করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





‘হাস্যকর’ ভ্রমণ!
খায়রুল বাবুই
বছরের অন্যান্য সময়ে নানা ‘ধান্ধা’য় বান্দারা শহরে অবস্থান করলেও ঈদের সময়টায় ‘ফিরে চল মাটির টানে’ স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাসে-ট্রেনে-লঞ্চে-বিমানে ভিড় বাড়ায়। অনেকেই ‘নারী’ এবং ‘নাড়ি’র টানে যায় গ্রামে, কেউ আবার ভ্রমণে। তাই ভাবলাম, ভ্রমণ বিষয়েই বাতচিত করা যাক।
অবশ্য ভ্রমণ নিয়ে কিছু লিখতে গেলে প্রথমেই যে প্রশ্নটি নিজেকে করি, সেটি হলো, সম্প্রতি আমি কোথায় ভ্রমণে গিয়েছি? উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখি, শূন্যস্থানটা কোনোভাবেই পূর্ণ করতে পারছি না! তাই পাঠকদের জন্য ভ্রমণ-বিষয়ক লোকাল এবং গ্লোবাল কিছু গল্পই বলতে চাই।
গ্রীষ্মের ছুটি। স্ত্রী আর এক সন্তানকে নিয়ে ভ্রমণে বেরিয়েছেন পলাশ। নিজেই চালাচ্ছেন গাড়ি। খুব সাবধানে। এভাবেই ধীরে ধীরে কয়েকটি সিগন্যাল পার হয়ে আসার পর এক ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামাল।
গাড়ির ভেতরটা উঁকি দিয়ে সন্দেহের চোখে বলল, ‘আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটা দেখি।’
‘কিন্তু স্যার, আমি তো খুব সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাচ্ছি। বেআইনি কিছু করিনি।’
পুলিশ অফিসার ঠোঁট বাঁকা করে বলল, ‘সেই-জন্যই তো বেশি সন্দেহ হচ্ছে!’
বোঝা গেল, ভ্রমণের সময় সর্তক থাকা জরুরি কিন্তু অতি-সতর্কতা ঝামেলা বয়ে আনতে পারে। অবশ্য এই গল্পটি শুনলে মনে হবে অতি-সর্তকতারও প্রয়োজন আছে বৈকি!
কমলাপুর স্টেশন। জীবনে প্রথমবারের মতো ট্রেনে ভ্রমণ করছেন সিদ্দিক সাহেব। যাবেন ময়মনসিংহ। যথারীতি কাউন্টারে গিয়ে ময়মনসিংহ এক্সপ্রেসের টিকিট কাটলেন। প্রথম শ্রেণির কামরা। কিন্তু ভুলক্রমে তিনি উঠে পড়লেন চট্টগ্রাম-অভিমুখী সুবর্ণ এক্সপ্রেসে।
ট্রেনে উঠে সিট-নম্বর মিলিয়ে বসে পড়লেন সিদ্দিক সাহেব। কিছুক্ষণ পরই চলতে শুরু করল ট্রেন। তার মুখোমুখি বসে পত্রিকা পড়ছিলেন এক ভদ্রলোক। সারাটা পথ একা একা যাবেন ভেবে লোকটির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলেন, ‘তা ভাই, কোথায় যাবেন?’
পত্রিকার পাতা থেকে চোখ তুলে লোকটি বললেন, ‘চট্টগ্রাম।’
উত্তর শুনে সিদ্দিক সাহেব বেশ অবাক। বললেন, ‘ভাই, আধুনিক প্রযুক্তির কী অবদান দেখুন। সত্যিই বিজ্ঞানের আবিস্কার তুলনাহীন। একই ট্রেনে মুখোমুখি সিটে বসে আমি যাচ্ছি ময়মনসিংহ আর আপনি যাচ্ছেন চট্টগ্রাম!’
নিছক কৌতুক বলেই মনে হয় এরকম ঘটনা ঘটেছে। সত্যিকারের ভ্রমণ-পিপাসুরা সিদ্দিক সাহেবের মতো এতটা বোকা নয় বলেই আমার বিশ্বাস। তারা নিদেনপক্ষে নিচের এই গল্পের পরোপকারী লোকটির মতো বুদ্ধিমান হবেন।
ট্রেন চলছে। এক যাত্রী পাশেরজনকে জিজ্ঞেস করছে, ‘ভাই, এই ট্রেনটা কি সিলেট যাবে?’
‘জি যাবে।’
‘আমি তো ভাই কখনো সিলেট যাইনি, সিলেট স্টেশন এলে আমাকে একটু মনে করিয়ে দেবেন, প্লিজ!
‘এটা কোনো ব্যাপারই না। শুনুন, আপনি জাস্ট আমাকে ফলো করবেন। আমি যে স্টেশনে নামব আপনি ঠিক তার আগের স্টেশনে নেমে যাবেন!’
যাক। এসব তো গেল ভ্রমণের উদ্দেশে বের হওয়ার পরের ঘটনা। এবার ভ্রমণে বের হওয়ার প্রস্তুতিবিষয়ক একটি রসগল্প।
দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়ার জন্য গো ধরেছে মিজান সাহেবের স্ত্রী। কিন্তু কক্সবাজার যাওয়া-আসার খরচ তো নেহাত কম নয়। অল্প টাকা মাইনে পাওয়া মিজান সাহেবের পক্ষে সম্ভব নয় হুট করে কক্সবাজার ভ্রমণে বের হওয়া। একদিন অফিস থেকে ফিরে এসে স্ত্রীকে বললেন, ‘শোনো, একটা সুখবর আছে। আমাদের কক্সবাজার যাওয়ার ভাড়া যোগাড় হয়েছে!’
স্ত্রী তো খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন, ‘তাই নাকি? এতদিন পর আমার আশা পূরণ হ”েচ্ছ? তাহলে আমরা কক্সবাজার কবে যাচ্ছি?’
মিজান সাহেব একটু কাঁচুমাচু কণ্ঠে বললেন, ‘ইয়ে মানে, এই তো, ফিরে আসার ভাড়াটা যোগাড় হলেই!’
পাঠক, কি ভাবছেন, ইস্ টাকার জন্য ভ্রমণের ইচ্ছেটা পূরণ হলো না মিসেস মিজানের? না, ব্যাপারটা আসলে সেরকম নয়।
চার মাস পরের ঘটনা। অফিস থেকে বাসায় ফিরে মিজান সাহেব দেখলেন, স্ত্রী মন খারাপ করে বসে আছেন। কারণটা তো তিনি জানেনই। স্ত্রীর হাতে দুটি টিকেট ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আগামীকালই আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি। এই যে, ট্রেনের দুটি রিটার্ন টিকেট। প্রথমে ট্রেনে করে যাব চট্টগ্রাম, সেখান থেকে বাসে কক্সবাজার। কী, খুশি?’
আকস্মিক আনন্দে হতবাক হয়ে গেলেন মিজান সাহেবের স্ত্রী। ধন্যবাদ-টন্যবাদের পালা শেষ করে ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন।
পরদিন। যথাসময়ে চট্টগ্রাম-অভিমুখী ট্রেনে উঠে বসলেন তারা। ট্রেন চলতে শুরু করার পর মিজান সাহেব স্ত্রীকে বললেন, ‘টিকেট দুটি যত্ন করে রেখেছ তো?’
‘রেখেছি মানে...’ প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মিজান সাহেবের স্ত্রী বললেন, ‘ওগুলো বাসার আলমিরার ড্রয়ারে যত্ন করে রেখে তালা মেরে এসেছি!’
সে-যাত্রা মিজান-দম্পতির কক্সবাজার ভ্রমণ সম্ভব হয়েছিল কি না আমার জানা নেই। তবে এক বন্ধুর মুখে শোনা গল্পটি ঠিকই মনে আছে। আজকের মতো শেষ গল্প।
এক বৃদ্ধ লোক ট্রেনে উঠলেন। সিটে বসার আগে, ইয়া বড় এক ব্যাগ উপরের বাঙ্কে ওঠাতে চেষ্টা করছেন। কিছুতেই পারছেন না। শেষমেশ তরুণ এক সহযাত্রী সাহায্যে এগিয়ে এল। দুজনে ধরাধরি করে অনেক কষ্টে ব্যাগটা বাঙ্কে তুলল। সাহায্যকারী যাত্রীটি জানতে চাইল, ‘দাদু, আপনি সবসময় এত বড় আর ভারী ব্যাগ নিয়ে ভ্রমণ করেন নাকি?’
‘করতাম।’ বৃদ্ধ লোকটি হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ‘আর করব না। এরপর থেকে দুজনের জন্য একটা টিকিট কাটবে আমার বউ আর আমি থাকব ওই ব্যাগের ভেতর!’