করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





কবি রফিক আজাদ : যোদ্ধা, প্রেমিক, দ্রোহী
লুৎফুল হোসেন
কোথায় আলো জ্বেলে অপেক্ষায় বসে আছে আমার বিদায় উৎসব তোরণ!
কে জানে কোন ক্ষণে আমি পৌঁছে যাবো সেইখানে।
আমার প্রস্থান লগ্নটিকে ছুঁয়ে দিতেই বুঝিবা নিভে যাবে তার সমস্ত আলোকসজ্জা।
টিকিটের গায়ে অদৃশ্য গন্তব্য স্টেশনের নামটি ঠিক ঠিক বুঝি তখনই দৃশ্যমান হয়ে উঠবে -
আমার যাত্রাশেষের ইংগিত আলোকবর্তিকার মতোন। অদৃশ্য ট্রাফিক
হাতের ইশারা বলবে যখন, থামো। এটাই শেষ স্টেশন। নামো।
ভালোবেসে যা কিছু প্লাবন এনেছো মাটির গায়ে পাললিক আহলাদে,
পাতা ফুল লতা ও বৃক্ষের দেহে তার স্মৃতি হয়তো থাকবে কয়েক রাত্রি।
তারপর নতুন কোনো বসন্তের আগে নিয়মের ছক ধরে ওসব নিশ্চিত যাবে ঝরে।
জানা নেই কি আছে তার পরে -

সেই অজানাকে বারে বারে অনায়াসে এনেছেন কথার ভাঁজে ভাঁজে পঙ্ক্তির অবয়বে মৃত্যু যেন তার সখ্য ইয়ার দোস্ত এরকম নৈপুণ্যে তার কথা বলেছেন বারবার। জীবনকে তিনি আকণ্ঠ পান করেছেন প্রতিদিন, অথচ থেকেছেন অবিন্যস্ত উদাসীন – সন্ন্যাসীর মতোন। প্রাণের কবি, প্রেমের কবি, জীবনমুখী উচ্চারণের কবি, শুরু থেকেই ছিলেন আধুনিক ঘরানার সহজ উন্মোচনের সোজা-সাপ্টা প্রকাশের প্রতীক। গতানুগতিক ঢং বা ধারার বিপরীতে জীবনের যান্ত্রিক ও দগ্ধ-বঞ্চিত দ্রোহ ও প্রতিবাদের কথা অমন সহজ দৈনন্দিন আবেগ ও রাগের মোড়কে, মোড়কে বলতে মুড়ে নয়, আদপে অনাবৃত উন্মুক্ত নগ্ন ও উন্মোচিত অবয়বে আর ক’জন আনতে পেরেছে! সেসব খবর সাহিত্যের প্রতœতত্ত্ববিদেরা কিছুটা হয়তো জানলে জানতে পারে।

আড্ডার প্রিয়প্রাণ ছিলেন যেমন, তার অভিনব ভাবনা আর কথার দমকে। তেমনি জীবনের সমান বাস্তবতার জলটলমল কথা - জুড়ে ছিলো তার কবিতার শরীর জুড়ে, ছিলো ঘর ও বারান্দা জুড়েও। যে কোনো বিষয়, প্রসঙ্গ, ভাবনা, কল্পনা, খেদ, অভিযোগ, প্রেম, আহাজারি, ভালবাসা, বিরহ, আক্ষেপ, ক্রোধ কি দ্রোহ অনাবিল উঠে আসতো তার কবিতায়, ঠিক জীবনের সমান বাস্তবতার মসৃণ বা তোবড়ানো, একেবারে আসল চেহারা নিয়ে।

‘বসন্তে তো সকলেই আসা যাওয়া করে
বসন্তে এসো না’
- বসন্তে এসো না।

‘বালক জানে না তো সময় প্রতিকূল,
ফুলের নামে কতো কাঁটারা জেগে থাকে’
- বালক ভুল ক’রে নেমেছে ভুল জলে।

ভাবনার বৈচিত্র আর তা প্রকাশের অনন্য স্বতন্ত্র দৃষ্টান্ত এমন অগুন্তি কবিতায় তার। এক ‘পরিকীর্ণ পানশালা আমার স্বদেশ’ বইটি যদি ধরি, প্রতিটি কবিতা থেকেই উদ্ধৃতি উঠে আসে বিবিধ কারণে।
অথবা যদি ধরি প্রেমের কবিতা কাব্যগ্রন্থের - ‘তুমি : বিশ বছর আগে ও পরে’ কবিতাটির কথা। অথবা একেবারে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপিত ঠিক তার পাশের পৃষ্ঠার ছোট্ট কবিতাটির কথা। ‘প্রেম’ যার শিরোনাম। কবিতার ক্ষুদ্র কয়েক পঙ্ক্তিতে যেন কোনো নতুন সংজ্ঞা তিনি দিয়ে গেছেন। ‘ভুল চাবি হাতে ঠায়/ দাঁড়িয়ে রয়েছে এক অন্ধ/ নারী/ পারদের মতো ভারী/ আর বদ্ধ/ বিশাল দরজায়’।

অকপট সারল্যে জীবনের জটিলতম কথাগুলো বলে ফেলেছেন খুব অনায়াসে। জীবনের প্রতি প্রেম ভালবাসা আর তার বিপরীতে উপস্থিত বেরসিক ও রূঢ় বাস্তবতার নিনাদকে ঘিরে অন্তর্গত দ্বান্দ্বিকতা আটপৌঢ়ে কথকতার মতন উচ্চারণ করেছেন কবিতার ছত্রে ছত্রে। যেমন -
‘বেদনা জমাট বেঁধে - এই বুকে - পাথর হয়েছে!
পাথর সরাবি তুই দুঃসাহসী ছোট্ট দুই হাতে!’
- আত্মজার প্রতি।
অথবা
‘তুমি তো খুব কাছেই ছিলে
স্পর্শ করা হয়নি কেন,
ঠোঁট দু’টো তো উষ্ণ ছিলো।
চুম্বনে তা পাইনি কেন !’
- দেয়ালগুলো তো দূরেই ছিলো।

দ্রোহ উচ্চারিত হয়েছে অবলীলায়, অপার স্পর্ধায়।
‘পরবর্তী ভোরটির মতো আমিও অপ্রতিরোধ্য।’
- আমিও অপ্রতিরোধ্য।
কিংবা একই কাব্যগ্রন্থে কয়েকটি কবিতা পরেই ছোট আর এক কবিতা ‘বৈপরীত্য’-এ পাওয়া যায় এক ভিন্ন আমেজ।
স্পষ্টভাষী সমালোচকের মতো আত্মকেন্দ্রিকতার চোখে আঙুল দিয়েছেন যেন ‘মানুষ, তোমার জন্যে বড়ো দু:খ হয়’ কবিতায়।
আর প্রেম! প্রেম তো উপচে উপচে পড়েছে রফিক আজাদের অগুন্তি লেখায়, রাশি রাশি কবিতায়।

পূর্বোল্লেখিত কবিতা ‘প্রেম’ যেমন এক রকম, আবার ‘স্পর্শের পুরাণ’ কবিতায় অনন্য শৈল্পিক শরীর বৃত্তীয় উচ্চারণে রেখেছেন ভিন্ন এক স্বাদ।
‘স্পর্শের নিপুণ দৌত্যে
আঙুলের ডগা, ঠোঁট
সেখানে জাগিয়ে তোলে
স্তনের নিদ্রিত বোঁটা Ñ রোমকূপে-রোমকূপে তোলে
অসামান্য আনন্দঘণতা;
স্পর্শের জাদুতে [চুম্বনে-চুম্বনে, দীপ্র আলিঙ্গনে]
নৈকট্যে-আনন্দে-হর্ষে
বৈদ্যুতিক শিহরনে
কেঁপে-কেঁপে জেগে ওঠে অহল্যা শরীর;’

প্রেমকে ঘিরে একদিকে যেমন আকুতি দেখা যায় তার ‘কাঙাল’ কবিতায়। আবার অন্য চেহারা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ‘বৃক্ষের যেমন আস্থা’ কবিতায় -
‘আমার ওষ্ঠের স্পর্শে তোমার শরীর
চন্দনের গন্ধে ভ’রে যাবে,
কিন্তু যদি ঐ ওষ্ঠে অন্য কারু ঠোঁটে চুমু খাও
দুর্গন্ধে আসবে উঠে অন্নপ্রাশনের সব ভাত।’

অথবা অন্য রকম এক অনুভূতি যেমন তুলে ধরে তার ‘মালপানি জিন্দাবাদ’ কবিতা। তেমনি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় তাঁর ‘যদি ভালোবাসা পাই’ অথবা “মাধবী এসেই বলে : ‘যাই’” কবিতা দুটি।
কিংবা ধরা যাক ‘প্রতীক্ষা’ কবিতাটির কথা। কি ভীষণ অন্য রকম সেই কবিতার লাইনগুলো।
‘আমি বন্ধু, পরিচিত জন, এমনকি শত্রুর জন্যেও
অপেক্ষায় থেকেছি,
বন্ধুর মধুর হাসি আর শত্রুর ছুরির জন্যে
অপেক্ষায় থেকেছি -’
বলতে হলে আসলে এর পরের স্তবকটি পুরোই বলতে হয়, যেখানে অনায়াসে কবিতার ভেতর তিনি যেনো ঢুকিয়ে দিয়েছেন যুক্তিবিদ্যার ক্লাস কিংবা একখানা আস্ত অভিধান। বলেছেন কি করে কেন নয় অপেক্ষা আর প্রতীক্ষা শব্দ দুটো একই সমান।
অথবা ‘তোমাকে কাছে পেয়ে’ কবিতায় যেভাবে তুলে ধরেছেন প্রেমের প্রবল শক্তিমত্তাকে এক অনিন্দ্য ইতিবাচকতায়। যখন আরো পঙ্ক্তির ভীড়ে লিখেছেন -
‘ধুলোকাদা থেকে আমি ভালোবেসে কোলে তুলে নিই
শত্র“র সন্তান;
অপরাহ্নে পেয়ে যাই ভোরের আস্বাদ,
কসাইয়ের গালে সশব্দ চুম্বন এঁকে
দিতে ইচ্ছে করে;
. . . . . . . . .
কুষ্ঠরোগীর দিকে উড়ন্ত চুম্বন ছুঁ’ড়ে দ্যায়
দুরন্ত যুবক,
জল্লাদেরও হাত খোঁজে শিশুর চিবুক,’
প্রেম বিপুল ঘনঘটায় জাগরুক তাঁর ‘একটি দুপুর’ কবিতায় এবং ‘এমন কাউকে খুঁজি’, ‘ভালোবাসার সংজ্ঞা’ কিংবা এমন অগুন্তি কবিতায়।

প্রেম ও দ্রোহের কবি পরিচয়ের পাশাপাশি তাঁকে বলা যায় পানশৈলীর কবি। পানে কতোটা দ্যোতনা জীবনের আকাশে রঙধনুর মতো ক্যানভাস জুড়ে রং-তুলিময়তা টেনে আনে তা অন্য যে কোনো কবির ধ্যনস্থ নির্মাণের বিপরীতে ঈর্ষা করবার মতো। পানশালা, জীবন, প্রেম, দ্রোহকে কি অনবদ্য এঁকেছেন একই ক্যানভাসে তা এক ‘পরিকীর্ণ পানশালা আমার স্বদেশ’ কবিতাটিতেই অপার বাঙময়। অজস্র কবিতার উদ্ধৃতির ভীড় খুব বেশী দরকারী নয়।

প্রথম লাইনেই পাঠককে টেনে নিয়ে যায় তাঁর অলৌকিক নির্মাণের মোহমুগ্ধকর সেই জগতে।
‘চাঁদরাতে উপচে-পড়া পানশালা গুঞ্জনে মুখর!’
ঠিক তেমনি এক ঝটকায় পাঠককে নাড়িয়ে দিয়ে যায় যখন লেখা হয় -
‘আমার দুঃখটি খুব ব্যক্তিগত এবং পবিত্র,
আমার চিন্তাটি হলো নবজাতকের ভবিষ্যৎ
এবং অপার সব সন্তানের কল্যাণ প্রসঙ্গ,
আমি ব্যর্থ পিতা এক Ñ এমন গরীব দেশে জন্মে,
হতভাগা ভবিষ্যৎহীন দেশে জন্মে, ক্রমাগত জন্ম দিয়ে
গেছি শুধু মনোহীনভাবে পাঁচ/পাঁচটি সন্তান!’

জীবনমুখী কতোটা ছিলেন রফিক আজাদ সেটা দ্রোহ আর প্রেমের পাশাপাশি দৃশ্যমান তার অজস্্র কবিতায়। যেখানে এটাও স্পষ্টত দৃশ্যমান যে, ভাবনায় ও শব্দশৈলীতে কতোটা অনন্য ও আপন ঘরানার নির্মাতা তিনি। ধরা যাক তার কবিতা ‘নগর ধ্বংসের আগে’, ‘কুয়াশার চাষ’, ‘মনোভূমি বনভূমি’, ‘সমুদ্রায়ন’, ‘অন্তরংগে সবুজ সংসার’, ‘ওপরতলার কেচ্ছা’, ‘মানুষেরা বড় ভয়াবহ প্রাণী’ ‘সুন্দরের দিকে চোখ রেখে’ অথবা তার বিখ্যাত ‘ভাত দে হারামজাদা’ বা ‘চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া’ কবিতায়।

প্রতিবাদী উচ্চারণে যেমন লিখেছেন ‘ভাত দে হারামজাদা’, ‘সশস্ত্র সুন্দর’, ‘জেলখানা’, ‘শ্বেত সন্ত্রাস’, ‘যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ’, ‘আমার বব্ধু বাবাটুন্ডে’ তেমনি লিখেছেন তীব্র জীবনমুখী মানবতার উচ্চারণ - প্রখর কবিতা ‘নত হও, কুর্ণিশ করো’ যার পরতে পরতে সাজিয়ে দিয়েছেন ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ আর শ্লাঘা।
‘হে কলম, উদ্ধত হ’য়ো না, নত হও, নত হ’তে শেখো
তোমার উদ্ধত আচরণে, চেয়ে দ্যাখো, কী যে দুঃখ
পেয়েছেন ভদ্রমহোদয়গণ,
অতএব নত হও, বিনীত ভঙ্গিতে করজোড়ে
ক্ষমা চাও, পায়ে পড়ো, বলো : কদ্যপি এমনটি হবে না, স্যার,
এবারকার মতো ক্ষমা ক’রে দিন -
. . . . . . . . .
এই চমৎকার সমাজ ও সময়ের যোগ্য হ’য়ে ওঠো,
ভোঁতা হতে শেখো,
হে অপ্রিয় উচ্চারণ, বোবা হয়ে যাও কালা হ’য়ে যাও,
প্রতিবাদ করো না;
মেনে নাও সবকিছু, মনে নিতে শেখো,
মেরুদন্ড বাঁকা ক’রে ফ্যালো,
সোজা হয়ে দাঁড়াানোর আর চেষ্টা পর্যন্ত কোরো না,
হে কলম, হে প্রিয় বলপেন, নত হও,
নম্র হতে শেখো আর স্বভাব পাল্টাও ’

‘উজ্জ্বল ছুরির নিচে’ কিংবা ‘পরাবাস্তবের বাড়ী’ কবিতায় পাঠক পেয়ে যায় অন্য রকম এক স্বাদ। যেনোবা নীৎসে বা কাফকার আত্মা খেলা করে যায় কখনো তার কোনো কোনো কবিতায়। সেখান থেকে তাঁর ‘কবি’ কবিতায় বুঝি মুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদের এক ছায়া রেখে যান ‘কোমরে পিস্তল-গোঁজা নিঃসংগ ক্যাপ্টেন’ কবিতায়।

পানের পৌরাণিক কাহিনী স্্রষ্টা রফিক আজাদ জীবনের কথা বলে গেছেন যেমন ছত্রে ছত্রে তেমনি অনায়াসে উচ্চারণ করেছেন মৃত্যুর কথা। কিন্তু যতোটা শঙ্কিত উদ্যোক্তা শ্রোতাকে মুগ্ধ নিশ্চুপ করে দিয়ে কোন এক অনুষ্ঠানে টলটলায়মান পদস্তম্ভে তিনি যখন মোহমগ্নতার গলায় উচ্চারণ করেন তাঁর অলৌকিক ছত্র -
‘চলে যাবো সুতোর ওপারে,
সুতোর ওপারে সুখ, সম্ভবত স্বাধীনতা আছে’
পিনপতন নীরবতা গ্রাস করে নেয় দর্শক এক মোহমুগ্ধ একাগ্রতায়।

সেভাবেই একদিন যে সত্যি সত্যি চলে যাবেন আড্ডার টেবিলকে বা মঞ্চকে নিষ্প্রাণ কাঠের সমাধি বানিয়ে তা কি কেউ ভেবেছিলো! কে কবে জেনেছিলো বালক চলে যাবে নক্ষত্রলোকের সঙ্গ-সখ্যতায়। আর আমরা করুণ চোখে তাকিয়ে দেখবো ‘জোনাকীর নীল আলো Ñ জ্বলছে পুকুর’ বুঝি চাঁদের সাথে গ্লাস ঠুকছো তুমি বিকেল দুপুর সন্ধ্যা কিবা রাত-দুপুর।

যে হাতে তোমার বোনা ছিলো ট্রিগারের নিপূণ আঙুল, সেইখানে কলম খুঁড়ে লিখেছো কাগজ জুড়ে মন্ত্রস্থ পাঠকের অযুত শ্লোক। তুমি কেউ নও, মানুষের স্বপ্নের অরণ্যলোক।
বসন্তে তাঁর আগমন ধরায় - বসন্তেই তাই বুঝি তার প্রস্থান মানা যায় !

চুনিয়াকে ভালবেসে এতোটাকাল
আর্কেডিয়ায় মেলেছো এক নতুন সকাল !
পরিকীর্ণ পানশালায় কী রেখে গেছো
শোকার্ত অযুত পাঠক ও কিয়দ ম্লেচ্ছ !
মাধবী গিয়েছে বলেই বুঝিবা বালক
প্রস্থানের মুকুটে হঠাৎ আজ গেঁথেছো পালক !

এপারে ছিলে অপূর্ব সন্ন্যাস সংসারে
কথামতো গেলে বুঝি সুতোর ওপারে !
ওপারে সুখ, স্বাধীনতা জানি অধিক টেনেছে।
মেঘেদের খামে পাঠিও খবর তোমার আমাদের কাছে।

২০ মার্চ ২০১৬