কবিতা
জ্যোৎস্নাগ্রহণ ওমর শামস
চাঁদের থেকে জ্যোৎস্না নয়, কচি মোরগফুল আর দোপাটির পাতা ঝরছিলো - বনান্ত, ধানক্ষেত, নদী আর দালানের উপর সারাটা রবিবার রাত্রি।
চাঁদের থেকে জ্যোৎস্না নয়, হরিণ পড়ছিলো শাদা ফুটিফুটি হরিণ শাবকেরা ঝরছিলো - পৃথিবীর কোন উপত্যকায় নতুন ঘাসের উদ্যানে। সারাটা মঙ্গলবার রাত্রি।
চাঁদের থেকে জ্যোৎস্না নয়, মানুষ পড়ছে - সারা ব্রহ্মা-ের ছায়াপথ থেকে জড়ো হওয়া কালো, সবুজ, শাদা, হলুদ মানুষ - পৃথিবীর হতভাগ্য দেশগুলোর খরাবন্যা ক্ষুধার্ত প্রান্তরে, ওরা ঠিক করে দেবে তাই। ওরা বলেছে ঠিক করে দেবে।
আমি পাত্রের মধ্যে বাংলাদেশকে ধরে রাখি।
শিরোনামহীন তুষার দাশ
এক কবিতায় বারুদঠাসা- এক কবিতাই সর্বনাশা!!
এই সময়ের গল্প বলে হাসতে হাসতে ঠাট্টাচ্ছলে,
পংক্তি মোটে তিন আট এতেই উধাও সব ক'টি ঘাট।
শুনুন এবার বলছি খুলে-
"উঠছে পর্দা- দেখুন তিনকূলে আমাদের তো কেউ ছিলো না এমনই অসহায়। তলোয়ারের ডানা যখন গজায় ভানুমতীর খেল-এ জুঁই-বেলিরা সত্যিকথার ঝাঁপি তখন খোলে।
বাজায় তালি নতুন যাদুকর- পর্দা ওঠে, পর্দা দোলে, সর্-
আবছায়া সব- নভেম্বরেই দেখি।" বন্ধুরা সব কোথায় গেলো- একি!
আমিই একা- হাতের ওপর মুগ্ধ কবুতর ! বইছে সময় রক্তপাতের, লাল হবে তো সকল চবুতর।
কাঙাল হরিনাথের ব্যাংক একাউন্ট সোহেল অমিতাভ
রবীন্দ্রনাথের গ্রামীণ কৃষি ব্যাংক লুট হয়েছিল পাবনার শাহজাদপুরে, নওগাঁর পতিসরে ঋণগ্রহিতা দরিদ্র কৃষকের আহম্মকিতে। এর আগে আদর্শগ্রামের সমাজ উন্নয়ন মডেল শিলাইদহে নলডাঙ্গার জমিদারের আক্রমনের শিকার হয়েছিল।
নোবেল লরিয়েট পিরেলি ঠাকুর মনকষ্টে পাড়ি দিলেন সাঁওতাল পরগণায় রাঢ়বঙ্গে রামকিঙ্করের ভাস্কর্যে গড়ে তুললেন শান্তিনিকেতন।
সেই কালে কাঙাল হরিনাথের ব্যাংক একাউন্ট ছিল কিনা সেটা লালন ফকিরও জানতেন না, এ নিয়ে তেমন গবেষণাও হয়নি বিধায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা-গোয়েন্দা বিভাগ সাংঘাতিক কাঙ্গালদের ব্যাংক একাউন্ট তলব করেছে ওমনি হারেরেরে গোপাল ও গোবিন্দ মধু কইতাস সারে !
বান্দরবান মুয়িন পারভেজ
ইচ্ছেও নাই তার, যদিও পাহাড়ের ছোট্ট ছিমছাম হোটেলঘর বর্ষার দিন আর আছে বা কতদিন, ডাকছে নির্জন ছাতিমফুল এক দূরগন্ধের বিবাগি চোরাঢেউ হয়তো ভাঙচুর চালায় খুব ক্যানভাস, প্যাস্টেল ছড়ানো বিছানায়, কিন্তু নাই তার আঁকার মন
চুপচাপ ঘাসপথ, জানে না কারা যায়, হাটবাজার ঠিক কখন হয় কেউ চায় ক্যামলংপাড়ারই চা-দোকান আড্ডা-মশগুল আবার হোক ঝিমঝিম সৌরভ না-পোড়া তামাকের, একটা আমকাঠ ধোঁয়ায় নীল গল্পের ঝরনায় মজে না পাথরের প্রাণ, না ভিক্ষুর? কী বার আজ?
ঢংঢং ঢংঢং বাজে কি কেয়াঙের ঘণ্টা, নির্ঘুম অদৃশ্যের? আজ তার নাই ক্ষোভ, পুরোনো অনুতাপ; হয়তো নির্বাণ বলাও পাপ নাই তার উদ্বেগ, মাতামুহুরী-তীর, থানচি, চিম্বুক দেখার ছল রংচা-র কাপ আর রোদেলা জানালার হালকা কৌতুক, পাখির শিস
এই ছাদ, নির্বাক, যেনবা কোনও বই, কিন্তু নাই তার পড়ার মন কেউ-কেউ চায়, বেশ, ঝিরিতে হোক স্নান; তার তো নাই আজ বিতৃষ্ণাও যে-ই দেয় ডুব, কার কচুরিপানা-চুল ঢাকছে চোখমুখ, ঘাড়ের পাশ কেউ তার নিশ^াস মুঠোতে নিতে চায়-অক্টোপাস নাই, কিছুই নাই
নভেম্বর রেইন পিয়াস মজিদ
শীত মওসুমের বৃষ্টিতে মেঘদূতের কোনো অপশন নেই। নভেম্বর রেইন মিরপুর সাড়ে এগারোর একটা জুসের দোকানের গলি দেখে মনের ভেতর বানায় ঘন বৃষ্টির বন। আপেল-নাশপাতি-মাল্টার মাপে ব্লেন্ড হয়ে যাচ্ছে আমার ফলকাতর শীতার্ত ছেলেবেলা। ছিটা বৃষ্টি অঝোর ধারায় গুনগুনিয়ে যায়- শৈশব তো ফলের আত্মায় জমাট বাঁধা আধো মেঘ, আধো কুয়াশা।
|