলতার আলাভোলা গাতক খসম ? সহেলির চোখে পাতলা জল উছলে উঠে,আর কোনোদিনজানা যাবে না কি কথায় কি সুর বেঁধেছিল হারুন ! সহেলির বুক ভরে ভালবাসা জেগে ওঠে ।হারুন খুব ভাল গান বানত, সুর করত, গান গাইত। মাথার ভেতর হারুনের গান নিয়ে এপোড়া শহরের প্রথম একলা রাতে অন্য রকম ভাবনাও আসে সহেলির মনে।সেদিন কি দোকানের সামনের জায়গাটা দখল করে নিয়েছিল রাতকামাইয়ের কোন নারী? হারুন কত যে গল্প করেছে এইসব নারীদের। বসুন্ধরা নামেবড়লোকদের মার্কেটের সামনের ড্রাইভাররা এই রাত কামাই নারীদের গল্প করে রঙ্গতামাশা মিশিয়ে। এরা শরীর বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের খাওয়ায়। বাড়িতে টাকা পাঠায়।পুরুষরা বিক্রি করে শরীরেরর শক্তি আর মহিলারা ইজ্জত বিক্রি করে বেঁচে থাকে।অন্যদের বাঁচায় । খুব মায়া ছিল এদের জন্যে হারুনের মনে। গানে গানে এই জবালামায়েদের কাহিনী সে শোনাত গ্রামের উৎসব অনুষ্ঠানে । সহেলিকে বলত, বউ এদেরগোকহনো হেলাঘেন্না করিস না। শইল হচ্ছে মন্দির মসজিদের মত পবিত্ত। কত অকামকুকামের মানুষ সেহানে যায় তাতে কি কোন ক্ষতি হয় মন্দির মসজিদের ? একটুকরোদীর্ঘশ্বাস ফেলে সহেলি ঘুমাতে চেষ্টা করে।পরিষ্কার রুচির মানুষ ছিল হারুন। কত স্বপ্ন ছিল মানুষটার । ইচ্ছা ছিলমেয়েকে পড়ালেখা শেখানোর। শাবনূর চার কেলাসে পড়ে । ইশকুলের স্যার আপারা বলে,বড় খাঁটি মাথার মেয়ে ।তোমরার কষ্ট হইলেও মেয়েকে পড়াও হারুন মিয়া। এই সরকারেমাইয়াদের জন্যে অনেক সুবিদা দিছে। মাইয়ারা এহন ছাওয়ালদের চাইতে ভাল আয়রোজগার করে সংসার দেখে। আর ফ্যালনা নয় গো মাইয়ারা। একটি বাচ্চাই রাখতেচেয়েছিল হারুন, ছেড়া দিয়া কি করাম! আমারার ছেড়ি সব করব। ক্যারে বংগবন্ধুর নামরাইখছে না শেখের বেটি হাসিনা। আমরার নবীজির তো ছেড়া আছিল না । তাতে কি হইছে।বুড়ি মাকে সে বুঝাতো, ছেড়ি হইছে ঘরের লক্ষ্মী। নাতি নাতি কইরা গলা শুকাস না তমা। তবু ছেলেটা হয়ে গেল। ছেলেকেও পড়াবে বলে গভীর রাতে তরিতরকারির ট্রাক থেকেমাল খালাসের কাজ নিয়েছিল হারুন। ঘুমাতে সে সময়ই পেত খুব কম। হেসে হেসে বলতঘুমানো মানেই হল মরে যাওয়া। আমি মরতে চাই না। তবে কি পাথরের বাঘ মৃত্যু হয়েহারুনকে ডেকে নিয়েছিল অই রাতে ?কাজ শেষে সন্ধ্যায় সোনারগাঁ হোটেলের সামনে আসে সহেলি । দোকানেরএক কর্মচারী ওদেরকে নিয়ে আসে বাঘমূর্তির জায়গায়। হন্তারক বাঘিনীটি নেই।জায়গাটা ঝকঝকে পরিষ্কার। মন খারাপ করে শাবনূর। ছেলে হাবিব আঙ্গুল চুষতেচুষতে চিকেন ফ্রাইয়ের বিজ্ঞাপন দেখে লোভে লালা ফেলে খ্যানখ্যান করে কাঁদে।সহেলি মাথা উঁচু করে দেখে সাঁই সাঁই ছোট বড় গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। কেবল ছুটে যাচ্ছে । এতছুটে ছুটে কই যায় সবাই? এই শহরে কি কোন গাঙ আছে ? তার পাড়ে নাবি ঘাসের বনেকি জ্যোৎস্নার ঢল নামে ? এরাও কি হারুনের মত গান গায় জ্যোৎস্নার আলো মেখেনাচে ? সেই গানে কি জীবন আছে? মৃত্যুর সুর কি হারুনের গানের সুরের মতই কান্নাঝরায়?চিপসের প্যাকেট হাতে দিয়ে শাবনূর ভাইকে জানায়, এইহানে বাঘ আছিলবুঝছস ভাইডি। রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাংলাদেশের জাতীয় পশু। আমরার বাপকেখাইয়ালছে। তুই এহন ক দেহি ভাই, যে আস্তা মানুষ খাইয়ালে হে কিবা করে জাতীয় পশুহইবারের পারে !