করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





একাত্তরের কয়েকটি অবিশ্বাস্য ঘটনা
আফসান চৌধুরী
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাসচর্চার সঙ্গে ১৯৭৮ সালে আমি যুক্ত হই। হাসান হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র ও ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছি ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। এ কাজ করতে গিয়ে মিশ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। দেখলাম, যে-ইতিহাস চর্চা হচ্ছে সেটি শুধুমাত্র লিখিত দলিলের ভিত্তিতে ইতিহাস চর্চা। আবার অনেক অতিরঞ্জিত দলিলও তখন পাওয়া যায়। তাছাড়া যেসব দলিল পাওয়া যায় সেগুলো সমগ্র দেশের দলিলও নয়। প্রাপ্ত দলিলগুলোয় তাদেরই কথা উঠে এসেছে যারা লিখতে পারেন। আর বাকী জনগোষ্ঠী যারা যুদ্ধ করেছিলেন তাদের কথা উঠে আসে নি। একাত্তরের ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে আমরা দেখলাম রাজনৈতিক বক্তব্যই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। দলিলের তৃতীয় খ-ে যেমন রয়েছে মুজিবনগর সরকারের দলিল। এটি গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই।
দলিল নিয়ে কাজ করতে করতে আমার ভেতরে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব এলো এর সত্যতা নিয়ে। কোনটা সত্য, কোনটা সত্য নয়, এটি কিভাবে যাচাই করবো। বাংলা একাডেমির দলিলও আমাদের হাতে এলো। আমরা যে ইতিহাস পাচ্ছি তা দলিলভিত্তিক ইতিহাস। সেনাবাহিনীর দলিলে কোথাও হয়তো পেলাম পাকিস্তানি সেনারা ১০০/২০০ জন মারা পড়লেন। কিন্তু আমাদের যোদ্ধারা কতজন শহীদ হলেন সে তথ্য সঠিকভাবে পাচ্ছি না।
মুক্তিযুদ্ধে নারীদের বিশেষ অবদান ছিলো, তাদের কথাও উঠে আসে নি দলিলে। মুক্তিযুদ্ধের দলিলে শুধুমাত্র সরকারি বয়ানটুকুই পাওয়া যায় সেটাকে বলা যায় প্রাতিষ্ঠানিক বয়ান। গণমানুষের কথা উঠে আসে নি এসব দলিলে। আমরা সবসময় প্রমাণ খুঁজতে যেয়ে চলে গিয়েছি রাজনীতিবিদের কাছে, সেনাবাহিনীর কাছে বা বিদেশীদের কাছে। তখন একাডেমিক শিক্ষকরা লিখিত দলিলের আবশ্যকতার কথা বলেছেন। তারাও বই লিখেছেন। স্বভাবতই সেগুলো স্মৃতিনির্ভর। তাদের বক্তব্য হলো ইতিহাসচর্চা করতে হলে দলিল লাগবে। দলিল মানে লিখিত বিষয়। ফলে লিখিত দলিল সংগ্রহ শুরু হয়েছিলো। এই দলিলগুলোতে সাধারণ মানুষের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা পাচ্ছিলাম না। তাই আমার ভেতরে প্রশ্ন এলো, এই যে দলিলনির্ভর ইতিহাস লিখছি তা কতোটা প্রকৃত ইতিহাস? এখানে নারীর ভূমিকা কোথায়? এসব ছাড়া পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হয় কিভাবে? পশ্চিমাবিশ্ব আমাদের যেভাবে শিখিয়েছে আমরা সেভাবেই কাজ করছি। এসবই উপনিবেশিক ধ্যানধারণা। যেটিতে সমস্যা আছে। আমি বুঝলাম, যে-চোখে আমরা ইতিহাস দেখছি সেখানেই গলদ রয়ে গেছে। তাই আমি আস্তে আস্তে ওই চর্চা থেকে সরে আসতে লাগলাম। আমাদের বুঝতে হবে এটা সরকারের যুদ্ধ নাকি সাধারণ মানুষের যুদ্ধ। নাকি সরকার ও সাধারণ মানুষ মিলিয়েই যুদ্ধ। যদি তাই হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কথাও থাকতে হবে ইতিহাসে, শুধু সরকারি বয়ান নয়। কিংবা বিদেশিদের বক্তব্যও নয়। আসতে হবে এই দেশের সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার কথা।
একটি গোটা জেলার প্রতিটি গ্রাম, মানে ২৭৩০টি গ্রামের মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ইতিহাস সংগ্রহ করেছি। এভাবেই ইতিহাসচর্চার কাজ করে চলেছি। এরইমধ্যে দুটি গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে, তৃতীয়টিও প্রকাশ পাচ্ছে আগামী দিনগুলোয়। এগুলো হলো- গ্রামের একাত্তর, হিন্দু জনগোষ্ঠির একাত্তর এবং নারীর একাত্তর। আমার অবাক লাগে এ কথা ভেবে যে স্বাধীনতার পরপরই কেন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে শুনে ইতহাস লেখা হয়নি। এখন কাজটি অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। কেননা একাত্তর যারা দেখেছেন তাদের বড় অংশই এখন আর জীবিত নেই।
ইতিহাস ও দলিল নিয়ে কাজ করার সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলিলপত্র নিয়ে আসতেন সাধারণ মানুষ। দলিল ছাড়াও সেসব মানুষজন যুদ্ধের যেসব ঘটনা বর্ননা করতেন, যা দলিলে নেই সে কথাগুলো অনেক সময় দলিলের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক মনে হতো। তাই ’৭১-কে কোনদিনই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চর্চা করা সম্ভব নয়। আর এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চার সীমাবদ্ধতা। আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক এবং সম্পূর্ণ ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে হলে তাতে সাধারণ মানুষের ইতিহাস সিংহভাগ থাকা উচিত। সে ইতিহাস এখনও লিখিত হয়নি। অর্থাৎ আমাদের অলিখিত ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যাপারে কাজ করতে হবে। ’৭১ বলতে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কিংবা পাকিস্তানী মিলিটারি আর রাজাকারদের কথাই বলে থাকি। কিন্তু এই যুদ্ধে সাধারণ মানুষের কী ভূমিকা ছিল সেসব নিয়ে কথা বলি না। এসব সাধারণ মানুষের মুখে শোনা তাদের জীবনের কয়েকটা ঘটনার বর্ণনা করছি মাটি পত্রিকার জন্যে। এখানে আরেকটু যোগ করতে চাই, একাত্তরকে সঠিকভাবে জানতে হলে শুধু বীরত্ব বা নৃশংসতার দিক নয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ছোট ছোট আত্মত্যাগ, মানুষে মানুষে সম্পর্ক, মানুষের আন্তরিকতা ও ভালোবাসার পরিচয়ও জানা চাই।  সবটা মিলিয়েই একাত্তর।
না মেরে বন্দিকে পালানোয় সহায়তা
নারায়ণগঞ্জের এক হিন্দু ব্যক্তি নিজমুখেই বলেছেন ঘটনাটির কথা। যুদ্ধের সময় তার বাবাকে মেরে ফেলে পাকিস্তানি বাহিনী। তখন পরিবারের সবাই পালিয়ে যায়। যুদ্ধ চলাকালেই কিছুদিন পর লোকটি আবার এলাকায় ফিরে আসলে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তাকে আটক রাখা হয়। পাকিস্তানি সেনাদের বদ্ধমূল ধারণা লোকটি তাদের ওপর আক্রমণ চালানো স্থানীয় মুক্তিবাহিনীর সাথে জড়িত যেহেতু সে হিন্দু। যদিও বিষয়টি সত্য নয়। আটক থাকাকালে লোকটির সঙ্গে পাকিস্তানি এক সেনা অফিসারের এক ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে যায়। দুজনে সমবয়সী যুবক। দুজনার নিয়মিত কথাবার্তা হতো। একদিন সেই সেনা অফিসার তাকে জানালো, তোমাকে নিয়ে কী করা হবে সে বিষয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে, তোমাকে মেরে ফেলা হবে। একথা শুনে লোকটির কোনো ভাবান্তর ঘটে না। তাকে মেরে ফেলা হবে এ নিয়ে যেন তার কোনো অনুভূতিই নেই। বাবা নিহত হয়েছে, এতে তার মানসিক অবস্থায় বিরাট পরিবর্তন এসেছে।
এরপরদিন সকাল বেলায় অফিসার আবার সেই হিন্দু লোকটিকে এসে বলল যে, যা ই করো তুমি বীরের মতো মরবে, ভয় পাবে না। আমি জানি তুমি কিছু করো নি, তুমি ভালো লোক। সেই সেনা অফিসার তাকে আরো বলল, যদি বেঁচেও যাও তবে আর যাই করো ভারতে যেয়ো না। এই কথা বলে তাকে জীপে উঠিয়ে নিয়ে নদীর পাড়ে চলে গেল। যেখানে তাকে মেরে ফেলা হবে। পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় তাকে জীপ থেকে নামানো হলো। এবার দুজন পাকিস্তানি সেনা এসে তার হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে বলল, কাউকে বলবে না, তুমি পালিয়ে যাও। ততক্ষণে নদীর ঘাটে একটা নৌকা এসে ভিড়েছে। পাকিস্তানি সেনারা তখন রাইফেলের দুটি ফাঁকা ফায়ার করল এটা বোঝাতে যে বন্দিদের মেরে ফেলা হয়েছে।
সেনারা জীপ ঘুরিয়ে চলে গেলো। লোকটি নৌকায় উঠলে মাঝি তাকে জানালো, এই নিয়ে আপনার মতো তিনজনকে পার করলাম।
স্বীকৃতিবঞ্চিত অকুতোভয় শহীদ
ডিসেম্বরের ১৫-১৬ তারিখ। চিকনাগুল, সিলেট। তুমুল যুদ্ধ চলছে তখন। হাবিলদার আওলাদ আরো ৪/৫ জনের সাথে যুদ্ধের কৌশল নিয়ে কথা বলছেন। একসময় তিনি বললেন এভাবে যুদ্ধে জেতা যাবে না। এই কথা বলেই তিনি সরে এসে তার রাইফেল নিয়ে গুলি করতে করতে এগিয়ে যেতে লাগলেন পাকিস্তানি সেনাদের বাংকারের দিকে। তিনি দৌড়ে এগিয়ে চলেছেন। একদিকে গুলি খাচ্ছেন, অন্যদিকে শত্রু মারতে গুলি চালাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তার গুলিতে কাছাকাছি থাকা সব পাকিস্তানি সেনা মারা পড়লো, নিজেও তিনি শহীদ হলেন। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও শত্রুদের এভাবে একা খতম করার নজির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে খুব বেশি আছে কি?
যুুদ্ধের পর কর্নেল দত্ত বলেছিলেন, তিনি হাবিলদার আওলাদকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি প্রদানের জন্য আবেদন পর্যন্ত করেছিলেন। কিন্তু তাকে বীরপ্রতীক খেতাবটাও দেয়া হয় নি।
অবাক আত্মদান!
যুদ্ধ চলছে। যশোর এলাকায় এক গ্রামে একদল মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয় নিয়েছে এক অত্যন্ত গরীব মহিলার বাড়িতে। বাড়িতে সেই মহিলা তার পুত্রবধুকে নিয়ে থাকতেন। বাড়ির যত খাবার আছে তাদেরকে রান্না করে খাওয়ানে দুজনে। এভাবে যোদ্ধারা ৪/৫ দিন তাদের বাড়িতে অবস্থান করেন। এরপর তারা আবার যুদ্ধে চলে যান। মহিলার এক ছেলে ছিলো তাকে যেকোন ভাবে হোক যুদ্ধের সময় মেরে ফেলা হয়েছিলো। তাই দুই নারীর আপনজন আর কেউ জীবিত ছিল না। যুদ্ধের পর ওই মুক্তিযোদ্ধাদের একজন সেই মহিলার খোঁজ নেয়ার জন্য ফিরে যান সেখানে। মহিলা আর তার পুত্রবধুকে না পেয়ে সেই যোদ্ধা গ্রামের লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, অনেক দিন গ্রামের লোকজন তাদের দেখা না পেয়ে বাড়িতে খুঁজতে গিয়ে দেখে মহিলা ও তার পুত্রবধু মরে পচে কঙ্কাল হয়ে আছে। মুক্তিযোদ্ধাটির তখন এমন অনুভূতি হয় যে তারাই ওই দুই নারীকে হত্যা করেছেন। সেই ৪/৫ দিনে যত খাবার ছিল মহিলা তাদের তো সব খাইয়েছিলেন। পরে হয়ত তারা না খেয়েই এভাবে মারা যান। কিংবা কে জানে এটা ইচ্ছামৃত্যু কিনা। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পুরুষটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। ঘরে খাদ্য নাই। হয়তো দুটি নারী বেঁচে থাকার সব আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। উভয়ে থাকতেনও নদীতীরে একটু জনবিরল স্থানে। ফল লোকসমাজের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগও ছিল না। যুদ্ধের পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে খাবার সংগ্রহ করা হয়তো সম্ভব হয়নি। সব খাবার তো তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিলিয়ে দিয়েছিলেন।  
যুদ্ধের অকল্পনীয় বাস্তবতা
পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়া এক নিরীহ লোক ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। তাকে তিন বন্দির সঙ্গে রাখা হয়েছে। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের কাছে জানতে চাইলেন আমার অপরাধটা কি? তারা বললো তুমি এই করেছো, তুমি সেই করেছো। সেই তিনজনের মধ্যে আবার একজন রাজনীতি করা ছেলে ছিলো। এরমধ্যে নির্দেশ এলো তাদের মেরে ফেলা হবে। তখন সেই রাজনীতি করা ছেলেটি বলল যে, সে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে মরবে।
যে লোকটি ঘটনাটি বর্ণনা করছেন তাকেও মেরে ফেলা হবে এই দলে। তবু যখন মেরে ফেলার জন্য তাদের লাইনে দাঁড় করানো হয় তখন তিনি শুধু এটাই দেখতে চাইছিলেন যে, সে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে মরে কিনা। কিসের জাতীয় সঙ্গীত, সেই ছেলেটি ভয়ে প্যান্টে পেশাব করে দিলো। সেনারা এই অবস্থা দেখে হাসাহাসি শুরু করলো। পরে তাদের না মেরে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। সেই ছেলেটিকে দেখে সবাই হাসাহাসি করতে থাকে। এমনকি স্বাধীনতার পরও তাকে ব্যঙ্গবিদ্রƒপ করা হয়। পরে ছেলেটি আত্মহত্যা করেছিলো। লোকে যুদ্ধের পরিস্থিতি বুঝতে পারেনি। মৃত্যুভয়ে পেশাব করে দেয়ার ঘটনাটি নিয়ে ছেলেটি নিজে থেকেই কুণ্ঠিত ছিল। অন্যদিকে সমাজের দশজনের শ্লেষাত্মক কথাবার্তায় সে ভেতরে ভেতরে এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে শেষ পর্যন্ত তাকে আত্মহত্যাই করতে হয়েছিল।   
এটাও একাত্তর। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কি একজন মানুষের খেয়াল থাকে তার পেশাব হয়ে গেল কিনা! ওই পরিস্থিতিতে না পড়লে একজন মানুষ কী করে অনুভব করবে কেমন লাগে তখন? অথচ তাকে নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করতে ছাড়েনি।